হত্যার ৩দিন পর সেই নিহত অটো চালকের মোবাইল ফোন উদ্ধার
নুর উদ্দিন সুমন, হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার উপজেলার বালিয়ার গ্রামের মৃত খোরশেদ মিয়ার পুত্র ইজিবাইক টমটম চালক আতাউর রহমান(৫৫) এর মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে চুনারুঘাট থানা পুলিশ। রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ২টায় বালিয়ারি গ্রামের উবাহাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ ঠাকুর চৌধুরীর বাড়ির পিছনে পুরাতন পুকুর সেচ দিয়ে প্রধান আসামি হাবিবুর রহমান রামিমকে সঙ্গে নিয়ে তার দেখানো মতে ওই পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। রামিম একই গ্রামের আজিজুর রহমান ওরফে মলাই মিয়ার পুত্র। চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি হিল্লোল রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত প্রজিত কুমার দাস সহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ওসি হিল্লোল রায় জানান, প্রধান আসামি রামিমের দেয়া তথ্য মতে এরআগে আমরা হত্যায় ব্যবহ্নত ছুরি ও দা উদ্ধার করেছি। আজ রবিবার তারই দেয়া তথ্য মতে ভিকটিম আতাউরের মোবাইল ফোন উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। উদ্ধার অভিযান শেষে নিহত আতাউরের বাড়িতে যান ওসি হিল্লোল রায়। এসময় নিহতর পুত্র ছোট ছেলে রিফাত(৩) কে খোলে নিয়ে শান্তনা দেন এবং এর সাথে আরও যারা জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে নিহতর স্ত্রী ও পরিবারকে আশ্বস্ত করেন। এসময় পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত প্রজিত কুমার দাস ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক ওমর ফারুক উপস্থিত ছিলেন। এদিকে এলাকাবাসী আতাউরের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এরআগে গত বৃহস্পতিবার ৮ ফেব্রুয়ারি উবাহাটা ইউনিয়নের বালিয়ারি গ্রামে অটোচালক আতাউরের মৃতদেহ একই গ্রামের চেয়ারম্যান এজাজ ঠাকুর চৌধুরীর বাড়ির পিছনে পশ্চিম ও উত্তর অংশে মৃত এডভোকেট আফরাজ আফগান চৌধুরীর পুকুরের পাড় উদ্ধার করা হয় মৃতদেহ। নিহত আতাউর রহমান বালিয়ারি গ্রামের মৃত আব্দুল খালের পুত্র। সে শায়েস্তাগঞ্জ নতুনব্রিজ এলাকায় স্টেশন রোডে রাত্রিকালীন যাত্রী পরিবহন করে জীবীকা নির্বাহ করতো। নিহতর স্ত্রী মোছাঃ পপি আক্তার জানান, আমার ২ ছেলে ও ২ মেয়ে সন্তান আছে। এছাড়াও বর্তমানে আমি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমার স্বামী আতাউর রহমান পেশায় একজন টমটম চালক। টমটম গাড়ীটির মালিক আমার স্বামী নিজেই। আমার স্বামী আতাউর রহমান আমাদের টমটম গাড়ীটি চালাইয়া গাড়ীর আয় দিয়ে আমাদের সংসার চালানো সহ ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাইতেন।
প্রতিদিনের মত গত ৭ ফেব্রুয়ারী আমার স্বামী আতাউর রহমান দিনেরবেলা টমটম চালিয়ে ঐদিন সন্ধ্যা অনুমান ৬টায় গাড়ী নিয়া বাড়ীতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে কিছু সময় বিশ্রাম করেন। এরপর রাত অনুমান ৯টার সময় আতাউর রহমান টমটম গাড়ী যোগে প্রতিবেশী একজন রোগীকে নিয়ে স্থানীয় দূর্গাপুর বাজারে যান এবং সেখানে রোগীর ডাক্তার দেখানো শেষ হলে ঐরাত্র অনুমান ৯.৪০ মিনিটে টমটম গাড়ী নিয়া বাড়ীতে ফিরে আসেন। এর কিছু সময় পর স্বামী আতাউর রহমান এর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একটি কল আসলে আমার স্বামী ঘটনার রাত অনুমান ১০ টায় পুনরায় টমটম গাড়ীটি নিয়া বাড়ী হতে বাহির হইয়া যান। এরপর রাত্র গভীর হলে আমার স্বামী আতাউর রহমান টমটম গাড়ীটি নিয়া বাড়ীতে ফিরিতেছেন না দেখে ৮ ফেব্রয়ারী রাত আড়াইটায় সময় আমার স্বামীর নাম্বারে কল করিলে রিং হয়, কিন্তু কল রিসিভ করেন নাই। এরপর হতে আমার স্বামীর ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। তখন আমার সন্দেহের সৃষ্টি হলে আমি বিষয়টি আমার পরিবারের লোকজন সহ বাড়ীর লোকজনকে জানাই এবং স্বামীকে খোঁজাখুঁজি করিতে থাকি।
খোঁজাখুঁজি করা অবস্থায় গত-৮ ফেব্রয়ারী সকালে উবাহাটা ইউনিয়নের অন্তর্গত বালিয়ারী গ্রামস্থ চেয়ারম্যান এজাজ ঠাকুর চৌধুরীর বসত বাড়ী থেকে অনুমান ১০০ গজ পশ্চিম দিকে বালিয়ারী গ্রামের কাঁচা রাস্তা সংলগ্ন পশ্চিম দিকের পুকুর পাড়ের খালে আমার স্বামী ক্ষতবিক্ষত ও গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়। পপি বলেন আমার স্বামীকে যারা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে আমি তাদের ফাসি চাই। এঘটনায় নিহতর স্ত্রী পপি আক্তার বাদি হয়ে শুক্রবার অজ্ঞাতনামা আসামী করে চুনারুঘাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়ের পর চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিল্লোল রায়ের নেতেৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) প্রজিত কুমার দাশ সহ একদল পুলিশ ঘটনার নিবিড় তদন্ত চালিয়ে হত্যার রহস্য ও জড়িতদের সানক্ত করে মুল অসামী রামিমকে গ্রেপ্তার করেন। তার দেয়া তথ্য মতে অপর আসামী গ্রেপ্তার ও আলামত উদ্ধার করা হয় ।
এদিকে ঘটনায় চুনারুঘাট থানায় শুক্রবার বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন মাধবপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী। তিনি জানান, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চুনারুঘাট থানার অফিসার ফোর্সের সমন্বয়ে একাধিক টিম টানা ১২ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে ভোর সকালে ঘটনার প্রধান আসামী মোঃ হাবিবুর রহমান রামিমকে নিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন।
গ্রেপ্তারের পর তার দেয়া তথ্যমতে লুণ্ঠিত অটোরিক্সা, ইজিবাই বিক্রির নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং আসামীর স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে ঘটনাস্থলের পাশে পুকুর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ২টি ছুরি ও ১টি দা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে তাদের সম্পৃক্ত করে ঘটনার বর্ননা করেছে। অপর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে।
আসামীদের বরাত দিয়ে সন্ধ্যায় চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি হিল্লোল রায় জানান, আসামি রামিম সহ তার সহযোগীরা ভিকটিম আতাউরকে কৌশলে ডেকে নিয়ে পকেট হতে টাকা ও মোবাইল রেখে রাস্তায় পাশে নামিয়ে ঝাপটিয়ে ধরে চুরিকাঘাত করে পেটে ও গলায়। পরবর্তীতে হাত ও পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে টমটম ইজিবাইকটি নিয়ে যায়। সেটি শায়েস্তাগঞ্জ নিয়ে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে ভাগভাটোয়ারা করা হয়।