কবিরের বড়ইচাষে সাফল্য, ১০ লাখ টাকার বরই বিক্রির সম্ভাবনা
নুর উদ্দিন সুমন, হবিগঞ্জ
শীতের সুস্বাদু ফল বরই (কুল)। দেশে এখন টক-মিস্টি, দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন জাতের বরই চাষ হয়ে থাকে। এ বরই চাষ করে প্রথম ধাপেই প্রায় ৬ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন দেওরগাছ ইউনিয়নের দক্ষিণ আমকান্দি এলাকার বাসিন্দা কৃষক কবির মিয়া। এ বছর তিনি আপেল কুলের চাষ করেছেন।এবারের মৌসুমে তার বাগানে সর্বোচ্চ বরইয়ের ফলন হয়েছে। তিনি এবার আশা করছেন ১০ লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবেন। গেল বছর ৩৬ শতাংশ জমিতে শুরু করেন বরই চাষ। শুরুতেই তিনি আয় করেন ৩ লাখ টাকা। পরের বছর থেকে তিনি বাড়াতে থাকেন বরই চাষ। বর্তমানে তিনি দুই বিঘা জমিতে চাষ করছেন। এতে খরচ হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বরইয়ের বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি কবির মিয়া ।
এ বছর যে ফলন হয়েছে সবমিলিয়ে তাতে ১০ লাখ টাকার বরই বিক্রি করবেন বলে তিনি আশাবাদী। বরই পাকা শুরু করলে বাগান থেকেই পাইকারি দরে মন হিসেবে ব্যাপারিদের কাছে বিক্রি করেন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বরই চলে যাচ্ছে হবিগঞ্জ সহ বিভিন্ন জেলায়। তার দেখাদেখি এ উপজেলার অনেকে এখন বরই চাষ শুরু করেছেন। এ উপজেলায় এখন ২০ বিঘার উপর জমিতে বরই চাষ হচ্ছে। তিনি কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই বরই চাষ করেছেন। সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছা শক্তির ওপর ভিত্তি করে বরই চাষ করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। এমনকি চুনারুঘাটের সফল বরই চাষি।
কবির মিয়া জানান, ২০২১ সালে ৩৬ শতাংশ জমিতে বরই চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরেই লাভ হয় ৩ লাখ টাকা। পরে চাষ বাড়াতে থাকেন এবং লাভবান হন। এ বছর ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। ফলন অনুযায়ী বিক্রি করবেন প্রায় ১০ লাখ টাকা। কবির মিয়ার ভাই সাজিদ মিয়া জানান, দুই বিঘা জমিতে তিনশতাধিক বরই গাছ রয়েছে। এ বছর বিগত বছরগুলোর তুলনায় ফলন অনেক ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ছয় লাখ টাকার বরই বিক্রি করা হয়েছে । প্রতি কেজি বরই পাইকারি ১০০ দশ টাকা এবং খুচরা ১২০ টাকা করে বিক্রি করা হয় । গাছগুলোতে যে পরিমাণ ফলন রয়েছে তাতে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৯ থেকে ১০ লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবো। বাগান পরিচর্যার জন্য মোট ১৪ জন শ্রমিক কাজ করেন। আগামীতে আরো বড় আকারে বরইয়ের চাষ করবেন তারা । তবে বরই চাষ করতে উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতা কামনা করেন কবির মিয়া । বরই নিতে আসা তৌফিক মিয়া নামে এক গ্রাহক বলেন, কবির মিয়ার রোপন করা প্রতিটি বরই গাছে থোকায় থোকায় বরই ধরেছে। দেখতে আপেলের মতো। খেতেও সুস্বাদু। তার জমির বরই স্বাদ হওয়ায় আমি নিজেও নিতে এসেছি। আশেপাশের অনেকেই কবির মিয়ার বরই খেতে আগ্রহ হচ্ছেন। জমির পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা ছালাম মিয়া জানান, আমি শুরু থেকেই কবির ভাইয়ের বরই বাগানে কাজ করছি। এখানে কাজ করেই আমার পরিবার চলে এবং পরিবারের বরইয়ের চাহিদাও পূরণ হয়। আমার নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আরও ১৪ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাগানটি সম্প্রসারণ করলে আগামীতে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। স্থানীয় কৃষক হামিদ মিয়া বলেন, আমরা সাধারনত শিম, বেগুন, লাউ, আলুর আবাদ করে থাকি। বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষের কথা আগে ভাবিনি। কবির মিয়া ২ বিঘা জমিতে বরই চাষ করে লাভবান হয়েছেন। আগামীতে আমিও বরই চাষ করবো। কবির মিয়ার ফুফাত ভাই শাকিল মিয়া জানায়, বাগানে কবির মিয়াকে আমি সহযোগিতা করি এবং বিকেলে চুনারুঘাট পৌরশহর স্বাদের বরই বিক্রি করি। স্থানীয়ভাবে চাহিদাও বেশি, দামও ভালো পাই।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো: মাহিদুল ইসলাম বলেন, চুনারুঘাট উপজেলার চাষিরা এখন কুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এবং বেশ লাভবান হচ্ছেন। এবছর চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন জাতের প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে কুলের চাষ হয়েছে। কবির মিয়া নামের ওই ব্যক্তি খুবই পরিশ্রমী। তিনি তার কাজের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক। গত কয়েক বছর ধরেই বরই চাষ করছেন। এ বছর তার বাগানে সর্বোচ্চ ভালো ফলন হয়েছে। আমরা তার বাগান পরিদর্শনসহ খোঁজ-খবর নিচ্ছি। একই সঙ্গে বরই চাষি কবিরের কোনো সমস্যা হলে প্রয়োজনীয় পরামর্শের মাধ্যমে তা সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। এছাড়া নতুন করেও কেউ যদি আগ্রহী হয়, উপজেলা কৃষি অফিস সব সময় তার পাশে থাকবে এবং মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ায় কুল চাষ দিনদিন বাড়ছে।