অ্যালার্জি থেকে যেভাবে দূরে থাকা সম্ভব
ডা. দিদারুল আহসান
অ্যালার্জি প্রচলিত একটি শব্দ। নির্দোষ বলে গণ্য কোনো জিনিস যদি শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তাকেই বলে অ্যালার্জি। ঘরের ধুলো হাঁপানিজনিত অ্যালার্জির অন্যতম কারণ। প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য ধুলোয় থাকা ক্ষুদ্র জীবাণু বা ‘মাইট’ দায়ী। যারা হাঁপানিজনিত অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন, তারা ঘরের ধুলো সব সময় এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে যখন ঘর ঝাড়ু দেওয়া হয় তখন এবং ঘরের আসবাবপত্রÑ কম্বল, পর্দা, তোশক, বালিশ ইত্যাদিতে যে ধুলো জমে, তা পরিষ্কার করার সময় দূরে থাকতে হবে। পতঙ্গের কামড়ে গায়ে চুলকানি, স্থানটি ফুলে যাওয়া, এমনকি হাঁপানি পর্যন্ত হতে দেখা যায়। মশা, বেলেমাছি, মৌমাছি, বোলতা, ভিমরুল প্রভৃতি পতঙ্গের কামড়ে দেহে অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া রোমশ ও পালকবিশিষ্ট জীবজন্তু, যেমনÑ বিড়াল, কুকুর, ঘোড়া ইত্যাদি গৃহপালিত পশু অনেক সময় অ্যালার্জি সৃষ্টির জন্য দায়ী। এ ছাড়া এক ধরনের চর্মরোগ আছে, যাকে বলা হয় আর্টিকোরিয়া বা আমবাত। এ ক্ষেত্রে ত্বকে চাকা চাকা হয়। আর ফুলে উঠে চুলকানির সৃষ্টি হয়। এটিও অ্যালার্জির অন্যতম প্রকাশ।
খাদ্যের মাধ্যমে অ্যালার্জি : বিভিন্ন খাদ্যে অ্যালার্জির আশঙ্কা থাকে। গরুর দুধে, বিশেষ করে শিশুর ক্ষেত্রে গায়ে চুলকানি, হাঁপানি ইত্যাদি হতে দেখা যায়। গম, ডিম, মাছ, বাদাম, কলা, আপেল, আঙুর, ব্যাঙের ছাতা, তরমুজ, পেঁয়াজ, রসুন, চকোলেট, এমনকি ঠাণ্ডা পানীয় কোনো কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে।
প্রভাব : বেশির ভাগ মানুষের জীবনেই কোনো না কোনো সময় অ্যালার্জি দেখা যায়। এ রোগ শরীরের কোনো অংশে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে অথবা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন আকারের লালচে বা চাকা চাকা ফোলা দাগ হতে দেখা যায় এবং সেই সঙ্গে প্রচণ্ড চুলকানি থাকে।
ওষুধে অ্যালার্জি : অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া জ্বর, গা-ব্যথা, মাথাব্যথা, পাঁচড়া, ফোড়া ইত্যাদির ওষুধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু এসব ছাড়া আরও অসংখ্য ওষুধ আছে, যা খেলে শরীরে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ কখনো সেবন করা উচিত নয়। আমরা শিশুদের টিকা দিয়ে থাকি। মনে রাখতে হবে, কোনো কোনো টিকা বা ভ্যাকসিনে ব্যক্তিবিশেষে অ্যালার্জি হতে দেখা যায়। ভ্যাকসিন দেওয়ার পর শিশুকে যদি অ্যালার্জির চুলকানি বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগতে দেখেন, তাহলে অবশ্যই তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া উচিত।
তবে অ্যালার্জি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। খেয়াল রাখবেন, কোনো খাবারে অ্যালার্জি হয় কিনা। যদি খাবারের সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়, সেই খাবার খাওয়া যাবে না। যে কারণে আপনার অ্যালার্জি হয়, সেই কারণ এড়িয়ে চলতে হবে।
লেখক : চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ