জামালগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় সুরমা নদীর পানি বিপৎ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণের ফলে সিলেট-সুনামগঞ্জের পর এবার জামালগঞ্জে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সতর্কতামূলক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এতে সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো হয়েছে বন্যার পানি সুরমা নদীর বিপৎ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। উপজেলার সবকটি বন্যার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত থাকার জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো গ্রাম বা এলাকা প্লাবিত হলে নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
এব্যাপারে বেহেলী ইউপি চেয়ারম্যান সুব্রত সামন্ত সরকার জানান, আহসানপুর, হরিপুর, মদনাকান্দীসহ প্রায় ৮০ ভাগ গ্রাম বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। আহসানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ পরিবারের ৪০ জন লোক আশ্রয় নিয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেলে আরো অনেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরও ৮ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে এবং ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার প্রস্তুত আছে।
সাচনা বাজার ইউপি চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া বলেন, রাঁধানগর, রামনগর, চাঁনপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আজকের দিন অপেক্ষা করে পানি বাড়লে আশ্রয় কেন্দ্রে তাঁরা উঠবে। প্রত্যেক ওয়ার্ড মেম্বারের কাছে বিদ্যালয়ের চাবি রাখা হয়েছে এবং তাদের জন্য শুকনো খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ফেনারবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চন্দ্র তালুকদার জানান, নিধীপুর, বিষ্ণুপুর আমানীপুর, শরীফপুর সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে। অতিরিক্ত পানি বাড়লে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। শুকনো খাবার ও পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রস্তুত রয়েছে।
ভীমখালি ইউপি চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান তালুকদার জানান, আমার ইউনিয়নের উজ্জ্বলপুরের রাস্তাটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় গতকাল সারাদিন বাঁশ, দাড়ি ও বস্তা দিয়ে আটকানো হয়েছে। ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে লোকজন উঠে যাবে।
জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হানিফ মিয়া জানান, আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। আরো যদি পানি বাড়ে তাহলে লোকজনের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জামালগঞ্জ সদর ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল হুদা জানান, আমার ইউনিয়নের নদীর পাড়ের বাড়িঘরগুলো আগে প্লাবিত হয়েছে। এখনো কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে পানি বাড়লে আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠার জন্য তাদেরকে জানানো হয়েছে।
জামালগঞ্জ উপজেলা পাউবো উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জনি জানান, জামালগঞ্জে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মেঘালয়ে যদি ভারী বৃষ্টিপাত হয় তাহলে আগামী ৭২ ঘন্টায় বন্যার পরিস্থিতির অবনতি হবে। আর যদি বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকীন নূর জানান, বন্যার পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সকল ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে জানানো হয়েছে যে কোনো সমস্যা হলেই সাথে সাথে আমাদেরকে জানানোর জন্য। এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবারের ব্যাবস্থা রয়েছে।