রাগ কে বাগে আনবেন কীভাবে?
দৈনিকসিলেটডেস্ক
রাগ কোনো রোগ নয়, সুস্থ মানুষের আবেগের বহিঃপ্রকাশমাত্র। কিন্তু এই আবেগ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে প্রকাশ পেলেই যত বিপত্তি। সম্পর্ক নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে বড় সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে!
রাগের মতো সাধারণ আবেগ যাতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রকাশ না পায়, সে জন্য রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে জানতে হবে। তবে রাগ পুরোপুরি চেপে রাখা যাবে না। কারণ, অবদমিত রাগ থেকে হতে পারে নানান মানসিক ও শারীরিক সমস্যা। রাগ চেপে রাখলে হতে পারে বিষণ্ণতা, উচ্চ রক্তচাপ, খিটখিটে মেজাজ ও ব্যক্তিত্বের সমস্যা।
ভয়, লজ্জা, বিরক্তির মতো নানা কারণেই রাগ দেখান মানুষ। এ ছাড়াও ক্ষণে ক্ষণে রেগে যাওয়ার পিছনে থাকতে পারে অন্য কোনও কারণ। সম্পর্ক বা আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে তৈরি হওয়া মানসিক চাপও রাগের পিছনে একটি বড় কারণ। কয়েক ধরনের মানসিক অসুখও রাগ প্রকাশ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কয়েক ধরনের মানসিক অসুখও রাগ প্রকাশ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
১) অবসাদ: এই অসুখের কারণে টানা হতাশা, দুঃখ আসতে পারে। এমন অবস্থায় খুব বেশি দিন থাকলে কথায় কথায় রাগ এবং অভিমান, দুই-ই হতে পারে।
২) বাইপোলার ডিজঅর্ডার: এই অসুখ থাকলে ক্ষণে ক্ষণে মনের ভাবে পরিবর্তন আসে। অতিরিক্ত আনন্দের আবহেও অনেক সময়ে ঘিরে ধরে রাগের অনুভূতি।
৩) মাদকাসক্তি: অতিরিক্ত মাদকদ্রব্য শরীরের প্রবেশ করলে অনেক সময়ে হিংস্র ভাব তৈরি করে। চিন্তাশক্তির উপরে মাদকের প্রভাবই এমন করে বলে মত মনোরোগ চিকিৎসকদের।
কী ভাবে বুঝবেন আপনার মধ্যেও রাগ করার প্রবণতা বাড়ছে কি না?
১) কথায় কথায় বিরক্ত হচ্ছেন
২) নেতিবাচক চিন্তা বেশি আসছে মনের মধ্যে
৩) মাঝেমধ্যেই চেঁচামেচি করে ফেলছেন
৪) উচ্চ রক্তচাপ, বুক ধরফরের মতো শারীরিক সমস্যা বেড়ে চলেছে
৫) সাধারণ কোনও ঘটনাতেও অনেকের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিচ্ছেন
কী ভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন?
অতিরিক্ত রাগের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই ভুল করে ফেলে। যা বলার নয় বলে ফেলেন। যে আচরণ অপ্রয়োজনীয়, তাও করে ফেলেন। তাতে পরে সমস্যা হয় নিজেরই। ফলে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। তার জন্য রইল কয়েকটি পরামর্শ—
১) কথা বলার আগে ভাবুন, কথা এমন একটা জিনিস যা বলা হয়ে গেলে আর ফেরত নেওয়া সম্ভব নয়। রাগের সময় অনেক তিক্ত কথা আছে যেগুলো বলে হয়তো তাৎক্ষণিক প্রশান্তি অনুভব করবেন কিন্তু পরবর্তীতে সেই কথাগুলোই আপনাকে পিড়া দিবে। এটি মাথায় রেখে ভেবেচিন্তে কথা বলুন।
২) কোনও সমস্যা দেখে বিরক্ত না হয়ে, সমাধান খুঁজুন। আশেপাশের কোনো ব্যক্তির কোনো সমস্যা দেখে বিরক্তি প্রকাশ না করে তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন।
৩) হঠাৎ রেগে গেলে নিজের শরীরকে যতটা সম্ভব শিথিল করে ফেলুন—বড় করে শ্বাস নিন, কোনো গঠনমূলক ছোট বাক্য যেমন ‘ঠিক আছে’, ‘শান্ত হও’ বারবার উচ্চারণ করতে পারেন। সুন্দর কোনো দৃশ্য, প্রিয়জনের মুখচ্ছবি মনে করতে পারেন।
৪) রাগের মাথায় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। পরে ভেবেচিন্তে কারও সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
৫) রাগের সময় দাঁড়িয়ে থাকলে বসে পড়ুন, বসে থাকলে (সুযোগ থাকলে) শুয়ে পড়ুন।
৬) যদি বুঝতে পারেন যে আপনি হঠাৎ বেশি রাগ করে ফেলছেন, সেই সময় ওই স্থান দ্রুত ত্যাগ করুন। নিজেকে পরাজিত মনে করবেন না; বরং ভাবুন আপনি রাগকে পরাজিত করে নিজে জয়ী হয়েছেন।
৭) কারও ওপর বা কোনো ঘটনার ওপর রাগ করলে ভেবে দেখুন ঘটনাটি কেন ঘটেছে। আপনার রাগ করার যথার্থ কারণ থাকলেও যুক্তির প্রয়োগে আপনি সেই কারণকে একপাশে সরিয়ে রাখতে পারেন।
৮) আলাপচারিতার সময় ‘কখনোই না’, ‘সব সময়ই’, ‘অবশ্যই’—এ–জাতীয় শব্দচয়ন বাদ দিন। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী বা অধস্তনদের সঙ্গে কথোপকথনে আদেশজাতীয় বাক্যের পরিবর্তে অনুরোধের সুরে কথা বলুন। আর বড়দের সঙ্গে বিনয়ের সঙ্গে কথা বলুন। বড়রা কোনো ভুল করলে সেটি নরম সুরে বুঝিয়ে বলুন।
৯) সবসময় সব ক্ষেত্রে জিততে হবে এই সানসিকতা পরিহার করুন। কখনও কখনও পরাজয়ও ভালো ফল বয়ে আনে।
১০) সবসময় নিজেকে অন্যের অবস্থানে রেখে পরিস্থিতি বিবেচনা করুন। এতে সহমর্মীতা ও সমঝোতা বাড়বে এবং রাগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।