যখন বলায় বিপত্তি, না বলায় কল্যাণ
রাজু আহমেদ
যে বলছে না, একটু শুনছে, তাঁর কষ্ট হচ্ছে অনেক কিন্তু তার হার নয়; জয় হচ্ছে। হয়তো পূণ্যও হচ্ছে। প্রতিক্রিয়া দেখালে দূরত্ব বাড়তে ছাড়া কমতো না। অথচ ধৈর্য ধরে সহ্য করায় অনেক ক্ষতি থেকে সম্পর্ক রক্ষা পেল। বেশি বললেই কেউ জিতে যায় না। কখনো কখনো চুপ থেকেও হার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কয়টা কথা শুনিয়ে কেউ ব্যথা দিতে পারে কিন্তু খুন করতে পারে না। চুপ থাকলে যদি সমাধান হয় তবে সামান্য চুপ থাকলে ক্ষতি কী?
কথার পিঠে কথা গাঁথলে গল্পের আসর জমে ভালো! কিন্তু তর্কের সময়, বকার সময়, ঝগড়ার সময় কথা বাড়ালে বিপত্তি ঘটে। মানুষের মধ্যে যত দূরত্ব বেড়েছে তা মারামারি করে বাড়েনি বরং কথার শরীরে কথা চাপিয়ে ঘটেছে। সহজ জীবনের জন্য কারো কাছে ক্ষমা চাইতে হবে আবার কাউকে কাউকে ক্ষমা করতে হবে। ভুল ধরে থাকলে, গোস্বা পুষে রাখলে সম্পর্ক জমে না। মনের আঙিনায় মনের বিচরণ চলে না।
চুপ থাকার মধ্যে কল্যাণ নিহিত। যারা বেশি বলে তার অধিক ভুল করে। প্রজ্ঞাবানরা কথা হজম করতে জানে। জিহ্বার ডগায় চলাচল করা ভাষাকে সীমিত করতে পারলে শত্রুতা মরে। যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে অতিকথন ক্ষতির কারণ হয়। বারণ করে যা করা যায় চুপ থেকে তার অধিক পারা যায়। একনিষ্ঠ শ্রোতা হওয়ার মাঝে বিপক্ষের মনোযোগ পাওয়া যায়। চুপচাপ মুচকি হাসিতেও অনেক কথা বলা যায়! ভুল পেলে ক্ষমা করা যায়! ক্ষমা পাওয়া যায়।
দু’দিক থেকেই যদি তুমুল বলাবলি হয় হয় তবে সেটার পরিনতি গালাগালিতে গিয়ে ঠেকে। মারামারিও হতে পারে! অধিক বলার মাঝে পান্ডিত্য নাই বরং মুর্খের বয়ানের সময় চুপ থাকার মধ্যে প্রজ্ঞা লুকিয়ে আছে। যে অধিক বলে সে ততোধিক মূর্খ। যে নিজেকে সবখানে সঠিক ভাবে সে সাইকো! যারা প্রতিবাদহীন শুনতে পারে, অনর্থক না বলে নিজেকে চুপ রাখতে পারে তারা শেষমেশ হারে না। তাদের ঘিরে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বাড়ে না। মানুষ তাদের ভালোবেসে ছাড়ে না।
যারা তাদের জবানকে সংযত রাখতে পারে তারা জাগতিক ফেতনা-ফ্যাসাদ থেকে বেঁচে যায়। প্রজন্মের জন্য উত্তম সাইন রেখে যায়। মুর্খরা বলে বেশি, শোনে কম। মুখের কথা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা বিশ্বাসকে প্রতিধ্বনিত করে। বর্ণিত বর্ণমালা পাপের কারণ হতে পারে আবার ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারে! যারা ছেড়ে দেয় পরচর্চা কিংবা মিথ্যাচার তারা রক্ষা পায় পাপাচার থেকে। না বলায় কল্যাণ আছে, কখনো কখনো বলাতেই বিপত্তি ঘটে।
প্রাবন্ধিক। raju69alive@gmail.com