কারফিউ প্রত্যাহারসহ চার দাবি আন্দোলনকারীদের
অবিলম্বে কারফিউ তুলে দেওয়া, ইন্টারনেট পুরোপুরি চালু করাসহ জরুরি চার দফা দাবিতে সরকারকে দু’দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে তারা নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনের সমন্বয়ক সারজিস আলম।
অন্যদিকে, ৯ দফা দাবিতে বুধবার সারাদেশে গণসংযোগ এবং মুখে কালো কাপড় বেঁধে বাসাবাড়ি ও রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনের আরেক অংশ।
রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার, অপপ্রচার, কারফিউ এবং ডিজিটাল ক্র্যাকডাউনের মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টার পর সরকার কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন দিয়েছে। আমাদের সরকারবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, রাজাকারের সন্তানসহ নানা ট্যাগ দিয়ে আন্দোলন নস্যাৎ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালত শিক্ষার্থীদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। সে অনুযায়ী, সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়েছে। তবে কোটা ব্যবস্থার প্রধান স্টেকহোল্ডার শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে যারা কোটা পান, তারাও স্টেকহোল্ডার। এই স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা না বলে প্রজ্ঞাপন জারি গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সংলাপের মাধ্যমে কোটা সংস্কারের চূড়ান্ত সমাধান আমরা চাই। কোটা ব্যবস্থা সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। এতে প্রাসঙ্গিক অংশীজনের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। কোটার যে কোনো পরিবর্তন কমিশনের সুপারিশের মাধ্যমে হতে হবে। একই সঙ্গে কোটা সংস্কার নিয়ে আমাদের আরও বক্তব্য রয়েছে, যা আমরা সংলাপের মাধ্যমে সরকারের কাছে তুলে ধরতে চাই। তবে তার আগে সংলাপের যথাযথ পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
কর্মসূচি ঘোষণা করে সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ইন্টারনেট সচল করতে হবে, কারফিউ তুলে দিতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরিয়ে নিয়ে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করে ক্যাম্পাস খুলে দিতে হবে এবং আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই চারটি জরুরি দাবি দু্ই দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি করা হলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের দেওয়া আটটি দাবি বাস্তবায়নে কথা বলার পরিস্থিতি তৈরি হবে। আমরা ক্যাম্পাসে যাব কিনা এবং আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করব কিনা, তা নির্ভর করছে আমাদের এই জরুরি চারটি দাবি মেনে নিয়ে সরকার কতটুকু উপযোগী পরিবেশ তৈরি করছে, তার ওপর।
আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ অবিলম্বে ইন্টারনেট সংযোগ চালু করার দাবি জানিয়ে বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় তথ্যের বিভ্রাট ঘটছে। আমরা সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। দেখা গেছে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কাছে আমাদের দাবি পেশকে সংলাপ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এত মানুষের লাশের ওপর দিয়ে আমরা কখনোই সরকারের সঙ্গে সংলাপ চাইনি। হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে আন্দোলন শুরু করেছিলাম। আমরা চাই, সব শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে সেই লাইব্রেরির সামনে আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করব।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার, মোহনা, সহসমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম এবং সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের বাবা মো. বিল্লাল হোসেন।
ঢাবি প্রশাসনের ৫ উদ্যোগ
নীতিমালা অনুযায়ী, বৈধ শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ করাসহ পাঁচটি উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য উদ্যোগগুলো হলো– আন্দোলনকারী নিরপরাধ শিক্ষার্থী যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করা; জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান নিশ্চিত করা, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন, হলের কক্ষগুলো সংস্কার করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা।
মুখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান কর্মসূচি বুধবার
৯ দফা দাবিতে বুধবার দেশব্যাপী গণসংযোগ এবং মুখে কালো কাপড় বেঁধে বাসাবাড়ি ও রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশ। গতকাল বিকেলে এই অংশের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচি দেওয়া হয়। সংগঠনের ৫৬ জন সমন্বয়ক এই বিবৃতি দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বিবৃতিতে তাদের ৯ দফা দাবিও তুলে ধরা হয়।
নিখোঁজ সমন্বয়কদের মুক্তি দাবি ঢাবির ২২ শিক্ষকের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. রাশিদুল ইসলামসহ নিখোঁজ সব সমন্বয়কের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিভাগটির বর্তমান ও প্রাক্তন ২২ শিক্ষক। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এই দাবি জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকদের মধ্যে আছেন– অধ্যাপক আকমল হোসেন, রামজুল হক, এম শহীদুজ্জামান, সি আর আবরার, আশেকা ইরশাদ, অধ্যাপক এহসানুল হক, মোহাম্মদ তানজিমউদ্দিন খান, এএসএম আলী আশরাফ, রোজানা রশীদ, আবদুল মান্নান, নীলয় রঞ্জন বিশ্বাস, সহযোগী অধ্যাপক বুশরা হাসিনা চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক সৈয়দা আখতার, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, আনোয়ারুল আজীম, লামিয়া মোমেন, প্রভাষক সামিয়া জামান, তানভীর হাবিব, ইফফাত আরা এবং সাদ্দাম হোসেন।
সূত্র:সমকাল