গত ১১ দিন পূর্বের বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে আবারও সুনামগঞ্জে বন্যা দেখা দিয়েছে। আগের বন্যার নদ নদী ও হাওরে পানিতে ভরাট থাকায় পানি বাড়ায় বন্যা কবলিতদের মধ্যে উৎবেগ আর উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, মেঘালয়ের ভারী বর্ষণের সঙ্গে সুনামগঞ্জেও বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদ নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৬ জুলাই পর্যন্ত বন্যা হতে পারে। সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে,ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে জেলার নিন্মাঞ্চলে বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক,বসতবাড়ি,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল,কমিউনিটি ক্লিনিক। সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তাহিরপুর,বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দাগন। তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উত্তর আরপিন- নগর,সাহেব বাড়ী ঘাট,তেঘরিয়া,বড়পাড়া নদীর পাড়সহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাট। এ ছাড়া ছাতক,তাহিরপুর,দোয়ারাবাজার,মধ্যনগর বিশ্বম্ভরপুর,ধর্মপাশা,জগন্নাথপুর,শাল্লা,দিরাই সহ বিভিন্ন উপজেলার নিন্মাঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কয়েক লাখ মানুষকে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়,সুনামগঞ্জে গত ১৬ জুন বন্যা দেখা দিলে এক পর্যায়ে পুরো জেলা বন্যাকবলিত হয়ে প্লাবিত হয় জেলার ১ হাজার ১৮টি গ্রাম। আট লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। জেলার ৭০২ট আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেন ২৬ হাজার মানুষ। অসংখ্য ঘরবাড়ি,রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়। মানুষের বাড়িঘর,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে আশ্রয় নেয় প্রায় ২৬ হাজার পরিবার।
ব্যবসায়ী সাদেক আলী জানান,গত ২৩ জুনের পর থেকে সীমান্ত এলাকার নদ-নদী,হাওরের পানি কমতে শুরু করে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে বন্যা কবলিত মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ঘরে ফেরেন। আবার কেউ কেউ এখনও বাড়িতে পানি থাকায় ফিরতে পারেন নি। ক্ষতি গ্রস্থ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফেরার আগেই আবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে সুনামগঞ্জে। হুহু করে বাড়ছে হাওর এলাকায় পানি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে জানায়,মেঘালয়ে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেই সুনামগঞ্জে বন্যার শঙ্কা দেখা দেয়। এই পানি মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি থেকে সুনামগঞ্জ আসতে ৬-৮ঘন্টা সময় লাগে। মূলত উজানের ভারী বর্ষণ পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি করে। আর এতেই সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সুনামগঞ্জ পৌরশহরের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাকিয়া বেগম জানান তিনি ঈদের দিন থেকে পরিবার নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে এক সাপ্তাহ থেকে চারদিন হল এসেছেন। এসে কোনো রখমে ঘরে অবস্থান করলেও এখন আবারও পানি বাড়ছে। আগের বন্যাতেই কাচা ঘরবাড়ি ও জিনিষপত্র নষ্ট হয়েছে। এখন পানি ঢুকলেই আবারও ক্ষতির মুখে পরবো। পরিবার নিয়া এই পানির মাঝে বড় বিপদেই আছি। কবে যে আমাদের দূর্ভোগ শেষ হবে আল্লাহ ভাল জানেন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের বাসিন্দা মনোয়ার মিয়া বলেন,নদীর পাড়েই আমার বাড়ি। গত বন্যায় ঘরে পানি উঠায় অনেক ক্ষতি হয়েছ। গত তিন দিন ধরে আবারও পানি আসছে বাড়তেছে পানি। কি করে পরিবার নিয়ে চলি কোন পথ খোঁজ পাচ্ছি না।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান এরশাদ মিয়া জানান,উজানের ঢলের কারণে এলাকার অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাবার পাশা পাশি মানুষের বাড়ি ঘরেও পানি ঢুকেছে। চরম দুর্ভোগে আছে ক্ষতি গ্রস্থরা।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, উপজেলার সীমান্ত নদী দিয়ে এবারও প্রচুর পরিমাণে পাহাড়ি ঢলের পানি ভাটির দিকে নামছে। এ কারণে পানি বাড়ায় তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক,তাহিরপুর বাদাঘাট সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাগন মাঠে কাজ করছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান,বন্যা মোকাবেলার জন্য ৬৯৮ আশ্রয় কেন্দ্র খোলে দেয়া হয়েছে অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্র আশ্রয় নিয়েছেন। প্রতিটি উপজেলায় ১ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষের মধ্যে ত্রান বিতরণ করা হচ্ছে। আমিসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় নজরদারি রাখা হচ্ছে।