বিএফসিসি ব্রাঞ্চ হবে সিলেট-চট্টগ্রামে
দৈনিক সিলেট ডট কম
ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রবাসী, সামিটসহ নানা দিক বিবেচনা করে সিঙ্গাপুর নিয়ে বড় পরিকল্পনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটি ক্যাটারিং সার্ভিসে লাভের অঙ্ককে দ্বিগুণ করতে চায়। তাই বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের (বিএফসিসি) আরও শাখা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি পূর্বদিকের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে ফ্লাইট চালু এবং বাড়াতে চায়। এ ছাড়া ডমেস্টিক নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি বাড়িয়ে এর সুফল ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে পাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানিয়েছে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম। তিনি বলেন, ইন ফ্লাইট সার্ভিসে ক্যাটারিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নিজস্ব যে বিএফসিসি আছে সেটি ৬৪ হাজার স্কয়ার ফিটের উপরে। ফাইভ স্টারের শেফ দিয়ে কাজ করানো হয়। ৭৬ একর জমিতে উৎপাদিত জমি থেকে নিজম্ব পোল্ট্রি, ডেইরি, ভেজিটেবল পণ্যগুলো আসে।
এর বাইরে যেগুলো লাগে সেগুলো আমরা দুবাই বা কোরিয়া থেকে আমদানি করি। ক্যাটারিং সার্ভিসে আমরা ইন্টারন্যাশনাল সর্বোচ্চ স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেন করি।
ক্যাটারিং সার্ভিসকে লাভজনক করতে জন্য প্রশিক্ষণ জোরদার করেছি। নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হচ্ছে। আমরা পণ্য উৎপাদনে কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করি না। এজন্য বৃটিশ এয়ারলাইন্স, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, তার্কিশ এয়ারলাইন্সসহ ১০ থেকে ১২টি এয়ারলাইন্স নিয়মিত আমাদের ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে সেবা নিচ্ছে। এরমাধ্যমে বিমান বিশ্বে ব্র্যান্ডিং হচ্ছে এবং আমরা লাভজনক অবস্থায় আছি। গত বছরও আমরা ভালো অঙ্কের লাভে ছিলাম। আশা করছি এই অর্থবছরে দ্বিগুণ লাভ হবে। সেজন্য আমরা স্টাফ, ফ্যাসিলিটিজ, বেকআপ সাপোর্ট, সাপ্লাই চেইনকে অর্গানাইজড করছি। তিনি বলেন, থার্ড টার্মিনাল হয়ে গেলে বিদেশি এয়ারলাইন্সের সংখ্যা বাড়বে। ক্যাটারিং সার্ভিসের চাহিদাও বাড়বে। তাই আমরা ঢাকায় বিএফসিসি’র দ্বিতীয় শাখার জায়গার জন্য চেষ্টা করছি। এ ছাড়া সিলেট, চট্টগ্রামে বিএফসিসি’র ব্রাঞ্চ করবো। সিলেটের বিষয়ে আমরা অনেকটা এগিয়েছি। ঢাকায় আরেকটি ব্রাঞ্চ করার সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। জায়গা সংকুলান হয়ে গেলে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরু করে দিবো। বর্তমানে যেটি আছে সেটিরও এক্সপানশন করছি। সিঙ্গাপুর নিয়ে বড় পরিকল্পনার কথা জানিয়ে শফিউল আজিম বলেন, এই রুটটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসা, বাণিজ্য বিনিয়োগ, অফিসিয়াল সামিটের জন্য সিঙ্গাপুর একটা হাব। কিন্তু সেখানে আমরা ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সবসময় ৭৮৭ দিতে পারছি না। প্রত্যেকটা ফ্লাইট যাতে ৭৮৭ এ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।
এয়ারক্রাইট প্রকিউরমেন্ট কার্যক্রম চলমান আছে। আমাদের ফোকাসটা এখন পূর্বদিকে। নারিতা, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, মালয়েশিয়া। চীনেও যাচ্ছি। দূরবর্তী পরিকল্পনায় সিডনি, বালি, ব্রুনাই, ফিলিপাইন রয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে আমাদের অবস্থান ভালো। এখন পূর্বদিকেও নজর দেয়া হয়েছে। তবে সিঙ্গাপুর নিয়েই আমাদের বড় পরিকল্পনা। তিনি বলেন, ২৬শে মার্চ ঢাকা-রোম ফ্লাইট চালু করার সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। রোম ইউরোপেরও সেন্টার বলা যায়। সেখানে একসময় বিমানের ডেসটিনেশন ছিল। বেশ কয়েক বছর ধরে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। অনেক প্রবাসীরা সেখানে আছেন। প্রধানমন্ত্রীরও তাদের কাছে একটা কমিটমেন্ট ছিল সরাসরি রোমের ফ্লাইট চালু হবে। আমরা চাই বিমান সেবা নিয়ে তাদের কাছে পৌঁছে যাক। এই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনকে আবার চালু করতে চাই। এরপরে আমরা ইউরোপের অন্যান্য গন্তব্যে যাবো।
৯ ঘণ্টায় রোম থেকে যাত্রীরা ঢাকা চলে আসতে পারবে। দেশের অভ্যন্তরীণ রুট নিয়ে বিমানের এমডি বলেন, বাংলাদেশ যত উন্নত হবে বিমানের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি আরও বাড়াবে। আমরা এখন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, কক্সবাজার, রাজশাহী, বরিশাল, যশোর, সিলেটে ফ্লাইট চালু আছে। আরও ফ্লাইট বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। ঈশ্বরদী, পাবনা, ঠাকুরগাঁওয়ে যদি এয়ারপোর্ট চালু হয় তাহলে আমরা সেদিকে ফ্লাইট চালু করবো। ডমেস্টিক কানেক্টিভিটি যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি ফিট হবে না। ডমেস্টিকটা যদি শক্ত থাকে তাহলে তার প্রভাব ইন্টারন্যাশনালেও পড়বে। একটা আরেকটার সঙ্গে রিলেটেড। তিনি বলেন, যাত্রীরা যাতে কক্সবাজার থেকে সরাসরি জেদ্দা, মদিনা বা দুবাইতে যেতে পারেন সেই ব্যবস্থাও আমরা করবো। এভাবে সৈয়দপুর থেকে যারা টরেন্টো যেতে চান সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আজিম বলেন, আমরা বিশ্বব্যাপী ব্যবসা করি। আর সেটি ডলারেই হয়। তবে এত সমস্যার মধ্যেও আমরা রেকর্ড অপারেশনাল মুনাফা করেছি। লস যেটা সেটি বৈশ্বিক সমস্যার কারণে হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের হাতে যেটুকু আছে সেটা দিয়ে আমরা চেষ্টা করছি আর যেটা ক্যাপাসিটির বাইরে সেটার ওপর আমাদের হাত নেই। ইন্টারনাল এরিয়াগুলোতে আমরা কাজ করছি। যাতে ডিপেনডেন্টস কমানো যায়। এ ছাড়া ক্রু, পাইলট নিয়ে যে সমস্যা ছিল সেগুলো আমরা একটা একটা করে সমাধান করেছি। ইন্টারন্যাশনাল, ন্যাশনাল যে সমস্যা আছে আমরা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে মিউচুয়াল করেছি। সমস্যা থাকবে সমাধানও আছে। বিমান একটা টিম হিসেবে কাজ করছে, পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার, সাধারণ প্রশাসন, শ্রমিক কর্মী মিলে এক প্ল্যাটফরমে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী ও বিমানমন্ত্রীর পরামর্শে বিমান অনেকদূর যেতে চায়।