সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা: কানাইঘাট

ড. ফজলে এলাহী মোহাম্মদ ফয়সাল
সিলেট জেলার অন্তর্গত কানাইঘাট উপজেলা মূলত কৃষি নির্ভর। কানাইঘাট উপজেলার আয়তন ৩৯১.৭৯ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার এবং জন্যসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৫৫০ জন। কানাইঘাট উপজেলার উত্তরে জৈন্তাপুর উপজেলা ও ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে বিয়ানীবাজার ও জকিগঞ্জ, পূর্বে ভারতের আসাম, পশ্চিমে গোনাইঘাট উপজেলা, জৈন্তাপুর উপজেলা ও সিলেট সদর উপজেলা। কানাইঘাট উপজেলার শিক্ষার হার ২৯.৬২%। উপজেলায় ৩টি কলেজ, ১টি কারিগরী কলেজ, ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৪টি মাদ্রাসা ও ৪৯১ টি মসজিদ রয়েছে। পাথরই কানাইঘাটের একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ। জনগণের আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। কৃষির সাথে জড়িত রয়েছেন প্রায় ৪৮.০২% জনগন। কানাইঘাটে কুটির শিল্প, বেত শিল্প এবং মৃৎ শিল্পের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধান বাজার কানাইঘাট বাজার ও গাছবাড়ী বাজার। উপজেলার প্রধান ফলগুলো হলো কাঠাল, আনারস, কমলা, লেবু ও লটকন। কানাঘাইটের বিভিন্ন ইউনিয়নে ধান, চা, আলু, তেজপাতা, পান, সুপারি, শাক-সবজি উৎপন্ন হয়। বেশ কিছু সংখ্যক গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগীর খামার রয়েছে। দর্শনীয় স্থান গুলো হলো লোভাছড়া, পাঁচ পিরের মোকাম, আন্দুহ্রদ, কাঠালবাড়ী, চা-বাগান ইত্যাদি। প্রধান নদী সুরমা, লোভা, ধোনা। কানাইঘাটের সব ইউনিয়নেই ডেইরী ফার্ম হতে পারে। চাহিদা বেশী থাকা এবং দক্ষিণ বানিগ্রাম ইউনিয়ন ও ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নে নি¤œ ভূমি ও খালি জায়গা থাকায় সেখানে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর ঘাস জন্মে এবং ঘাসের উৎপাদন করা সম্ভব। তবে ডেইরী ফার্মের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব রয়েছে। রাজাগঞ্জ, ঝিঙ্গাবাড়ী, দক্ষিণ বানিগ্রামে মোরগের খাদ্য উৎপাদনসহ লাল মোরগের খামার দেয়া যেতে পারে। চাহিদা বেশী থাকার কারণে এবং লোকবল থাকার জন্য মেশিনের মাধ্যমে লাল মোরগের খামার দেয়া যেতে পারে। চাহিদা থাকার কারণে লাল মোরগের খামার লাভজনক হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কানাইঘাটের হাওর অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন পুকুর ও দীঘিতে মাছ চাষের মাধ্যমে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এ সকল মাছ প্রসেস করে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট হতে পারে।
কানাইঘাটের ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নে সোলার প্ল্যান্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। কানাইঘাটের গাছবাড়ী, রাজাগঞ্জ, থানা সদর, প্রভৃতি এলাকায় বিস্কুট, কেক, মিষ্টি, দই প্রভৃতি উৎপাদন করার কারখানা হতে পারে। লোভাছড়া, মূলাগুল প্রভৃতি এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারনে এখানে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানো সম্ভব। যথাযথ প্রচারের মাধ্যমে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে যোগাযোগ উন্নয়নের মাধ্যমে ছোট পরিসরে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট করার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। উপজেলা সদরে বেসরকারী উদ্যোগে ক্লিনিক, ডায়াগনস্টি সেন্টার, হাসপাতাল করা প্রয়োজন। শিক্ষাখাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে মানসম্পন্ন স্কুল, কলেজ করা যেতে পারে। কানাইঘাটের বিভিন্ন ইউনিয়নে কমলা, আনারস, লেবুর উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আগে লোভাছড়ায় পাথর উত্তোলন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। হাস-মুরগীর খামার এ অঞ্চলে লাভজনক হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে কানাইঘাটের কিছু কিছু স্থানে ইটের ভাটা দেয়া সম্ভব। কানাইঘাটের সব ইউনিয়নে আমবাগান, মাল্টা বাগান করার মাধ্যমে আম ও মাল্টার উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। উপজেলার বেশীর ভাগ জমিতে বছরে একবার আমন ধান উৎপন্ন হয়। তাবে দীঘিরপার, সাতবাগ ইউনিয়নে বছরে দুইবার আমন ও বোরো চাষ হয়ে থাকে। পূর্ব লক্ষীপ্রাসাদ ইউনিয়নে আনারস ও লেবুর চাষ হয়ে থাকে। কানাইঘাটে প্রবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধিপাবার ফলে এ উপজেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে জনগনের মাঝে শহরাঞ্চলে স্থানান্তরের হবার প্রবণতা দেখা যায়। বন্যা কানাইঘাটের একটি সমস্যা। অনুন্নত রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ স্বল্পতা, নি¤œ অঞ্চল, দরিদ্র জনগোষ্ঠী, সক্ষম উদ্যোগতার অভাব প্রভৃতি কারণে উপজেলায় বিনিয়োগ কম হয়। কানাইঘাটের প্রবাসীগণের মাঝে সৌদিআরব, কাতার, কুয়েত, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশসমূহে প্রায় ৯০% প্রবাসীগণ বসবাস করেন। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, ব্রুনাই, মালোয়েশিয়া, ফ্রান্স, পর্তুগাল প্রভৃতি দেশে প্রায় ১০% প্রবাসীগণ অবস্থান করছেন। জনগণের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কানাইঘাট অঞ্চলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
সম্ভাব্য বিনিয়োগের খাত/সম্ভাব্য উৎপাদনঃ
কুটির শিল্প, বেত নির্মিত দ্রব্য, ডেইরী ফার্ম, হাস-মুরগীর খামার (বিশেষত লাল মোরগের খামার), মৎস্য খামার, ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট, সোলার প্ল্যান্ট, পর্যটন শিল্প, মিষ্টি, দই, বিস্কুট, কেক উৎপাদন, ইট উৎপাদন, স্কুল ও কলেজ, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ক্ষেত্র বিশেষে ফিজিবিলিটি টেস্ট প্রয়োজন।
ড. ফজলে এলাহী মোহাম্মদ ফয়সাল
অধ্যাপক, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
চলবে—