পরীক্ষা দিচ্ছে জন্মান্ধ অদম্য তরুণী লিমা
দৈনিকসিলেটডেস্ক
জন্ম থেকেই অন্ধ। তারপরও অদম্য চা বাগানের তরুণী লেখাপড়া ছাড়েননি। এগিয়ে যেতে চান অনেক দূর। তাই পরীক্ষার পাঠ চুকাতে শ্রুতিলেখক নিয়েই বসেছেন পরীক্ষার বেঞ্চে।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার তাহের শামছুননাহার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। সে অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে।
উপজেলার চন্ডিছড়া চা বাগানের দরিদ্র পরিবারের সন্তান লিমা বেগম। তার পিতা মো. দেলোয়ার মিয়া। তার বড়বোনও এবার পরীক্ষা দিচ্ছে। একদিকে দুটি অন্ধ দৃষ্টি, অপরদিকে আর্থিক দৈন্যতা থাকলেও সে থেমে যায়নি। পরিবার ও সহৃদয়বানদের সহযোগিতায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। সে বড়বোনের পড়া শুনে শুনে শিখে। তার ইচ্ছা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া।
বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা শেষে লিমা জানায়, তার পরীক্ষা ভালো হয়েছে। সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। কোনো সমস্যা হয়নি, নন্দিনী আমার খাতায় খুব ভালো লিখেছে আশা করি।
লিমার শ্রুতিলেখক নন্দিনী জানায়, লিমা আপার প্রস্তুতি ভালো ছিল, পরীক্ষা ভালো হয়েছে। আমারও পরীক্ষার ভীতি কমেছে।
লিমা জানায়, পুরো পড়াশোনাটাই করতে হয় শুনে শুনে। সে কাজে তার বড়বোন সহায়তা করেছে। পরীক্ষায় তার কথা শুনে আরেকজনকে লিখতে হয়। পুরো উল্টো। স্বাভাবিকদের তুলনায় কিছুটা গতি হারায় সে। তবে পরীক্ষা ভালো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্র চন্দ্র দেব জানান, শ্রুতিলেখকের সহায়তা নিয়ে পরীক্ষা দিতে অনুমতি আনা হয়েছে সিলেট শিক্ষাবোর্ড থেকে। শ্রুতিলেখক নন্দিনী একই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সাধারণত শ্রুতিলেখকদের পরীক্ষার্থীদের চেয়ে নিচের ক্লাসের শিক্ষার্থী হতে হয়।
অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব নুরুল ইসলাম জানান, শ্রুতিলেখক নিয়োগের জন্য শ্রুতিলেখকের অভিভাবক এবং তার প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি প্রয়োজন। যারা শ্রুতিলেখক হয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয় তাদের পরীক্ষার্থীর চেয়ে নিচের ক্লাসের হতে হয়। এখানে তাই করা হয়েছে। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী দিয়ে সে পরীক্ষা দিচ্ছে। তাকে আইন অনুযায়ী ২০ মিনিট সময়ও বেশি দেওয়া হচ্ছে।
দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থী লিমা জানায়, আমার পড়াশোনায় তেমন সমস্যা হয়নি। আমি আমার বড়বোনের পড়া শুনে শুনে শিখি ও মুখস্থ করি। চোখে না দেখা বিষয়টিতে আমার অভ্যস্ত হয়ে গেছে; কিন্তু পরীক্ষার আগে শ্রুতিলেখক খুঁজে বের করতে সমস্যা হয়। প্রথমে যাকে শ্রুতিলেখক নিয়েছিলাম সে না আসায় পরে নন্দিনীকে অনুরোধ করার পর রাজি হয়, পরীক্ষায় বসতে। এসএসসি পাশ করে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে চায় সে। পরে তার ইচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া।