শুধু নামেই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, জনবল সংকটে সেবা ব্যাহত
দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সবচেয়ে পুরোনো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান লক্ষীপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র,জনবল সঙ্কটের অভাবে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। নামে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র হলেও সেবার ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে, ডাক্তারসহ বিভিন্ন পদে জনবল না থাকায় গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা’সহ গ্রামীণ শিশু, নারী ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী,জোড়াতালি দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসা কার্যক্রম,মনে হচ্ছে স্বাস্থ্য কেন্দ্র নিজেই রোগী।
জানা গেছে লক্ষীপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউনিয়নের ২৪টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ছাড়াও, পার্শ্ববর্তী সুরমা ও বোগলা ইউনিয়নের মানুষ এখানে সেবা নিতে আসেন ভারতের সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন হওয়ায় দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে এখানকার সাধারণ মানুষ উপজেলা সদর, জেলা সদর ও বিভাগীয় শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন না। এসব প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি চলছে নিজেই রোগী হয়ে এবং এমবিবিএস ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, অফিস সহায়ক ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে।ডাক্তার ছাড়াই শুধুমাত্র একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে এই হাসপাতালটির কার্যক্রম।
সরেজমিনে লক্ষীপুরে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো সীমানাপ্রাচীর না থাকায় এটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। গবাদিপশু, কুকুর বেড়াল অবাধে বিচরণ করছে হাসপাতালের আঙিনায়। স্থানীয়রা জানান, পাকিস্তান আমলে সিলেট জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে চলত লক্ষীপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাধীনতার আগেও এখানে ডাক্তার থাকত। বর্তমানে শুধুমাত্র উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মনিরুল ইসলাম কে দিয়ে চলছে পুরো হাসপাতালের কার্যক্রম। হাসপাতাল ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে রোগী দেখাসহ হাসপাতালের সার্বিক দেখভাল তিনি একাই করে থাকেন। তিনি সরকারি প্রশিক্ষণ বা ছুটিতে গেলে হাসপাতাল বন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকে।
চিকিৎসা নিতে আসা সখিনা বিবি জানান, একজন ডাক্তার দিয়েই চলছে চিকিৎসা,তিনি কোথাও গেলে সেবা নেওয়া যায় না ।
লক্ষীপুর গ্রামের মদরিস আলী বলেন ‘এই হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় পড়ে আছে, কারো নজর নেই। এভাবে চলতে থাকলে হাসপাতাল চালু রাখার কি দরকার।
লক্ষীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বলেন,আমাদের হাসপাতালে ডাক্তার নিয়োগ ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালটির উন্নয়নের দাবি জানাচ্ছি।
লক্ষীপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৬ সালে যোগদান করার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি এই হাসপাতালে আছি। দৈনিক ৪০-৫০ জন রোগী আসে। জনবল সংকটের কারণে আমাকে একাই সবকিছু সামলাতে হচ্ছে। আমি এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই বসবাস করি দিন রাত্রি ২৪ ঘণ্টা মানুষ প্রাথমিক সেবা পাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সমস্যার কথা জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন বলেন, ডাক্তারসহ অন্যান্য পদে জনবল না থাকার বিষয়টি, ইতিমধ্যে উদ্বর্তন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। খুব দ্রুত এখানে ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হবে।