বড়লেখায় তারুণ্য ও উদীচী’র যৌথ উদ্যোগে আনন্দ ভ্রমণ
তাহমীদ ইশাদ রিপন, বড়লেখা প্রতিনিধি
প্রকৃতি হাতছানি দিয়ে ডাকে/ হারাতে ইচ্ছে হয় পাহাড়ি নদীর বাঁকে/ দুর্গম পথ পেরিয়ে পাহাড় জয়ের নেশা/ প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্যে নিজেকে ভালোবাসো।’ সেদিন তারই প্রতিফলন ঘটেছিল প্রকৃতিকন্যা খ্যাত ভারত সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড় বেষ্টিত সিলেটের সৌন্দর্যের রাণী জাফলংয়ে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে জাফলং ভ্রমণের আয়োজন করে বড়লেখার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন তারুণ্য নাট্যগোষ্ঠী ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি জাফলং। জাফলং, বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের অন্তর্গত একটি পর্যটন এলাকা। জাফলং, সিলেট শহর থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। এখানে পাহাড় আর নদীর অপূর্ব সম্মিলন বলে এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত।
জাফলং এর অপর পাশে ভারতের ডাওকি অঞ্চল। ডাওকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে ডাওকি নদী এই জাফলং দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মূলত পিয়াইন নদীর অববাহিকায় জাফলং অবস্থিত।
সিলেট জেলার জাফলং-তামাবিল-লালাখাল অঞ্চলে রয়েছে পাহাড়ী উত্তরভঙ্গ। এই উত্তরভঙ্গে পাললিক শিলা প্রকটিত হয়ে আছে, তাই ওখানে বেশ কয়েকবার ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এটি সিলেট বিভাগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। জাফলং সিলেট শহর হতে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার দূরে খাসিয়া পল্লীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত আর বড়লেখা থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে। এখানকার নদী ভারতের হিমালয় থেকে উৎপত্তি হয়ে জাফলং দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় অনেক ছোট বড় পাথর বয়ে নিয়ে আসে। এই পাথরগুলির উপর নির্ভর করে অনেক মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। এখানে নদীতে নৌকা ভ্রমণের সময় পাথর ও বালু আহরণ করার অপরূপ সৌন্দর্য সত্যি উপভোগ করার মতো।
জাফলং পুরোপুরি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট পাহাড়ি এলাকা, যেখানে পাহাড়ের সাথে বন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। পাহাড ভেদ করে আচড়ে পড়া স্বচ্ছ ঝরনার পানিতে তাকালেই দেখা যায় পাথর গড়িয়ে গড়িয়ে আসছে। নৌকা,ট্রলার নিয়ে একটু এগোলেই পাওয়া যায় বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত। সীমান্ত ওপারে দেখা যায় খাসিয়াদের ঘরবাড়ি। এখানে আরো দেখতে পাওয়া যায় বিএসএফ, বিজিবির ঘুরাঘুরি এবং ছোট ছোট টং দোকান। বল্লাঘাটের তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। সীমান্তের ওপারে ভারতের ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি সেতু, মারি নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি, উঁচু পাহাড়ের গহীন অরণ্য ও সুনসান নীরবতার কারণে জাফলং পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। এখানে প্রতিদিন দেশি-বিদেশী অসংখ্য পর্যটক এই প্রাকৃতিক ঝরনাধারাটি দেখতে আসেন। এই এলাকায় যেমন সাধারণ বাঙালিরা বসবাস করেন, তেমনি বাস করেন উপজাতিরাও। জাফলং-এর বল্লা, সংগ্রামপুঞ্জি, নকশিয়াপুঞ্জি, লামাপুঞ্জি ও প্রতাপপুর জুড়ে রয়েছে ৫টি খাসিয়াপুঞ্জি।
ফাগুনের আগমনে ফুল, পাখি আর শিমুল পলাশে যখন নতুন প্রাণের স্পন্দন! ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে বাঙালি জীবন ও সংস্কৃতিতে একটা উৎসব আছে যুগ-যুগান্তর ধরে। তাই বসন্ত ঋতুর মাস ফাল্গুনকে প্রতিবারই ভিন্নরূপে নতুনভাবে বরণ করে নেন ভ্রমণপিপাসুরা।
শীতের চাদরের আবরণ ফেলে, ফাল্গুনের নতুন সূর্যালোকের টানে সবাই ছুটে যেতে চাই প্রকৃতির সান্নিধ্যে। ঠিক এমন সময়ে বড়লেখার জনপ্রিয় দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে সাংস্কৃতিক-সামাজকর্মীরা মেতে উঠেছিলেন পিকনিক ও বনভোজনে। দিনটি ছিল ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ইংরেজী, শুক্রবার। বড়লেখা উপজেলা শহর থেকে সকাল ৯ টায় বাস গাড়ি নিয়ে রওয়ানা হয় তারুণ্য নাট্য গোষ্ঠী ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পরিবারের ৩৫ জন। প্রায় ৪ ঘন্টা জার্নির মাঝ পথে ৩০ মিনিট যাত্রা বিরতি দিয়ে জাফলং এ গিয়ে পৌছে জার্নির সময় বাসে আনন্দ দিতে গান, কবিতা, কৌতুক, অভিনয় করতে করতে জায়গা মতো পৌছে ভ্রমণ পিপাসুরা বেরিয়ে পড়েন প্রকৃতির ঝরনাধারা, টুকরো টুকরো পাথর, ঝিকিমিকি বালুকার চরে। স্বচ্ছ পানিতে সাঁতার কাটা, হৈ হুল্লোড, খেলা, গ্রুপ ছবি ও আনন্দমনে মোঠোফোনের সাহায্যে সেলফী তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই। দিনব্যাপী পিকনিকের আনন্দ উপভোগ করতে করতে যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে তখন ডাক আসে এবার ঘরে ফিরার পালা। প্রশান্ত মন তখনও মগ্ন। প্রকৃতি কন্যার কাছ থেকে মন ফিরে আসতে চায়না কংক্রিটের যান্ত্রিক এই শহরে! সত্যি এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে স্মৃতির সোনালি পাতায়।
জাফলং ভ্রমণ সম্পর্কে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য আব্দুল লতিফ বলেন, তারুণ্য ও উদীচী পরিবারের সঙ্গে জাফলংয়ে এসে সৌন্দর্য অবলোকন করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে, এইপাড়ে বাংলাদেশ ঐ পাড়ে ভারত, দেখলে মনে হয় এটা যেন দুই দেশের মিলনায়তন। জাফলংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। সবমিলিয়ে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখার মতো একটি দিন আমরা পার করেছি।”
প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হয়ে তারুণ্য নাট্য গোষ্ঠীর আজীবন সদস্য তোফায়েল আহমদ চৌধুরী বলেন, “ভ্রমণের প্রতি আমার সব সময়েই একটা আকর্ষণ থাকে আর সেটা যদি হয় জাফলং ভ্রমণ, তাহলে তো আর কথাই নেই। উদীচী ও তারুণ্য পরিবারের সাথে জাফলং ভ্রমণ আমাকে মোহিত করে তুলেছিল। সত্যিই জাফলংয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা মজাই আলাদা। জাফলং কল্পনার চেয়ে বাস্তবে অনেক বেশি সুন্দর।”
তারুন্যের সভাপতি প্রভাষক বদরুল ইসলাম মনু বলেন, “জাফলংকে কেন পাথরকন্যা বলা হয় এটা না দেখলে বুঝতামই নাহ। যেদিকে তাকাই শুধুই পাথর আর পাথর। নিচে স্বচ্ছ ঠান্ডা পানি, আর উপরে নীল আকাশ। মন ভালো করে দেয়ার মতো একটা পরিবেশ। এক কথায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন ভরপুর হয়ে আছে জাফলংয়ে।”
উদীচীর সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস দে শুভ্র বলেন, “প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার বাংলাদেশের অন্যতম বিউটি স্পটের নানা রূপ সৌন্দর্যের বৈচিত্র্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। নানা ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও সবাইকে নিয়ে সবার সাথে আনন্দ ভ্রমণে এসে বেশ ভালোই লেগেছে।”
তারুণ্যের সহ সভাপতি হানিফ পারভেজ বলেন, “জাফলং দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে অনন্য। সৌন্দর্