সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা: গোলাপগঞ্জ
ড. ফজলে এলাহী মোহাম্মদ ফয়সাল
সিলেট জেলার অন্তর্গত গোলাপগঞ্জ উপজেলার আয়তন ২৭৮.৩৩ বর্গ কি.মি.। গোলাপগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিকভাবে একটি উন্নত উপজেলা। গোলাপগঞ্জে প্রতি গড়ে বর্গ কিলোমিটারে ১,১০০ জন অধিবাসী বসবাস করেন। এই উপজেলার উত্তরে সিলেট সদর উপজেলা, জৈন্তাপুর উপজেলা ও কানাইঘাট উপজেলা, দক্ষিণে ফেঞ্চুগঞ্জ ও বড়লেখা উপজেলা এবং পশ্চিমে সিলেট সদর উপজেলা। গোলাপগঞ্জে মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১১টি এবং পৌরসভা ১টি। শিক্ষার হার ৬৯%। উপজেলাটিতে পাকা রাস্তার পরিমান ২৮৬.৩৪ কিলোমিটার এবং আবাদি জমির পরিমান ১৭,৩৮৬ হেক্টর। গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৩টি কলেজ, ২২টি হাই স্কুল এবং কওমি মাদ্রাসা ৪৫টি রয়েছে। জনসংখ্যা প্রায় ৩লাখ ৩০ হাজার। গোলাপগঞ্জের দর্শনীয় স্থানগুলোর মাঝে লক্ষনাবন্ধ ইউনিয়নের আলভিনা গার্ডেন, কৈলাশ টিলা, ঢাকা দক্ষিণ উপজেলার চাঁন মিয়া আনারস বাগান, হেলালপুরের ড্রিমল্যান্ড পার্ক অন্যতম। গোলাপগঞ্জে ফুলবাড়ী ইউনিয়নের হাওর, বাঘার হাওর, আমুরার হাওর ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে বেশি মাত্রায় মাছ আহরণ সম্ভব এবং বিভিন্ন পুকুর এবং দীঘিতে মৎস্য খামার গড়ে তোলা সম্ভব। ভাদেশ^রে প্রচুর খাল-বিল, জলাশয় ও পুকুর আছে। এসকল মাছ প্রক্রিয়াজাত করার জন্য ফিশ প্রসেসিং প্ল্যন্ট তৈরী করা এবং এর মাধ্যমে মাছ বিদেশে রপ্তানী করা যেতে পারে। উপজেলার বিভিন্নস্থানে হ্যাচারী তৈরী করে মাছের পোনার উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ, আমুরা, লক্ষনাবন্দ প্রভৃতি ইউনিয়নের টিলাময় এলাকায় আগর গাছ চাযের মাধ্যমে আগর-আতর উৎপাদন করার যেতে পারে। আমুড়া ইউনিয়নে ইতিমধ্যে কাজু বাদাম, আনারস, কফি ইত্যাদির উৎপাদন হচ্ছে। এসকল উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব। আলভিনা গার্ডেন, রনকেলি, আমুরাতে টুরিস্ট স্পট করা সম্ভব এবং এ সকল স্থানে রিপোর্ট, হোটেল স্থাপন করা যেতে পারে। গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ী, ভাদেশ^র, আমুরা এলাকায় প্রচুর মৎস খামার রয়েছে এবং এর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা যেতে পারে। ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নে ও লক্ষনাবন্দ ইউনিয়নে আনারস বাগান করে স্থানীয় চাহিদা পূরণ হচ্ছে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। এলাকায় লেবু ও কমলার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সকল ফলের উপর নির্ভর করে ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নে ফ্রুটস প্রসেসিং প্ল্যান্ট হওয়া সম্ভব। গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় হ্যাচরী, মৎস্য খামার এবং হাস-মুরগীর খামার করার সুযোগ রযেছে। লক্ষনাবন্দ ও লক্ষীপাশা ইউনিয়নে প্রচুর পরিমান শিম উৎপাদন হচ্ছে এবং ইংল্যান্ডে রপ্তানী হয়। শিমের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব। কৃষকদের আর্থিক প্রনোদনা, বিনামূল্যে সার ও বীজ প্রদান করলে কৃষি খাতের উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে। ঘাসের প্রাচুর্যতা, ঘাস উৎপাদনের সম্ভাবনা ও প্রচুর খালি জমি থাকার ফলে গোলাপগঞ্জে ডেইরী ফার্ম দেয়া সম্ভব। এছাড়াও গোলাপগঞ্জে মিষ্টি, দই, বিস্কুট, কেক প্রভৃতি তৈরীর কারখানা গড়ে উঠতে পারে। ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নে ড্রাগন ফলের বাগান রয়েছে এবং এর উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব। প্রচুর অনাবাদী জায়গা থাকার ফলে বাঘা ইউনিয়নে সোলোর প্ল্যান্ট এবং পাওয়ার প্ল্যান্ট হতে পারে। গোলাপগঞ্জ পৌরসভার পাশ^বর্তী এলাকা অথবা হেতিমগঞ্জে ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্ক প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হলে পাওয়ার প্ল্যান্ট সহ অন্যান্য শিল্পকারখানা থানা গড়ে উঠা সম্ভব। গোলাপগঞ্জ পৌরসভা, ঢাকা-দক্ষিণ, ভাদেশ^র প্রভৃতি এলাকায় ক্লিনিক, হসপাতাল, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা গ্যাস ক্ষেত্রে আগে এল.পি.জি- উৎপন্ন হতো। বর্তমানে এল.পি.জি-এর উৎপাদন পুনরায় চালু করা প্রয়োজন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে এবং ৪ লাইনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হলে সিলেট থেকে গোলাপগঞ্জ যেতে সময় লাগবে মাত্র ১৫ মিনিট এবং এতে ব্যবসা-বানিজ্যে ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা, সংকীর্ণ সড়ক, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ইত্যাদির কারণে প্রবাসীগণ এবং দেশীয় বিনিয়োগকারীগণ গোলাপগঞ্জে বিনিয়োগের আগ্রহ হারাচ্ছেন। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, কর্মক্ষম জনবল, পর্যাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ ইত্যাদি কারণে গোলাপগঞ্জ উপজেলা ব্যবসা-বানিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য সম্ভাবনাময় উপজেলা। গোলাপগঞ্জে মানসম্পন্ন স্কুল, কলেজ, টেকনিক্যাল কলেজ গড়ে উঠতে পারে। উপজেলার প্রবাসীগণের মাঝে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আরিমাত, ওমান, কাতার, কুয়েত ইত্যাদি মধ্যপ্রাচ্যের দেশে অবস্থান করছেন প্রায় ৩০% প্রবাসী। ইংল্যান্ডে অবস্থান করছেন প্রায় ৩০% প্রবাসী, আমেরিকায় অবস্থান করছেন প্রায় ১৫% প্রবাসী এবং কানাডা, ইটালী, ফ্রান্স, ব্রাজিল, পর্তুগালসহ অন্যান্য দেশে অবস্থান করছেন প্রায় ২৫% প্রবাসী। সঠিক পরিকল্পনা ও এর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে গোলাপগঞ্জের প্রাবসীগণকে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলা সম্ভব হলে তা দেশের অর্থনীতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
সম্ভাব্য বিনিয়োগের খাত/সম্ভাব্য উৎপাদনঃ
[মৎস্য খামার ও হ্যাচারী, হাঁস-মুরগীর খামার, ডেইরী ফার্ম, ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট, ফ্রুটস প্রসেসিং প্ল্যান্ট, আগর-আতর শিল্প, ড্রাগন ফল, কাজু বাদাম, কফি, আনারস, শিম উৎপাদন, পর্যটন খাত, সোলার প্ল্যান্ট, ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এল.পি.জি. গ্যাস উৎপাদন। ক্ষেত্রে বিশেষে, ফিজিবিলিটি টেস্ট প্রয়োজন]
ড. ফজলে এলাহী মোহাম্মদ ফয়সাল
অধ্যাপক,ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
চলবে—