শাল্লায় স্কুল ফাঁকি দিয়ে সুদের ব্যবসায় প্রধান শিক্ষক

নিশিকান্ত সরকার, শাল্লা প্রতিনিধি
স্কুল ফাঁকি দিয়ে সুদের ব্যবসায় ব্যস্ত থাকেন শাল্লা উপজেলার ৩নং বাহাড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত উজান যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজিত বরণ তালুকদার। স্কুল ফান্ডে আসা বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর এসবের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অবিভাবকেরা। এসএমসি ও গ্রামবাসীর পক্ষে তাদের বেশ কয়েকজনের যৌথ স্বাক্ষরে অভিযোগটি করা হয়।
এর আগে মোটা অঙ্কের সুদ কেলেঙ্কারির লিখিত অভিযোগও পাওয়া গিয়েছিল অজিত বরণ তালুকদারের বিরুদ্ধে। এনিয়ে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। তার পরই তদন্তে নামে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তার সুদ কেলেঙ্কারির সংবাদগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় পুরো উপজেলা জোড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়! প্রশ্ন উঠেছে একজন সরকারি চাকরিজীবি হয়ে তিনি কিভাবে নিয়মবহির্ভূত ভাবে সুদের ব্যবসা করেন ? একজন স্কুল শিক্ষক হয়ে এত টাকাই বা সে কোথায় পেল ? এনিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হচ্ছে সারা উপজেলায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উজান যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে জরুরি ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসে। স্লিপ ফান্ডের জন্য আরো ২৫ হাজার ও প্রাক-প্রাথমিকের জন্য আরো ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। শিক্ষার্থী অভিভাবক ও কমিটির অভিযোগ ম্যানেজিং কমিটিকে না জানিয়ে অজিত বরণ তালুকদার তার ইচ্ছেমত নামমাত্র কাজ করে অধিকাংশ টাকাই সে আত্মসাৎ করে তার পকেটে ঢুকিয়েছে। বিদ্যালয়ে অধিকাংশ দিনই তিনি অনুপস্থিত থাকে। যদিও বা আসেন হাজিরা খাতায় হাজিরা দিয়েই দুপুর ১১/১২ টায় চলে যায়।
অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সুদ কেলেঙ্কারির যে অভিযোগটি করা হয়েছিল সেটা নিয়েও স্কুল কমিটির সদস্য, অবিভাবক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিব্রতকর অবস্থায় পরেছেন। ওই শিক্ষকও বিদ্যালয়ে অনিয়মিত যাওয়ায় স্কুলে পাঠদান, ফলাফল সহ সবকিছুতেই ব্যাঘাত ঘটছে। সেজন্য অজিত বরণ তালুকদারকে এই স্কুল থেকে অন্যত্র বদলি করার জন্য দাবি তুলেছেন কমিটির সদস্য সহ শিক্ষার্থী অভিভাবক।
শুধু তাই নয়, অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যালয়ের দায়-দায়িত্ব বাদ দিয়ে এসএসমসি কমিটির সদস্য ও গ্রামবাসীর মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করা সহ ফাটল ধরানোর কাজে লিপ্ত থাকেন তিনি। ওই শিক্ষক দ্বারা বিবাদ সৃষ্টির কারনে গ্রামবাসীর মধ্যে এর আগে একবার ঝামেলা হয়েছিল। বর্তমানেও ওই শিক্ষকের ইন্ধন ও বিবাদ সৃষ্টি চেষ্টার ফলে উজান যাত্রাপুর গ্রামের মানুষের মধ্যে দুটি দল সৃষ্টি হয়েছে এবং যেকোনো সময় যেকোনো কারনে ওই গ্রামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
এমতাবস্থায় ওই স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকেরা ওই দুর্নীতিবাজ, দাদন ব্যবসায়ি, ফাঁকিবাজ প্রধান শিক্ষক অজিত বরণ তালুকদারের অন্যত্র বদলী করা সহ লিখিত অভিযোগে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন।
এবিষয়ে উজান যাত্রাপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক অজিত বরন তালুকদারের মন্তব্য জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করে নাই।
এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুস সালাম জানান, অভিযোগ পেয়েছি এই প্রধান শিক্ষককে অতিদ্রুত উজান যাত্রাপুর স্কুল হতে বদলী ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহন লাল দাশ বলেন, আমি অভিযোগ পেয়ে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করে সিলেট বিভাগীয় অফিসে ডিডি স্যারের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। আপনি ডিডি স্যারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো: জালাল উদ্দীন বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যদি আমার কাছে অভিযোগ পাঠান তাহলে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।