নৈতিকতা জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ
মুফতি ইবরাহীম আল খলীল
নৈতিকতা মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চালচলন, ওঠাবসা, আচার-ব্যবহার, লেনদেন, সব কিছুই যখন প্রশংসনীয় ও গ্রহণযোগ্য হয়, তখন তাকে নৈতিক গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তি বলে। ন্যায়নীতি ও উত্তম চরিত্র ঈমানকে পরিপূর্ণ করে। চারিত্রিক সৌন্দর্য অর্জন না করে ইমানের সৌন্দর্য অর্জন করা সম্ভব নয় এবং নিজে যেমন হিদায়াতপ্রাপ্ত হওয়া সম্ভব নয়, তেমনি অন্যকেও হিদায়াতের দাওয়াত দেওয়া সম্ভব নয়।
এ কারণে মহান আল্লাহ তাঁর রাসুলকে সর্বোত্কৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী করে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম, আয়াত : ৪)
ইসলামে নীতি ও নৈতিকতা সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নীতিবান মানুষের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে বিশেষ পুরস্কার।
নৈতিক ও চারিত্রিক উত্কর্ষ অর্জনের মাধ্যমে মানুষ মহান আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হতে পারে। তাদের মহান আল্লাহ এতই ভালোবাসেন যে তাদের দিনের বেলায় রোজা ও রাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায়কারীদের সমপরিমাণ মর্যাদা দান করেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনের) সাওম পালনকারী ও (রাতের) তাহাজ্জুদ আদায়কারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৮)
মানুষের নৈতিকতা ও চরিত্রকে সুন্দর ও মার্জিত করার বিষয়টা ইসলাম যে কত গুরুত্ব দিয়েছে, তা বলে শেষ করা যাবে না।
ইসলাম ও নৈতিকতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ও অবিচ্ছেদ্য। ইসলাম থেকে নৈতিকতাকে আড়াল করা যায় না। ইসলামের মতে প্রথম নবী আদম (আ.) থেকে শুরু করে সব নবী-রাসুলই নৈতিকতার শিক্ষা প্রচার করেছেন। তাঁরা সবাই ছিলেন উন্নত চরিত্রের অধিকারী। পৃথিবীতে যত নবী-রাসুল এসেছেন, তাঁরা সবাই নিজ নিজ জাতির চরিত্র সংশোধন করেছেন।
তাঁদের নৈতিক চরিত্র শিক্ষা দিয়েছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের মর্যাদা ও মাপকাঠি হলো নৈতিক চরিত্র। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ, যার চরিত্র উত্তম।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
অপরদিকে হালাল উপায়ে উপার্জন করা ফরজ এবং হারাম, অনৈতিক ও অবৈধ উপায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বা উপার্জন করা হারাম। অবৈধ উপায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে যে অর্থসম্পদ হাসিল করা হয়, তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। তার দোয়াও কবুল হয় না। এমনকি এ অবৈধ সম্পদ দ্বারা কোনো নেক কাজ করলে তাও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। সর্বোপরি উপরোক্ত ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত থাকবে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলরা, তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার করো ও সত্কর্ম করো; তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৫১)
তিনি আরো ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনরা, আমি তোমাদের যে হালাল রিজিক দান করেছি তা থেকে আহার করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭২)
অনৈতিকতা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে, নৈতিকতার শিক্ষা সমাজে ব্যাপক করতে হবে। নৈতিকতার শিক্ষা মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত করতে হবে। এ জন্য সমাজের প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের মধ্যে তাকওয়া ও আল্লাহর ভয় জাগ্রত করতে হবে। জাগতিক শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। কারণ যার মধ্যে আল্লাহর ভয় নেই, তার মধ্যে নৈতিকতা নেই। আর যার মধ্যে নৈতিকতা নেই, সে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। কেননা নৈতিকতা হলো ব্যক্তির মৌলিক মানবীয় গুণ এবং জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। যা অর্জন করলে তার জীবন সুন্দর ও উন্নত হয়। এর মাধ্যমে সে অর্জন করে সম্মান ও মর্যাদা। ইসলামের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো মানুষকে নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া। লাগামহীন ও চরিত্রহীন মানুষ চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, তাদের হৃদয় আছে উপলব্ধি করে না, চোখ আছে দেখে না, কান আছে শোনে না, এরা হলো চতুষ্পদ জন্তুর মতো; বরং তার থেকেও নিকৃষ্ট।
আর এরাই হলো গাফিল।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৭৯)
মানবজীবনে নৈতিকতা ও সচ্চরিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। পার্থিব সুখ-শান্তি যেমন সচ্চরিত্রের ওপর নির্ভরশীল, তেমনই পারলৌকিক মুক্তিও এতে নিহিত। চরিত্রবান ব্যক্তি যেমন আল্লাহ ও রাসুলের পছন্দনীয়, তেমনই সমাজের সবাই তাকে ভালোবাসেন। সমাজকে সুন্দর ও আদর্শবান হিসেবে গড়ে তুলতে নৈতিকতা ও সচ্চরিত্রের বিকল্প নেই।
তাই আসুন, আমরা নৈতিকতাবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থাকি। অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন করা বন্ধ করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন
লেখক : শিক্ষক, মাদরাসা