নানামুখী আন্দোলনে উত্তাল শাবিপ্রবি, অচল শিক্ষা-কার্যক্রম

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
সর্বজনীন পেনশন বাতিল ও শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আধাবেলা কর্মবিরতিতে অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে । একইসঙ্গে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও ছাত্র সমাবেশ কর্মসূচি পালন করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসজুড়ে র্যালি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এদিকে কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে শাবিপ্রবি মূল ফটকে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
গত ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ঘোষণা করে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এতে করে বন্ধ রয়েছে সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা। স্থগিত হয়েছে বিভিন্ন বিভাগে চলমান ফাইনাল পরীক্ষাও। এর আগে শিক্ষকদের ঘোষিত আধাবেলা এবং পূর্ণ কর্মবিরতিতে পরীক্ষা আওতামুক্ত থাকলেও চলমান সর্বাত্মক আন্দোলনে স্থগিত রয়েছে সব বিভাগের ক্লাস এবং পরীক্ষা কার্যক্রম। সারা দেশে শিক্ষকদের চলমান এ আন্দোলনের ফলে বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রয়েছে সেশনজটে পড়ার শঙ্কাও।
এদিকে কর্মকর্তা কর্মচারীরা বলছেন দাবি না মেনে নিলে শীঘ্রই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তারা।
অন্যদিকে কোটা বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ‘মেধা যার মেধা যার, চাকরি তার চাকরি তার; কোটা না মেধা, মেধা মেধা; সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে; ৭১’এর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই; সংবিধানের মূলকথা, সুযোগের সমতা; ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে; ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার; ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই; ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন; ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম; ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।
এসময় ছাত্র সমাবেশে শাবিপ্রবির রসায়ন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ গালিব বলেন, প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ যদি কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়, মেধাবী শিক্ষার্থীরা কি করবে? আজ আপিল বিভাগ সরকারি চাকরির কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় আপাতত বহাল রেখেছে। এমনকি পরবর্তী সিদ্ধান্ত কখন কখন দিবে, তারও সুনির্দিষ্ট ডেট দেয়নি।শিক্ষার্থীদের পক্ষে এমন অবহেলা এবং বৈষম্য মেনে নেওয়া সম্ভব না। তাই ২০১৮ সালে কোটা নিয়ে যে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল তা বহাল রাখতে হবে। যতক্ষণ না ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল থাকছে এবং কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে।
এদিকে সর্বজনীন পেনশন বাতিল নিয়ে আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের মধ্যে শাবিপ্রবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আহমদ মাহবুব ফেরদৌসী বলেন, এটি একটি বৈষম্যমূলক পেনশন ব্যবস্থা। দ্রুত সময়ে এ ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। না হয় আমাদের এ আন্দোলন চলমান থাকবে।
শাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের মেধা, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কর্মদক্ষতার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। এদতসত্ত্বেও শিক্ষকরা বিভিন্ন সময়ে নানা রকমের হয়রানি ও ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন। প্রত্যয় নামক সর্বজনীন পেনশন স্কিম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর চাপিয়ে দিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে।