নারীদের হজের বিশেষ বিধান
![](https://dainiksylhet.com/images/icon.jpg)
আলেমা উম্মে শিফা
মৌলিকভাবে হজের বিধানগুলোতে পুরুষ-নারীর বিধান অভিন্ন। হজের ফরজ তিনটি বিধান অর্থাৎ ইহরাম, আরাফায় অবস্থান ও তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করা পুরুষ-নারীর জন্য সমান ফরজ। তবে কিছুসংখ্যক বিধানে ভিন্নতা রয়েছে।
নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ : নারীদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য অন্য শর্তগুলোর সঙ্গে তার স্বামী বা মাহরাম থাকাও আবশ্যকীয়।
স্বামী বা মাহরাম থাকার পাশাপাশি তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী হজের খরচও ওই নারীর কাছে থাকা আবশ্যকীয়, নতুবা কেবল নিজের হজ করার সামর্থ্য থাকলেও হজ ফরজ হবে না। (আল-বাহরুর রায়েক: ২/৩৩৯)
স্বামী বা মাহরাম ছাড়া নারীদের হজে গমন শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ নয়, এতে হজ মাকরুহের সঙ্গে আদায় হলেও নারী গুনাহগার হবে। (আল-জাওহারা : ১/১৫০)
মহানবী (সা.) বলেছেন, কোনো নারী যেন মাহরাম ব্যতীত সফর না করে, জনৈক সাহাবি আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি অমুক জিহাদে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছি; কিন্তু আমার স্ত্রী হজে গমনে ইচ্ছুক? নবী করিম (সা.) বললেন, তুমি তাকে নিয়ে হজে যাও। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬২)
নারীদের হজের বিশেষ বিধান : ইমাম আবুল হাসান সুগদি (রহ.)-এর বর্ণনা মতে, হজের বিধানাবলিতে পুরুষের চেয়ে ভিন্ন নারীদের বিশেষ ১১টি বিধান রয়েছে, এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে তা তুলে ধরা হলো :
১. নারীদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য তার স্বামী বা মাহরাম থাকা আবশ্যকীয়।
২. স্বামী বা মাহরাম থাকার পাশাপাশি তাদের প্রয়োজন ও দাবির নিমিত্তে তাদের হজের খরচও ওই নারীর কাছে থাকা আবশ্যকীয়।
৩. নারীরা সেলাই করা কাপড় পরিধান করতে পারবে।
৪. নারীরা স্বীয় চেহারা আবৃত করতে না পারলেও মাথা ঢাকতে পারবে।
৫. পুরুষদের তালবিয়া জোরে পড়া সুন্নত হলেও নারীদের নিঃশব্দে পড়া সুন্নত।
৬. পুরুষদের তাওয়াফের তিন চক্করে ‘রমল’ করা (বুক উঁচিয়ে হাত নেড়ে বাহাদুরের মতো হাঁটা) সুন্নত, নারীদের জন্য তা সুন্নত নয়।
৭. খালি না পেলে নারীদের হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া সুন্নত নয়; তবে হ্যাঁ, পুরুষশূন্য হলে দেবে।
৮. খালি না পেলে নারীদের সাফা-মারওয়া পাহাড়ে ওঠা সুন্নত নয়; তবে হ্যাঁ, পুরুষশূন্য হলে উঠবে।
৯. সাফা-মারওয়ায় সাঈ করার সময় সবুজ চিহ্নদ্বয়ের মাঝে নারীরা সাধারণ গতিতেই হাঁটবে, দ্রুতগতিতে হাঁটবে না।
১০. আরাফায় অবস্থান ও তাওয়াফে জিয়ারতের পর ঋতুস্রাব শুরু হলে নারীদের তাওয়াফে বিদা করা জরুরি নয়।
১১. ইহরাম খুলতে পুরুষের মতো নারীদের মাথা মুণ্ডানোর বিধান নেই, বরং নারীরা আঙুলের অগ্রভাগ পরিমাণ চুল কাটবে। (আন-নুতাফ ফিল ফাতাওয়া, পৃষ্ঠা-২০৪)
নারীদের বিধানে আছে শিথিলতা : নারীরা ভিড়ের দরুন মুজদালিফায় অবস্থান করার সুযোগ না পাওয়ায় মুজদালিফায় অবস্থান না করে মিনায় চলে গেলে তাদের ওপর দম (পশু জবাই) ওয়াজিব হবে না। (মুআল্লিমুল হুজ্জাজ, পৃষ্ঠা-১৮৩)
নারীরা দিনের বেলা ভিড়ের দরুন কঙ্কর মারার সুযোগ না পেলে তাদের জন্য রাতে কঙ্কর মারা জায়েজ আছে, এটি মাকরুহ হবে না। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৪৮)
কিছু বিশেষ মাসআলা : হজ শুরু করার পর কোনো নারীর ঋতুস্রাব শুরু হলে শুধু তাওয়াফ ও সাঈ ব্যতীত অন্য সব আমল সম্পাদন করতে পারবে, হজ শেষ করে স্রাব বন্ধ হওয়ার অপেক্ষা করবে, অতঃপর বন্ধ হলে তাওয়াফ ও সাঈ করে হজ শেষ করবে। (আল-মাবসুত : ৪/১৭৯)
আরাফায় অবস্থান ও তাওয়াফে জিয়ারতের পর ঋতুস্রাব শুরু হলে নারীদের তাওয়াফে বিদা করা জরুরি নয়, তবে স্রাব বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে তাওয়াফে বিদা আদায় করে আসা উত্তম। (আল মাবসুত ৪/১৭৯, মুআল্লিমুল হুজ্জাজ, পৃ. ২০৭)