‘অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা’ দূর করতে যেসব খাবার খাবে
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
নানা জটিলতায় জীবনের চলার পথে মানসিক উদ্বেগের শিকার কমবেশি সকলেই। বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক জটিলতা অবসাদ আরও আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ১৬.৮% মানুষ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিক বিষণ্নতায় ভুগছে। যার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
মানসিক চাপ দেহে ফ্রি র্যাডিকেল তৈরি করে যা শরীরে ক্যানসার তৈরির একটি অন্যতম উপাদান। তাই সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতোটা সম্ভব মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
এর জন্য ডায়েট লিস্টে রাখতে পারেন কিছু বিশেষ খাবার যা আপনার মানসিক উদ্বেগ কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী জেনে নিই সেই সব খাবারের তালিকা-
গাজর: নিউট্রিশান নুপটিয়ালসের প্রতিষ্ঠাতা মান্ডি এনরাইট বলেন, মানসিক চাপ কমানোর অন্যতম সেরা খাবার হচ্ছে তাজা সবজি ও ফল। এরমধ্যে গাজর ও আপেল মানসিক চাপ কমানোর পাশাপাশি চোয়ালের অনমনীয়তা দূর করে। চিবিয়ে বা কামড়িয়ে খেতে হয় এমন খাবার ফোকাসকে পুনর্নির্দেশিত করতে পারে এবং মানসিক চাপ কমাতে পারে।
পালংশাক: যখন আমরা মানসিক চাপে থাকি আমাদের মাংসপেশীগুলো টাইট হয়ে পড়ে। এই সময়ে আমরা কোনো কিছু চিন্তা করতে পারি না। ঘুমাতে সমস্যা হয় ও রক্তচাপ বেড়ে যায়। যে পুষ্টি এসব উপসর্গকে প্রশমিত করতে পারে তা হলো ম্যাগনেসিয়াম।
কিন্তু মানসিক চাপে থাকলে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে যায়। ‘ডায়েট ডায়াগনোসিস: নেভিগেটিং দ্য মেইজ অব হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন প্লানস’ বইয়ের লেখক ডেভিড নিকো বলেন, ‘পালংশাকের মতো সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এটি মানসিক চাপ নিরসনে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
বেরি জাতীয় ফল: ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ফলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। এই ধরনের ফলগুলো মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সচল ও সজীব রাখে।
গ্রিন টি: ল্যাভেন্ডার বা ক্যামোমাইল ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ চা স্নায়ুকে শান্ত রাখে। এছাড়াও চা পানের অভ্যাস শরীরের দূষিত পদার্থ বাইরে বের করে দেয়।
টক দই: টক দই মানসিক চাপ কমাতে খুবই উপকারী। টক দইয়ের ব্যাকটেরিয়া আমাদের দেহে আত্মবিশ্বাস ও সাহস বাড়ায়। পাশাপাশি চাপ কমায়। টক দই খেলে সাময়িকভাবে মানসিক অশান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বাদাম: কাঠবাদাম, আখরোট, চিনাবাদামে রয়েছে ভরপুর প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং সবচেয়ে উপকারী উপাদান ম্যাগনেশিয়াম। বাদামের এই সব উপাদান মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার : কমলালেবু, আঙুর, গাজর, পালংশাক, বাঁধাকপি, লেটুস পাতার মতো কিছু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার স্নায়ুকে শান্ত রাখতে এবং উদ্বেগ কমাতে অত্যন্ত সহায়ক।
ডার্ক চকোলেট: দুশ্চিন্তা কমাতে খেতে পারেন ডার্ক চকোলেট। ডার্ক চকোলেটে রয়েছে এমন কিছু পুষ্টি যৌগ যা মানসিক অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে।
ওটমিল: ২০১৬ সালে জার্নাল অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সেসে প্রকাশিত রিভিউ গবেষণা অনুসারে এক বাটি উষ্ণ ওটমিল শিথিলতা ও প্রশান্তির মাত্রা যোগ করতে পারে। ভারতের বিশেষজ্ঞ ডা. দেবজি বলেন, জটিল কার্বোহাইড্রেট খেলে সেরোটোনিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এই কেমিক্যালটি স্ট্রেস হরমোন হ্রাস করে। ওটস হচ্ছে ট্রিপ্টোফ্যানের ভালো উৎস যা শরীরে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়।
রসুন: রসুনের শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুবই সহায়ক। নিয়মিত রসুন খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে মানসিক চাপও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ওটস: প্রচুর আঁশযুক্ত ওটস খাবার শরীরের নানা চাহিদা মেটায়। বিশেষত মস্তিষ্কে ‘সেরোটোনিন’ নামের শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট তৈরিতে খুবই সহায়ক ওটস। সেরোটোনিন এমন এক রাসায়নিক যৌগ যা আমাদের মস্তিষ্কে ‘ভালো লাগার’ অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। এই অনুভূতি মানসিক অবসাদ দূর করতে দারুণ কার্যকরী।
তাই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিক বিষণ্নতা থেকে মুক্তিতে সকালের নাশতায় কিংবা রাতে নিয়ম করে এসব খাবার খেতে বলছেন দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞরা।