সুনামগঞ্জে সোলেমান হ ত্যা: গ্রে ফ তা র-৬
দৈনিকসিলেটডটকম
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় ড্রেন নির্মাণকে কেন্দ্র করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় সোলেমানকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা থেকে ৬জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নজরুল ইসলাম, সাব্বির হোসেন, মোহাম্মদ তাকবির, জাকির হোসেন, জসিম উদ্দিন ও সেলিম উদ্দিন।
গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর টিকাটুলি র্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দিয়েছেন র্যাব-৩-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা থানার জয়শ্রী ইউনিয়নের শান্তিপুর এলাকায় ড্রেন পুনর্নির্মাণ করার কারণে ইউপি সদস্য রাসেল ও তার লোকজনের ওপর নজরুল তার সহযোগীদের নিয়ে হামলা চালান। মূলত সাতারিয়া-পাথারিয়া হাওরের বোরো ধানের জমিতে পানি সেচের জন্য ড্রেনটি নির্মাণ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত নজরুল ও তার লোকজন এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি তুলে ড্রেনটি ধ্বংস করে দেন।
ঘটনার দিন ২৬ ডিসেম্বর রাসেল মেম্বারের লোকজন তাদের স্বত্ব দখলীয় হাওরের বোরো জমিতে পানি সেচের জন্য ড্রেনটি পুনরায় নির্মাণকাজ শুরু করেন।
খবর পেয়ে নজরুলের নেতৃত্বে সাব্বির, তাকবির, জাকির, মিজান, নাঈম, জসিম উদ্দিন, সেলিম উদ্দিন, নয়ন, আক্কলসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৮ ও ১০ জন দেশীয় অস্ত্র দা, রামদা, রড, রডের পাইপ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়।
হামলায় সোলেমানসহ মোট ১০ জন গুরুতর আহত হন জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় এলাকাবাসী আহতদের উদ্ধার করে ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সোলেমানসহ মোট ৬ জনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
পরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় গত ৯ জানুয়ারি সোলেমানের মৃত্যু হয়।
র্যাব-৩ পরিচালক বলেন, হামলার ঘটনায় গত ৩ জানুয়ারি সোলেমানের চাচাতো ভাই দীন ইসলাম বাদী হয়ে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। সোলেমানের মৃত্যুর পর গত ১০ জানুয়ারি আদালতের মাধ্যমে দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারা সংযোজিত হয়ে মামলাটি হত্যা মামলায় হিসেবে গণ্য হয়।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে ধর্মপাশায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেন জানিয়ে র্যাব জানায়, এ হত্যাকাণ্ডটি দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এরপর র্যাব-৯ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।
গ্রেফতার এড়াতে আসামিরা নিজ এলাকা ছেড়ে রাজধানী ঢাকায় আত্মগোপনে চলে যান। পরে গোয়েন্দা পুলিশ বিষয়টি র্যাব-৩-এর গোয়েন্দা দলকে জানায়। র্যাব-৩-এর গোয়েন্দা দল আসামিদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় আসামিদের অবস্থান শনাক্ত হওয়ার পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী নজরুল ইসলাম ও তার অন্য সহযোগীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে র্যাব-৩-এর পরিচালক বলেন, আসামি নজরুল তার আত্মীয়স্বজন ও অনুসারীদের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে সাধারণ মানুষের জমি দখল করে আসছিলেন। সোলেমানের চাচাতো ভাই রাসেল ইউপি সদস্য। রাসেল নজরুলের এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করায় নজরুল রাসেলের ওপর ক্ষুব্ধ হন। এর আগে শান্তিপুর গ্রামের একটি মসজিদের উন্নয়ন কাজের জন্য নদীপথে আনা বালু মসজিদ ঘাটে আনলোড করার সময় নজরুল বাধা দেন। ওই দিন সোলেমান তার চাচাতো ভাই রাসেলের পক্ষ নিয়ে নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। এতে নজরুল সোলেমানের ওপর ক্ষিপ্ত হন।
এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে নজরুলের কুকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে সোলেমান নজরুলের চক্ষুশূলে পরিণত হয়। এ কারণেই নজরুল সোলেমানকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেন। নজরুল রাসেল ও সোলেমানকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় হুমকি দেন।
নজরুল শান্তিপুর এলাকার একজন চিহ্নিত অপরাধী জানিয়ে র্যাব জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও দখলদারিত্বের জন্য নজরুল বিভিন্ন লোকজনকে হুমকি দিতেন। ঘটনার দিন পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নজরুল নিজেই সোলেমানের মাথায় রামদা দিয়ে কোপ দিলে মাথার ডান পার্শ্বের তালুতে মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হয়ে সোলেমান মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। নজরুলের নির্দেশে অন্য সহযোগীরা মাটিতে পড়ে থাকা সোলেমানকে নৃশংসভাবে আঘাত করতে থাকেন। এতে সোলেমান গুরুতর আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ বলেন, আসামি নজরুলের বিরুদ্ধে ধর্মপাশা থানায় একটি বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া ও দুটি মারামারি মামলা রয়েছে। এছাড়া গ্রেফতার জাকির হোসেন ও সেলিম উদ্দিনের নামেও ধর্মপাশা থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।