ওসি মহসীন সেজে ৭৭১ নারীর সঙ্গে চ্যাট, অতঃপর ধরা
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
গাইবান্ধা সদর থানা এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৩০) কাজ করেন স্থানীয় একটি প্রিন্টিং প্রেসে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও দক্ষতার কারণে এলাকায় পরিচিত ফেসবুক মাস্টার নামে।
দিনে নিজের কাজে ব্যস্ত থাকলেও রাতভর বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, নায়ক, সরকারি চাকরিজীবীদের নাম-ছবি ব্যবহার করে খোলা ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চালাতেন প্রতারণা। আনোয়ারের প্রতারণার প্রধান টার্গেট ছিল মেয়েরা। শুধুমাত্র ঢাকার তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীনের নামে খোলা ফেসবুক অ্যাকাউন্টে চ্যাট করেছেন ৭৭১ নারীর সঙ্গে।
বিষয়টি টের পেয়ে নিজে বাদি হয়ে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ওসি মহসীন। পরে অবস্থান শনাক্ত করে শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) গাইবান্ধা থেকে আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন।
তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে আমার নাম-ছবি ব্যবহৃত একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আমার নজরে আসে। আমি নিজে যেসব পোস্ট করতাম, সেই অ্যাকাউন্টেও কপি করে একই পোস্ট করা হতো। পরে আমি এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি।
সম্প্রতি কিছু নারী আমার সরকারি নম্বরে ফোন করে জানায়, আমি সারা রাত চ্যাটিং করি কিন্তু দিনে কেন কথা বলি না? এক নারী একদিন অফিসে চলে আসে। বিব্রতকর পরিস্থিতির বিষয়টি টের পেয়ে সিনিয়র স্যারদের পরামর্শক্রমে আমি আইনি ব্যবস্থা নিই।
তারপর প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক আনোয়ারকে শনাক্ত করে গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, শুধুমাত্র ওসি মহসীন পরিচয়ে ৭৭১ নারীর সঙ্গে চ্যাটিং করেছে আনোয়ার। বিষয়টি আমার ইউনিফর্মের জন্য এবং আমি ব্যক্তির জন্য মানহানিকর। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেককে সে আর্থিক সহযোগিতার জন্য টেক্সট করেছে। নারীদের টার্গেট করে প্রথমে কথা বলেছে, তারপর বাজে উদ্দেশ্যে নানা ধরনের আপত্তিকর কথাও বলেছে। একটা ঘটনা দেখেছি এক নারীকে চ্যাটের একপর্যায়ে বলেছে টাকার দরকার। তখন ওই নারী রিপ্লাই দিয়েছে ওসিদের কি টাকার অভাব নাকি? তারপর ওই প্রতারক আবার বলেছে, ওসি মহসীন সৎ অফিসার।
এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার সাহা বলেন, বর্তমানে সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে প্রতারণা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এসব প্রতিরোধে ডিএমপির প্রতিটি ইউনিট প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।
গ্রেপ্তার আনোয়ার সারা দেশে ব্যাপকভাবে নেটওয়ার্কিং করে প্রতারণা করেছে। ওসি মহসীনসহ বিভিন্ন সেলিব্রেটি, জনপ্রতিনিধিদের ছবি-নাম ব্যবহার করে হুবহু ফেসবুক আইডি খুলে প্রতারণা করে আসছিল সে। তার প্রধান টার্গেট ছিল মেয়েরা, কথাবার্তার একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি আদান-প্রদান করতো। আমরা তার কাছ থেকে পাওয়া ডিভাইসগুলো থেকে বিষয়গুলো আরও চেক করবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আনোয়ার বিকৃত শ্রেণির। ফেক আইডি খুলে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে ছবি আদান-প্রদান করে সে আনন্দ পেতো। আবার কখনো টাকা পয়সা নিয়ে লাভবান হয়েছে।