সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা : জৈন্তাপুর

সিলেট শহর হতে ৪০ কি.মি. দূরে জৈন্তা-খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে জৈন্তাপুর উপজেলা অবস্থিত। জৈন্তাপুর উপজেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিনে কানাইঘাট উপজেলা ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে কানাইঘাট উপজেলা, পশ্চিমে গোয়াইনঘাট উপজেলা ও সিলেট সদর উপজেলা। উপজেলায় ইউনিয়নের সংখ্যা ৬টি। ইউনিয়নগুলো হলো- নিজপাট, জৈন্তাপুর, চারিকাটা, দরবস্ত, ফতেহপুর, চিকনাগুল। জৈন্তাপুর উপজেলার আয়তন ২৫৮.৬৯ বর্গ কি.মি। জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪৭০ জন। শিক্ষার হার ৩৫.১১%। এখানে রয়েছে শ্রীপুর পাথর কোয়ারি, লালাখাল চা বাগান, তামাবিল বন্দর। উপজেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। কৃষির সাথে জড়িত ৫৩.৮৩% জনগন। জৈন্তাপুর উপজেলার মূলত ধান, চা, আলু, তেজপাতা, পান ইত্যাদি উৎপন্ন হয়। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে কাঠাল, আনারস, বাদাম উৎপন্ন হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস, পাথর, চুনাপাথর জৈন্তাপুরে পাওয়া যায়। পাকা রাস্তার পরিমান ২২৪ কিলোমিটার। জৈন্তাপুর উপজেলার ৫টি কলেজ, ১৩টি মাধ্যমিক স্কুল, ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২৩ টি মাদ্রাসা রয়েছে। এলাকার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে হাস মুরগীর খামার এবং ডেইরী ফার্ম রয়েছে এবং আরও নতুন নতুন খামার, ডেইরী ফার্ম গড়ে তোলা সম্ভব। জৈন্তাপুরে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমানে ঘাস পাওয়া যায়। এখানে প্রচুর পরিমান খালি জায়গা রয়েছে এবং আবহাওয়া ভালো এবং মাটির উর্বরতা ভালো। গবাদীপশুর খাবার সহজেই উৎপাদন করা সম্ভব এবং বৃহৎ আকারের ডেইরী ফার্ম করা যেতে পারে। হরিপুরে সিরামিক তৈরীর উপযোগী মাটি রয়েছে। এ ধরনের মাটিকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে হরিপুরে সিরামিক ফ্যাক্টরী গড়ে তোলা সম্ভব হবে। জৈন্তাপুরের হরিপুর এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় পতিত জমি আছে এবং সে সকল এলাকায় মৎস্য খামার এবং হ্যাচারী করা সম্ভব। উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নে টিলা এবং উচুঁস্থান রয়েছে যেখানে রাবার বাগানের মাধ্যমে রাবার উৎপাদন সম্ভব। শ্রীপুর চা বাগান, রং পানি গ্রাম, মোকামবাড়ী গ্রাম, খাসিয়া পল্লী ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তাছাড়াও সিলেটের অন্যতম টুরিস্ট স্পট লালখালকে কেন্দ্র করে হোটেল, রিসোর্ট হতে পারে। জৈন্তাপুরের চিকনাগুলে ইকো ফ্রেন্ডলী ব্রিক উৎপাদন করা যেতে পারে। চিকনাগুল ও হরিপুর এলাকায় গ্যাসের ও তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে এবং সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মজুদ গ্যাস ও তেল আহরণ করা সম্ভব। হরিপুরের ও চিকনাগুলের গ্যাস আহরণ করা সম্ভব হলে গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরী করা যেতে পারে এবং জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা সম্ভব হতে পারে। তাছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় সোলার প্ল্যান্ট করা সম্ভব হতে পারে। জৈন্তাপুরের নিজপাট ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বালু পাওয়া যায়। এসকল বালু গ্লাস তৈরীর কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে গ্লাস ফ্যাক্টরী তৈরী করা এবং এর মাধ্যমে গ্লাস উৎপাদন করা সম্ভব। জৈন্তাপুরের বিস্কুট ও কেক তৈরীর ফ্যাক্টরী এবং মিষ্টির ও দই তৈরীর ফ্যাক্টরী করা সম্ভব। সারি নদী জৈন্তাপুরের প্রধান নদী। সারিঘাটের কাছে তরমুজের বাগান রয়েছে। মোট এলাকার প্রায় ১৫% টিলা অথবা পাহাড় বেষ্টিত এবং বাকী ৮৫% এলাকা সমতল ভূমি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত জৈন্তাপুর উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত এবং পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে। জৈন্তাপুর উপজেলার কিছু কিছু স্থানে রাস্তার অবস্থা ভালো নয়। শিক্ষার হার কম হওয়া এবং কাঁচামাল পরিবহন সমস্যা জৈন্তাপুর উপজেলার সমস্যা। জৈন্তাপুরের বিভিন্ন খামারে জনবলের স্বল্পতা দেখা যায়। জৈন্তাপুর উপজেলার জনগোষ্ঠীর মাঝে অনেক ক্ষেত্রে দারিদ্রতা পরিলক্ষিত হয়। এ উপজেলার প্রবাসীগণের মাঝে প্রায় ৯৫% মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন এবং ৫% প্রাবাসী ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, পর্তুগাল, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জৈন্তাপুরে ক্লিনিক এবং ডায়াগনষ্টিক সেন্টার করা সম্ভব।

সম্ভাব্য বিনিয়োগের খাত/সম্ভাব্য উৎপাদনঃ
[ডেইরী ফার্ম, হাঁস-মুরগীর খামার, মৎস্য খামার ও হ্যাচারী, সিরামিক ফ্যাক্টরী, পর্যটন খাত, রাবার উৎপাদন, ইট উৎপাদন, পাওয়ার ও সোলার প্ল্যান্ট, গ্লাস ফ্যাক্টরী, মিষ্টি, দই, কেক, বিস্কুট উৎপাদন, আলু, তেজপাতা, পান, কাঠাল, আনারস, বাদাম, তরমুজ চাষ/উৎপাদন। ক্ষেত্র বিশেষে ফিজিবিলিটি টেস্ট প্রয়োজন।]

ড. ফজলে এলাহী মোহাম্মদ ফয়সাল
অধ্যাপক,ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

চলবে—

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন