জামালগঞ্জে ফসলি জমি নষ্টের অভিযোগ: অভিযোগ মিথ্যা দাবি ইউপি চেয়ারম্যানের
জামালগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে ফসলি জমি নষ্ট করে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করার প্রতিবাদ করায় গ্রামবাসীর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ উঠেছে আবু হানিফ নামে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জামালগঞ্জ উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের কামিনীপুর গ্রামে নদীর পাড়ের সরকারি ১নং খতিয়ানের খাস ভূমি নিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর।
অভিযোগে গ্রামবাসী বলেন, কামিনীপুর গ্রামে নদীর পাড়ের উক্ত ভূমিটিতে স্বাধীনতার পর থেকে গ্রামের স্ব স্ব বাড়ির রেকর্ডের সীমানার হিস্যা বরাবর নদী পর্যন্ত দখল করে প্রায় শতাধিক কৃষক বিভিন্ন জাতের ফসল আবাদ করে আসছে। গত কয়েক মাস যাবত উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগন একাধিকবার পরিদর্শন শেষে গুচ্ছগ্রামের জন্য নির্ধারিত হয় উক্ত জমিটি। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো মাসুদ রানা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের পর পরই প্রকল্পে মাটি ভরাটের দায়িত্ব পান সংশ্লিষ্ট উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু হানিফ। এতে তিনি এসকোভেটর দিয়ে মাটি ফেলার কাজ শুরু করলে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জমিতে থাকা নানা জাতের ফসল। এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারী জমিতে থাকা ফসলের ক্ষতিতে আপত্তি জানিয়ে ফসল তোলা পর্যন্ত বর্ধিত সময় চেয়ে ১৫০ জন কৃষকের পক্ষে ওই গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী নামে এক কৃষক আবেদন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো মাসুদ রানা আপাতত ফসল তোলার আগ পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার জন্য সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু জমিতে মাটি ফেলা আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের পরও ইউপি চেয়ারম্যান আবু হানিফ ফসলি জমিতে মাটি ফেলা অব্যাহত রাখার অভিযোগ গ্রামবাসীর।
এব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো. নূরু মিয়া বলেন, আমরা গরীব মানুষ, পরিবার নিয়ে ৬ মাস ঢাকায় থাকি। আর বাকি সময় চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করি। এই জমিতে দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন মৌসুমী ফসল চাষাবাদ করে আসছি। এখানে গুচ্ছগ্রাম হবে সেটা আমরা শুনেছি। আমরাও চাই গুচ্ছ গ্রাম হোক। কিন্তু সেটা ফসল ঘরে তোলার পর হোক। আবু হানিফ চেয়ারম্যান আমাদের কথা না শুনে ফসল নষ্ট করে জোড় করে মাটি ফেলা শুরু করেছে।
স্থানীয় কামিনীপুর গ্রামের আরেক কৃষক মো. জাকির হোসেন বলেন, আমিসহ আমাদের গ্রামের শতাধিক কৃষক এখানে ফসলি জমি করেছে। হঠাৎ একদিন দেখি হানিফা চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য সেলিম মিয়া ট্রাক ও এসকোভেটর নিয়ে মাটি কাটার জন্য জমিতে আসছে। আপাতত ইউএনও স্যার কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে চেয়ারম্যানকে জানালে সে উত্তেজিত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে আমিসহ গ্রামের সকলকে।
এব্যাপারে উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবু হানিফ জানান, আমার উপর আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কামিনীপুর গ্রামের খাস জায়গায় সরকারি উদ্যোগে গুচ্ছগ্রাম হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাছাড়া ঢাকা থেকে প্রকল্প পরিচালক দেখে যাওয়ার পর ইউএনও স্যারের নির্দেশে আমি মাটির কাজ শুরু করি। কৃষকদেরকে গত ৩ মাস আগেই জানানো হয়েছে ফসল চাষ না করার জন্য। কিন্তু তাঁরা আবারও ফসল চাষ করেছে। তাছাড়া জাকির নামের একজন ব্যাক্তি আমার নির্বাচনের পর থেকে আমার মান সম্মান ক্ষুন্ন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো মাসুদ রানা বলেন, জামালগঞ্জ উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের কামিনীপুর গ্রামে সরকারি জমিতে গুচ্ছগ্রামের যে কাজটি শুরু হয়েছিলো আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখেছি এখানে অনেক ফসল ফলাদি রয়েছে। তাই এখন কাজটি করলে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় আপাতত কাজটি বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা বিবেচনা করে দেখছি কিভাবে সুন্দর করে একটি সমাধান করা যায়।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ জানান, আমি সরেজমিনে ঘুরে আসছি। গুচ্ছ গ্রাম আমাদের এখানে অতি প্রয়োজন। তবে এটা অবশ্যই ফসল তোলার পর। ফসল নষ্ট করা যাবেনা। তাছাড়া গ্রামের সকলকে নিয়ে আলোচনা করে কাজটা শুরু করা যেত। হঠাৎ করে কাউকে না বলে এভাবে কাজটা শুরু করা ঠিক হয়নি।