মাত্র ১৭ বছর বয়সে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন টিলম্যান!
মায়ের তত্ত্বাবধানে থেকে ১০ বছর বাসায় পড়াশোনা করে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। বলছি যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে বসবাসকারী ডরোথি জিন টিলম্যানের কথা। যিনি ২০২৪ সালের ৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। শিকাগো শহরের এই কিশোরী মাত্র ১০ বছর বয়সে কলেজে ভর্তি হয়ে অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রি অর্জন করেন। ১২ বছর বয়সে ব্যাচেলর ডিগ্রি এবং মাত্র ১৪ বছর বয়সে এমএসসি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। সিদ্ধান্ত নেন অন্য বাচ্চাদের তার মতো একই ক্যারিয়ার বেছে নিতে সহায়তা করবেন। তাই প্রতিষ্ঠা করেন ডরোথি জিনিয়াস স্টেম লিডারশিপ ইনস্টিটিউট। পড়াশোনা, গবেষণা ও নিজের ইনস্টিটিউটের কাজ সামলে মাত্র ১৭ বছর বয়সে এখন তিনি ড. ডরোথি জিন টিলম্যান।
অ্যারিজোনায় সবচেয়ে কম বয়সে ‘ইন্টিগ্রেটেড বিহ্যাভিয়রাল হেলথের’ ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন ডরোথি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক লেসলি ম্যানসন। ডরোথির পিএইচডি ডিগ্রি সম্পর্কে ম্যানসন বলেন, ‘এটি একটি দারুণ উদযাপন। আমরা আশা করি, ডরোথি জিন অন্যান্য শিক্ষার্থীর জন্য অনুপ্রেরণা হবেন।’ এত কম বয়সে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকে একটি ‘বিরল এবং অভিনব’ ঘটনা হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন এই অধ্যাপক।
ডরোথি তার পড়াশোনায় অত্যন্ত মনোযোগী ছিলেন এবং উচ্চস্তরের পাঠ্যক্রম ও গবেষণার কাজে সবসময় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন। অল্প বয়সে এত বড় একাডেমিক সাফল্যের পেছনে মূল কারিগর ডরোথি জিন টিলম্যানের মা জিমালিটা টিলম্যান। তিনি মেয়েকে ১০ বছর পর্যন্ত বাসায় রেখে পড়াশোনা (হোম স্কুলিং) করিয়েছেন, যা তাকে অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে দ্রুতগতিতে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিয়েছে। ডরোথি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার অনুভূতি জানাতে গিয়ে লেখেন, ‘আমি খুশি যে আচরণগত স্বাস্থ্যশিক্ষার ওপর ডক্টরেট সম্পন্ন করতে পেরেছি। অনেক মানুষকে আমার ধন্যবাদ জানানোর আছে, আমাকে সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য। কিন্তু এই মুহূর্তে শুধু আমার ১ নম্বর চ্যাম্পিয়ন আমার মাকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’
যে বয়সে প্রায় সব শিক্ষার্থী মাধ্যমিকে পড়াশোনা করার প্রস্তুতি নেয়, সেই বয়সেই মেয়েকে তার মা ইলিনয়ের লেক কাউন্টির একটি কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। কলেজে তার মেজর সাবজেক্ট ছিল মনোবিজ্ঞান। ২০১৬ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সেই কলেজের শিক্ষা সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর ২০১৮ সালে নিউইয়র্কের অ্যাক্সেলসিওর কলেজ থেকে ‘ব্যাচেলরস অব হিউম্যানিটিজ’ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন ডরোথি। পরবর্তী দুই বছরে মেইন অঙ্গরাজ্যের ইউনিটি কলেজ থেকে তিনি তার ‘মাস্টার্স অব সায়েন্স’ ডিগ্রি লাভ করেন। ২০২১ সালে অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির বিহ্যাভিয়ারাল হেলথ ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে তার পিএইচডি আবেদন গ্রহণ করা হয়। ডরোথির মা জিমালিটা টিলম্যান বলেন, ‘ডরোথি যখন অনেক ছোট তখনই আমি খেয়াল করি সে গণিতে অনেক ভালো। ডরোথির বয়স যখন মাত্র তিন-চার বছর, আমাদের চাইল্ড কেয়ার প্রোভাইডার মিস মেরি প্রথমে বিষয়টি খেয়াল করেন যে, তখন থেকেই সে দুই অঙ্কবিশিষ্ট সংখ্যা নিয়ে কাজ করতে পারে। আমরা তার লেখাপড়ার প্রতি ভালোবাসা দেখে সত্যিই আশ্চর্য হয়ে যাই।’
ডরোথির এ সাফল্যের পেছনে আরেকজন মানুষের ভূমিকা অপরিসীম। তিনি হলেন তার ৭৭ বছর বয়সী নানি ডরোথি জিন রাইট টিলম্যান। যিনি একজন মহীয়সী নারী। তিনি খুব অল্প বয়সেই সিভিল রাইটস মুভমেন্টে যোগ দিয়েছিলেন এবং মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন। তিনি ১৯৮৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত শিকাগোর থার্ড ওয়ার্ডের অ্যালডারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং শিক্ষার সংস্কার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। ডরোথি জিন টিলম্যানের এই ঐতিহাসিক কৃতিত্ব যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো অঙ্গরাজ্যে ব্যাপক মনোযোগ এবং প্রশংসা অর্জন করেছে। তার প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি, উদ্ভাবনী ধারণা এবং নেতৃত্বের গুণাবলি অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তার এই কৃতিত্ব প্রমাণ করে যে, বয়স একাডেমিক সাফল্যের জন্য কোনো বাধা নয়। এগিয়ে যাওয়ার জন্য ডরোথি পাবলিক স্পিকিং এবং তার জিনিয়াস স্টেম লিডারশিপ ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন সুযোগ অন্বেষণ করার পরিকল্পনা করেছেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তার এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ভবিষ্যতে সীমাহীন সম্ভাবনার দরজা উন্মুক্ত হবে বলে আশা অনেকের। একজন হোমস্কুলড কিশোরী থেকে ১৭ বছর বয়সে ডক্টরাল গ্র্যাজুয়েট পর্যন্ত যাত্রা দৃঢ়সংকল্প, স্থিতিস্থাপকতা এবং একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্বের একটি অসাধারণ গল্প ডরোথি জিন টিলম্যান। তার এই ঐতিহাসিক কৃতিত্ব শুধু বাধাই ভেঙে দেয় না বরং বিশ্বব্যাপী তরুণ-তরুণীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবেও কাজ করে।