‘সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে’
দৈনিকসিলেট ডটকম
হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের অগ্রগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি।
বিএনপির পক্ষ থেকে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে এই কথা জানানো হয়েছে। শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সংগঠনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে সরেজমিন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। অক্ষত বাঁধে পুনরায় বরাদ্দ দেওয়া, প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে অনেক প্রকল্পে। এমন অনেক প্রকল্প আছে যেগুলোয় পুরোনো বাঁধ কেটে নতুন বাঁধ দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপি নেতারা বলেন, এখন পর্যন্ত বাঁধের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কাজ হয়েছে। অথচ কাজ শেষ হওয়ার আর মাত্র ১১ দিন বাকি। এই সময়ে পুরো কাজ কোনোভাবে শেষ করা সম্ভব নয়। বাঁধের কাজে অনিয়ম, অবহেলার কারণে ফসলের কোনো ক্ষতি হলে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম।
এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জেলার ১২টি উপজেলার হাওরে এবার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসন ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণের কাজ করছে। এ জন্য ৭৩৫টি প্রকল্পে ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাঁধ নির্মাণকাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি।
বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেন, বাঁধের কাজ এবার নির্ধারিত সময়ের এক থেকে দেড় মাস পর শুরু হয়েছে। এখনো অনেক বাঁধ ও ক্লোজার (ঝুঁকিপূর্ণ অংশ) অরক্ষিত আছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনে বিলম্ব হয়েছে। গণশুনানির মাধ্যমে পিআইসি গঠনের কথা থাকলেও সেটি হয়নি। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অধিকাংশ পিআইসি গঠন হয়েছে কর্মকর্তাদের পছন্দের লোক ও সরকারদলীয় লোকজনকে নিয়ে।
এ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেছেন, শুরুতে কাজে গতি কম থাকলেও এখন পুরোদমে চলছে। মাঠে প্রশাসন, পাউবো কর্মকর্তারা তদারকি করছেন। কাজ নীতিমালা অনুযায়ী হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৬৯ ভাগ হয়েছে। আশা করছেন, নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ করতে পারবেন।
সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জেলার ছোট–বড় ৯৫টি হাওরে প্রতিবছর সোয়া দুই লাখ হেক্টরের মতো জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। এসব হাওরে বেড়িবাঁধ আছে ১ হাজার ৭১৮ কিলোমিটারের মতো। পাউবো কাজ করে ৩৮টি হাওরে। হাওরে একসময় ঠিকাদারদের মাধ্যমে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ হতো।
২০১৭ সালে হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে তখন মামলাও হয়। এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড হাওরে বাঁধ নির্মাণে নতুন নীতিমালা করে। এতে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয় ঠিকাদারদের। কাজে সরাসরি যুক্ত করা হয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য প্রকৃত কৃষক ও স্থানীয় সুবিধাভোগীদের নিয়ে পাঁচ থেকে সাত সদস্যের একটি পিআইসি থাকে। একটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে।