বৃষ্টির অজুহাতে অস্থির কাঁচাবাজার

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
পণ্যের দাম বাড়াতে বিক্রেতাদের অজুহাতের তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে কয়েকদিন ধরে চলা বৃষ্টি। বাজারে এখন ৬০ টাকার নিচে সবজি নেই বললেই চলে। কিছু সবজির দাম তিন অঙ্কের ঘরও ছাড়িয়েছে।
মশলাতেও হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। প্রতিদিনের রান্নায় দরকারি পণ্য পেঁয়াজের কেজি ছাড়িয়েছে ১০০ টাকা। কাঁচামরিচের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেও মানভেদে ২৪০-২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, নিকেতন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে, আর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কারণে সবজির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বাজারে সব সবজির দাম বেড়েছে।
নিকেতন বাজারের বিক্রেতা হান্নান ব্যাপারী বলেন, সবজির একটা বড় অংশ আসে উত্তরাঞ্চল থেকে। এখন সেদিকে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়ে গেছে। সেজন্য পাইকারি দাম বেশি। তাই খুচরায়ও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, টমেটো ১৩০-১৪০, করলা ৮০, বরবটি ১২০, কাকরোল ৮০-১০০, পটল ও ঢ্যাঁড়স ৬০-৭০, ধুন্দল ও চিচিঙ্গা ৬০-৮০ টাকা, কাঁচা পেপে ৫০-৬০, শসা ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০-৯০ টাকা, লতি ১০০, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, মিষ্টি কুমড়া প্রতিটি ৫০-৬০, লাউ ৬০-১২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
এসব বাজারে লেবুর হালি ১০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
বাজারে লাল শাকের আঁটি ১৫ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মহাখালী কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, “বৃষ্টির কারণে সবজির যোগান কম। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। আমরা নিরুপায়। পাইকারি কেনা বেশি, তাই খুচরাও সেভাবে বিক্রি করতে হচ্ছে।”
বাজারে এখনো কমেনি আলুর দাম। হঠাৎ করে গত সপ্তাহে আলুর কেজি বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ সময়ে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হওয়া এই সবজির দাম বাড়ার পেছনে কোনো অজুহাত দেখাতে পারেননি বিক্রেতারা।
বাজারে অনেকটাই লাগামহীন পেঁয়াজ। সপ্তাহান্তে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকার বেশি বেড়েছে। এখন দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। এছাড়া দেশি হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে।
বিক্রেতাদের বৃষ্টির কারণে দাম বাড়ানোকে অজুহাত বলছেন ক্রেতারা। সবজি আর মশলার দাম নিয়েও হতাশা জানিয়েছেন তারা।
মহাখালী কাঁচা বাজারে সবজি কিনতে আসা গৃহিনী ঝর্ণা বেগম বলেন, “বাজার হয়ে গেছে মগের মুল্লুক। বিক্রেতারা যাই বলুক, গতকাল আমি যে সবজি কিনলাম ৫০ টাকায় সেটা এক রাতের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। এটা মেনে নেয়ার মতো না। সংসার চালাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে।”
একই বাজারে সবজি কিনতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকুরে আবুল হোসেন। তিনি বলেন, “আলুর মতো একটা জিনিসের কেজি ৬৫ টাকা। টমেটো ১৪০ টাকা চাচ্ছে। অথচ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে উৎপাদনকারীরা হয়ত বিক্রি করেছেন ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। বিক্রেতারা যখন যেভাবে পারে, দাম বাড়ায়। নিয়ন্ত্রণ করার তো কেউ নাই।”
নিকেতন বাজারে কথা হয় ক্রেতা দিনমজুর খালেদ হোসাইনের সঙ্গে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বাজারে ঢুকলে মেজাজ ঠিক থাকে না। মনে হয় যার যেইভাবে ভালো লাগে, সেইভাবেই দাম চায়। দিন আর চলে না, কোনোরকমে বাঁইচা আছি। এরা মাইরা ফেলতে চাইতেছে।”
সবজির দাম বাড়লেও স্থিতিশীল আছে ব্রয়লার মুরগি এবং মাছের দাম। কোরবানির পরপরই বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকা থেকে নেমে ১৮০ টাকায় চলে আসে। শুক্রবার বাজারে ব্রয়লার মুরগির ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এছাড়া সোনালি মুরগি ৩০০-৩১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর, সোনালি হাইব্রিড ২৯০, দেশি মুরগি ৬০০, লেয়ার (লাল) ৩৪০ এবং লেয়ার (সাদা) ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬৫০-৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংসের কেজি এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে বাড়া ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়, হাঁসের ডিমের ডজন ১৮০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মাছের দামও মোটামুটি স্থির রয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার টাকা, ৮০০ থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া শিংয়ের কেজি (আকৃতিভেদে) ৪০০-৬৫০ টাকা, রুই (আকৃতিভেদে) ২৮০-৩৫০ টাকা, মাগুর ৯০০-১০০০, মৃগেল ২৮০- ৩৭০, পাঙাশ ১৯০-২২০, চিংড়ি (আকৃতেভেদে) ৬৫০-৮৫০, বোয়াল ৫০০-৯০০, কাতল ৪০০-৬০০, পোয়া ৪৫০-৪৫০, পাবদা ৪০০-৫০০, তেলাপিয়া ২২০, কই ২২০-২৪০, মলা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বাতাসি টেংরা এক হাজার, টেংরা ৬০০-৮০০, কাঁচকি ৫০০-৬০০, পাঁচমিশালি ২২০, রূপচাঁদা ১২০০, বাইম ১২০০-১৫০০, কই মাছ ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।