বর্ষপঞ্জির হিসাবে শুরু হয়ে গেছে বর্ষাকাল। উজানের ঢলে হাওর অঞ্চল এখন পানিতে টইটম্বুর। যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। হাওরের প্রচলিত কথা ‘শুকনায় পাও, বর্ষায় নাও’।
অর্থাৎ শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে চলাফেরা করা গেলেও বর্ষাকালে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নৌকাই ভরসা। কাজেই হাওরাঞ্চলজুড়ে এখন নৌকার চাহিদা। বর্ষায় শুধু দৈনন্দিন চলাফেরা নয়, হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবিকার ক্ষেত্রেও অন্যতম প্রধান উপায় নৌকা। বর্ষায় মাছ ধরা ও গবাদি পশুর খাদ্য সংগ্রহসহ নানা কাজে নৌকার ব্যবহার করে থাকে এই অঞ্চলের মানুষ।
ভরা বর্ষায় জমে উঠেছে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের মধ্যনগর বাজারের কাচারিঘাটের শতবর্ষী নৌকার হাট। সপ্তাহের প্রতি শনিবার এ নৌকার হাট বসে। এখানে বিভিন্ন ধরনের নৌকা পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে খিলুয়া, চডানাও, খুশি, সরঙ্গা, চাচতলী ও বারকি।
এসবের মধ্যে হাতে বাওয়া নৌকা যেমন রয়েছে, তেমনি আছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা। ছোট নৌকা তিন থেকে ১০ হাজার টাকা, মাঝারি নৌকা ১২ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং বড় নৌকা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকা কেনাবেচা হয় মধ্যনগর বাজারের হাটে। প্রতি হাটবারে বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৩০০ নৌকা।
মধ্যনগরের নৌকার হাটে বেশির ভাগ বিক্রেতা পার্শ্ববর্তী টাঙ্গুয়ার হাওর পারের গ্রাম উত্তর নোয়াগাঁওয়ের কারিগররা।
পাশের তাহিরপুর উপজেলায় পড়েছে গ্রামটি। পার্শ্ববর্তী ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, কলমাকান্দা এলাকা থেকেও অনেকে নৌকা কেনাবেচার জন্য এ হাটে আসে।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের ধারণা, সম্ভবত ১৯২০ অথবা ১৯২২ সালের দিকে গৌরীপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় এই এলাকার মানুষের পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে মধ্যনগর বাজারে তিন একর জায়গাজুড়ে একটি পুকুর খনন করান। ওই পুকুরের মাটি যেখানে ফেলা হয় সেখানেই স্থাপিত হয় মধ্যনগর বাজার। পুকুর খোঁড়ার কাছাকাছি সময় থেকেই মধ্যনগর বাজারে এই নৌকার হাট বসতে থাকে। সে হিসাবে এ নৌকার হাটের বয়স ১০০ বছরের মতো।
হাটে নৌকা কিনতে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব তৈয়ব আলী বললেন, ‘আমি প্রতিবছর এ হাটে নৌকা কিনতে আসি। মাছ ধরার জন্য সাড়ে সাত হাজার টাকায় একটি নৌকা কিনেছি। নৌকার দাম নাগালের ভেতরেই আছে।’
তাহিরপুরের উত্তর নোয়াগাঁও থেকে নৌকা বিক্রি করতে আসা কয়েকজন কারিগর জানান, বর্ষা মৌসুম এলেই তাঁরা নৌকা তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। তাঁদের তৈরি করা বেশির ভাগ নৌকাই মাছ ধরার নৌকা।
স্থানীয় হাওর গবেষক ও লেখক সজল কান্তি সরকার বলেন, ‘মধ্যনগর বাজারের নৌকার হাটটি বেশ পুরনো। এ অঞ্চলের চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের নৌকা পাওয়া যায় এখানে।’