বসুন্ধরা গ্রুপের কম্বল পেল তাহিরপুর, মধ্যনগরের আড়াই হাজার শীতার্ত
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
কনকনে শীতের মধ্যে কম্বল নিতে আসেন ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা বারেকটিলার বড়গোফ টিলার বাসিন্দা হামিদা বেগম (৭০)। জীবনের এই প্রথম কম্বল পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থ্যায়নে একটি কম্বল পেয়ে তিনি মহাখুশি।
তিনি আরও জানান,শীতের মধ্যে কেউই আমরারে কিছুই দিতে আয়(আসে) না। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে তাহি(থাকি) শীতের মধ্যে কষ্ট করি। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে আজকে অনেকেই কম্বল পাইছে বড় উপকার হইছে,(হয়েছেল। শীতের রাইতে(রাতে)বড় কষ্ট হইত(হত)। এই কম্বল পাওনে(পাওয়াতে) রাইতে(রাত)আরামে ঘুমাইতে পারমু(পারব)। দোয়া করি বসুন্ধরা গ্রুপের মালিককে আল্লাহ সুখে শান্তিতে রাখে।
রবিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বারেকটিলায় বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থ্যায়নে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল মাঠে শিক্ষার্থী ও বারেকটিলায় ৫ শত বাসিন্দাদের হাতে কম্বল বিতরণ করে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
এসময় সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন সবার হাতে কম্বল তুলে দেন।
এরপূর্ব তাহিরপুর উপজেলা সদর,টাংগুয়ার হাওর,ট্যাকেরঘাট,মধ্যনগর উপজেলায় সদর ইউনিয়নে আরও দু হাজারের অধিক কম্বল বিতরণ করে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র এমি নাফাক শিল্পা(৬) একটি কম্বল পেয়ে চোখে মুখে তার উচ্ছাস লক্ষ্য করা গেছে। সে এই স্কুলে বিনামূল্যে লেখা পড়া করে। পেয়েছে নতুন বই। এই শীতে এবার পেল কম্বল। শীতের মধ্যে এই কম্বল পেয়ে অনেক মহা খুশি সে।
এছাড়াও বড়গোফ টিলার আছিয়া খাতুন(৭৭), যাদুকাটা নদী পাড়ের আমিনা খাতুন (৯০) হানিফা (৮০),সুমা সাংমা(৬২),মাঝের টিলা,সতিকা মারাক(৬৩),বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র কামরুল মিয়া(৬)শাকিল মিয়া(৬) সায়মা(৬), এমি নাফাক শিল্পা (৬) তাদের একেই মন্তব্য।
তারা বলেন,আল্লাহ যেন বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের কারনে পড়া লেকা করার সুযোগ পাইছি এখন। আল্লাহ স্যারকে ভাল রাখেন,সুস্থ রাখেন যেন আমাদের পাশে সহায়তার হাত বাড়ায় সব সময়।
টাংগুয়ার হাওর পাড়ে আব্দুল ওয়াব কম্বল পাওয়ার পর জানান, এই হাওর পাড়ের মানুষের কামেয়(কর্মসংস্থান)ব্যবস্থা নেই। তাই হারা(সারা) বছরেই বেকার থাকে। বর্ষায় মাছ ধরে আর হুকনা (শুকনো) মৌসুমে ধান চাষাবাদ করেই জীবন পার করছে বংশ পরমপরায়। আমাদের জমি নেই, তাই তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই কঠিন হয়ে পরে। আমরারে(আমাদেরকে)কম্বল দেয়ায় দোয়া করি বসুন্ধরা গ্রুপের মালিককে আল্লাহ সুখে শান্তিতে রাখেন। যাতে করে আমাদের মত অসহায় মানুষের পাশে বার বার দাড়ায়।
শুধু আব্দুল ওয়াবেই নয় কম্বল নিতে আসা জেলার মধ্য নগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা ও তাহিরপুরের টাংগুয়ার হাওরের পাশেই দ্বীপের মত ছোট ছোট গ্রাম ছিলালী তাহিরপুর,জয়পুর, গোলাবাড়ি,পাটাবুকা গ্রামের ৫ শতাধিক অসহায় শিশু,নারী,পুরুষ।
এসব গ্রামের চারপাশে হাওর। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শৈত্যপ্রবাহের কারনে প্রকৃতিতে তাপমাত্রা কম থাকায় শীতের প্রচণ্ড দাপটে তাদের নেই শীত নিবারনের কাপড়।
ফলে থমকে গেছে এসব গ্রাম ও হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা। কনকনে শীতের দাপটে দরকারি কাজে বের হলেও মোটা কাপড় গায়ে জড়িয়ে মাথায় ও কানে টুপি ও মাফলার পেঁচিয়ে বের হচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু যাদের শীত বস্ত্র নেই তারা আছেন মহাবিপদে।
এমন সময়ে অসহায় পরিবার গুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন বলেন, এই মহতী উদ্যোগের কারণে দরিদ্ররা উপকৃত হচ্ছে। বসুন্ধরা গ্রুপের মত সমাজের বিত্তবানদেরও নিজ নিজ অবস্থান থেকে হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। মহতী উদ্যোগের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এসময় দৈনিক কালের কণ্ঠের সিনিয়র সহ সম্পাদক ও শুভসংঘ পরিচালক জাকারিয়া জামান, তাহিরপুর উপজেলা শুভসংঘের উপদেষ্টা গোলাম সারোয়ার লিটন, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া প্রমুখ।
দৈনিক কালের কণ্ঠের সিনিয়র সহ সম্পাদক ও শুভসংঘ পরিচালক জাকারিয়া জামান জানিয়েছেন দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ দরিদ্র অসহায় মানুষের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এরই ধারাবাহিকতায় তাহিরপুর,মধ্যনগর, শান্তিগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলায় ৪ হাজার কম্বল বিতরণ করা হবে। দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে হাওর পাড়ের অসহায় পরিবারের সদস্যদের হাতে শীত বস্ত্র পর্যায়ক্রমে বসুন্ধরা শুভসংঘ তুলে দিবে।