এমপি সুমনকে হুমকির তথ্যদাতা প্রতারক সুহাগ গ্রেপ্তার

নুর উদ্দিন সুমন, হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে হুমকির তথ্যদাতা সোহাগ ওরফে সোহেল মিয়াকে (২৮) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাতে সিলেট শহরের একটি হোটেল থেকে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মো: আক্তার হোসেনের তত্বাবধানে মাধবপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী এর নেতৃত্বে চুনারুঘাট থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের একটি টিম যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হিংগাজিয়া প্রকাশ মোবারকপুরের মন্তাজ মিয়ার ছেলে।
বুধবার (১০ জুলাই) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে সোহাগ মিয়া জানিয়েছেন যে, তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। ২০১১ সালে কাজের জন্য বিদেশ যান এবং ২০১৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। এরপর দালালের মাধ্যমে পর্তুগাল পাঠাবেন বলে তার এলাকার ১২ জনের কাছ থেকে ৮-১০ লাখ করে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে ভারতে পালিয়ে যান। পরে দেশে এসে টাকার অভাবে হ্যাকার হওয়ার চেষ্টা করেন সোহাগ। ইন্টারনেট হতে হ্যাকিংয়ের বিষয়ে ধারণা নিতে ডার্ক ওয়েবের সাথে পরিচয় হয় তার। এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ভারতীয় একটি গল্প পড়েন তিনি। যাতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে তার জীবনের হুমকি আছে মর্মে তথ্য দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করার বিষয়টি তার নজরে আসে। সেই এই গল্পের আলোকে এমপি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে কৌশল খাটিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।কিন্তু এমপি ও তার পিএসের কোনো ফোন নম্বর না থাকায় ওয়েবসাইট থেকে চুনারুঘাট থানার ওসির নম্বর সংগ্রহ করে হত্যার হুমকির মেসেজ পাঠান এবং এমপি ব্যারিস্টার সুমনের সাথে কথা বলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। পরে ওসির মাধ্যমে ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে জানান ৪-৫ জনের একটি দল তাকে হত্যা করার কিলিং মিশনে নেমেছে। তার প্রত্যাশা ছিল এমপি সুমন অথবা তার পিএস তার সাথে যোগাযোগ করে তথ্য নিতে আসবেন। তখন তিনি মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করবেন।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘কিন্তু এমপি সুমন বিষয়টি জানার পর ফেসবুক লাইভে এসে প্রতিকার চান এবং জিডি করেন। এতে করে তার নির্বাচনী এলাকায় শুরু হয় আন্দোলন। পরে সোহাগ মিয়া ভয় পেয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলে যান। সেখানে তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে বুঝতে পেরে সিলেটে চলে আসেন। পরে নবীগঞ্জের একটি মামলার সূত্র ধরে তার পাসপোর্ট পেয়ে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, এ ব্যাপারে চুনারুঘাট প্রতারণার মামলা করা হয়েছে এবং আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য উদঘাটন করা হবে। নবীগঞ্জের একটি প্রতারণার মামলায় সোহাগ মিয়াকে বুধবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। সে ওই মামলার পলাতক আসামি। মৌলভীবাজারেও তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, সোহাগ মিয়া একজন প্রতারক ও অনলাইন জুয়াড়ি। তার বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানা ও মৌলভীবাজারের রাজনগর থানায় প্রতারণার মামলা রয়েছে। তিনি দুটি বিবাহ করেছেন এবং তার একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। স্ত্রীদের সাথে তার পারিবারিক কলহ চলছে। তার মূল কাজ লোকদের বিদেশে পাঠানোর নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। এদিকে এই হুমকিকে কেন্দ্র করে দুই দিন আগে ব্যারিস্টার সুমনের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান নিয়োগ করে জেলা পুলিশ। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আপাতত গানম্যান থাকবে। পরে অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এমপি এবিষয়ে আপাতত তিনি কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছেননা,তবে তিনি তদন্ত সমাপ্ত হলে এবিষয়ে বিস্তারিত কথা বলবেন। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম, মাধবপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী, চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি হিল্লোল রায়, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ অজয় দেব, ডিবির অফিসার ইনচার্জ নুর হোসেন মামুন সহ অন্যান্যরা।
এরআগে গত ২৭ জুন হত্যার জন্য একটি টিম মাঠে নেমেছে’ জেনে ২৯ জুন রাতে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি জিডি করেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সুমন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, “২৭ জুন ঢাকায় অবস্থানকালে রাত আনুমানিক ২টার সময় চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমার হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে জানান যে, ‘আপনাকে হত্যার জন্য অজ্ঞাতনামা একটি শক্তিশালী মহল গত তিনদিন আগে চার-পাঁচজনের একটি টিম নিয়ে মাঠে নেমেছে। আপনি রাতে বাইরে বের হবেন না এবং সাবধানে থাকবেন।’ তখন আমি ওসির কাছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি ওই ব্যক্তির পরিচয় জানাতে অস্বীকার করেন এবং আমাকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেন। বিষয়টি জানার পরে আমি মারাত্মকভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। পরে ৩ জুলাই হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের এক অফিস আদেশে ব্যারিস্টার সুমনের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য গানম্যান নিয়োগের তথ্য জানানো হয়।
চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি হিল্লোল রায় জানান, এঘটনায় চুনারুঘাট থানায় প্রতারক সোহাগের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে।