মাথা গোঁজার ঠাঁই চান ইসমতুন নেছা
বন্যায় গাঙ্গে গেছেগি ঘর, কোন্তা রইছেনা ঢেউয়ের লাগি। শুধু অউ বাশের খুটি আছে মাটি নাই খুটির নিচে। ঘরর বেরা লটকিয়া আছে উফ্রের টিনর লগে। মাথা রাখিয়া ঘুমাইবার মতো কোন্তা আর রইলোনা। আমরার রিলিফ (ত্রাণ) লাগতোনা, মাথা রাখবার একটা ব্যবস্থা করিয়া দেইন।
এভাবে কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলেছেন উপজেলার তেলিখাল গ্রামের ভাটিপাড়ার নদীর পাড়ের বাসিন্দা বিধবা ইসমতুন নেছা ।
বন্যার কারণে তার মতো এমন অসংখ্য পরিবারের কণ্ঠে এমনই আর্তনাদ।
বন্যার পানিতে পচে যাওয়া ভাঙা বাঁশের বেড়া মেরামত করার সময় তিনি বলেন, মানুষের বাড়িতে কাম (কাজ) করিয়া চলে সংসার। এমন সময় বন্যায় শেষ সম্বল মাথা গোঁজার ঠাঁই ভিটেমাটি নদীতে বিলীন। বড় অসহায় অইগিলাম।
ইসমতুন নেছা জানান, বৃষ্টি হলেই তারা ঘুমাতে পারেন না। কারণ তার ঘরটি এমনিতেই হেলে পড়েছে নদীর পাড়ে। তার উপর টিনের চালে অসংখ্য ছিদ্র। আর সেই ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে তার কাঁথা-বালিশসহ সবকিছু ভিজে যায়। একদিকে নদীতে ঘর চলে যাওয়ার ভয় অপরদিকে বৃষ্টির পানির ফোঁটায় বিছানা ভেজা একমাত্র বিবাহযোগ্যা মেয়ে রিচিকে নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটান ৮-১০ দিন। বুধবার নদীর স্রোতের কারনে ভিটা যেটুকু ছিলো সেটুকুও চলে যায় নদীতে। কোনক্রমে সৎ দুই ছেলের সাথে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নেন তেলিখাল উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে। বন্যার পানি কমার পর নিজের ঘরে এসে দেখেন ভিটা নদী গর্ভে বিলীন। পানির ঢেউয়ে বেড়ার সকল টিন নষ্ট হয়ে কোনরকম আটকে আছে বাশের সাথে৷
সৎ দুই ছেলে লায়েক ও দুলাল এবং একমাত্র বিবাহযোগ্যা মেয়ে রিচি। দুলাল মিয়ার তিন মেয়ে দুই ছেলে ও তার বউ। লায়েক মিয়ার তিন ছেলে দুই মেয়ে ও তার বউ সব মিলিয়ে পরিবারের মোট সদস্য ১৬ জন। সবাই থাকতেন এই ঘরে। সবাই একসাথে থাকলেও লায়েক ও দুলাল মিয়ার আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তারা সবাই যার যার পরিবার নিয়ে আলাদা পাকে খাওয়া দাওয়া করে।
অসহায় ইসমতুন নেছার আয় রোজগারের কেউ নেই। এখন কিভাবে? মাথা গোঁজার ঠাঁই ঠিক করবেন সেই চিন্তায় দিশেহারা তিনি।
ইসমতুন নেছার সৎ ছেলে লায়েক মিয়া একজন দিনমজুর। বন্যা শুরুর পর থেকে কোনো কাজই নেই তার। বউ বাচ্চাসহ খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঘরে কচুরিপানা এনে কোন রকম টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে করতে তিনি বলেন, ২২ সালের বন্যায় ঘর অর্ধেক গাঙ্গে গেছিলগি, এই বন্যায় আর কোন্তা রইছেনা। হেলে পড়া ভাঙা ঘরটির নিচে মাটি নেই। এখন শেষ ভরসা এই ঘরটিই। কোনোমতে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তেলিখাল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য জানান, ইসমতুন নেছার ঘরের যে অবস্থা তাতে বসবাস করা মুশকিল। ত্রাণ যা পেয়েছেন তা নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই। শুধু মাথা গোঁজার একটু ব্যবস্থা হলেই চলবে। এ অবস্থায় যদি প্রশাসন বা বিত্তবানদের সহায়তায় একটি ঘর পান তাহলে তার খুব উপকার হবে।
শুধু ইসমতুন নয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বন্যাকবলিত ৬টি ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষের মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন হবে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ!
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, বন্যায় যাদের ঘর ভেঙে গেছে আংশিক ও পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বন্যার পানি নেমে গেলে পরে আমরা সরকারের কাছে তালিকা পাঠাই। তারপর বরাদ্দ আসলে তারা পাবে।