নবীগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাপন সম্পন্ন
মোঃ সাগর আহমেদ, নবীগঞ্জ প্রতিনিধি
বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার মেজর অবঃ গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী (৯৭) সবাইকে কাঁদিয় পরপারে চলে গেছেন। গত ১৩ ফেব্রুয়ারী রাত ১২টা ৩০ মিনিটের সময় ঢাকাস্থ সি.এম.এইচ এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক পুত্র সন্তান ও দুই কন্যা সন্তান, ভাই-বোন সহ বহু আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী রনাংগনের সাথী সহযোদ্ধা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্লাহি রাজিউন)।
জানা যায়, বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) সকালে সি.এম.এইচ এর হিমঘর থেকে প্রথমে তার মরদেহ সিগন্যাল কোর সদর দপ্তরে নেয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন সহ সামরিক মর্যাদা প্রদান শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর মরদেহ তার ঢাকা ক্যান্টনমেন্টস্হ বাসভবনে নেয়ার পর সেখান থেকে গ্রামের বাড়ী নবীগঞ্জ উপজেলার (পুরাদিয়া) কামারগাঁওস্হ বাসভবনে এসে পৌছলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আত্মীয় স্বজন সহ গ্রামবাসী ১৯৭১ এর রণাঙ্গনের সাথী সহযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধার সন্তানেরা জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত কফিনে তাঁর মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরে নুরগাঁও মাদ্রাসা ময়দানে তাঁর জানাযার নামাজ শেষে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এসময় নবীগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ শাহীন দেলোয়ারের উপস্থিতিতে পুলিেশর এস.আই অনিক পাল ও এ.এস.আই সুমনের নেতৃত্বে একদল চৌকস পুলিশ তাঁকে গার্ড অব অনার রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করেন। জানাযার পূর্বে মরহুমের জীবন বৃতন্ত নিয়ে আলোচনা করেন, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কাজী ওবায়দুল কাদের হেলাল, মরহুমের চাচাতো ভাই সমাজসেবী দিলাওর হোসেন চৌধুরী, দীঘলবাক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সুজাত চৌধুরী, মরহুমের পুত্র টিপু চৌধুরী সহ আরো অনেকেই। এসময় উপস্থিত থেকে জানাযায় অংশ নেন জালালাবাদ সেনানিবাসের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সালেহ উদ্দিন, নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, নুরপুর রুহুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা হোসাইন আহমদ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান শেফু, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দীন সিদ্দিকী, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী কলমদর মিয়া, নবীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযুদ্ধো সন্তান কমান্ডের সাধারন সম্পাদক নিজামুল ইসলাম চৌধুরী, বীমা ব্যক্তিত্ব আমিনুল ইসলাম চৌধুরী শামীম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের জনগণ।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সিগন্যাল কোর এর দাযিত্বরত কর্মকর্তা হিসেবে সুবেদার মেজর গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী তৎকালীন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের দায়িত্বরত পাকিস্তানি জান্তা জেনারেল রাও ফরমান আলী কর্তৃক বাঙালী নিধনের সংবাদ দেশের সকল সেনানিবাসে প্রচারের নির্দেশ দিলে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী তা অমান্য করে সেনাট্রান্সমিশন মেশিন বিকল করে অন্যান্য সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেদিন অস্রাগার লুন্ঠন করে সেনানিবাস ত্যাগ করে স্বাধীনতা পাগল বাঙ্গালীদের সাথে মিশে গিয়ে ক্ষ্যাপ টাইগারের মতো পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ৫নং সেক্টরের অধীনে তৎকালীন সুনামগঞ্জ মহকুমা সহ দেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে অসীম সাহসিকতার সহিত পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সময়ে যুদ্ধ করে লাল সবুজের পতাকা ছিনিয়ে এনেছিলেন। বিশেষ করে সিলেটের শেরপুরের যুদ্ধে তিনি অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহন করে দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটালেও স্হায়ীভাবে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টস্হ মানিকদি এলাকায় নিজ বাসভবনে বসবাস করে আসছিলেন। গতকাল বুধবার বিকেলে জানাযা শেষে পুর্ন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় নিজ গ্রামের বাড়ী নবীগঞ্জ উপজেলার ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নের কামারগাঁও (পুরাদিয়া) গ্রামে দাফন করা হয়েছে।