ফুসফুসে ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়
ডা. নাজিরুম মুবিন
বিশ্বজুড়ে ক্যানসার আক্রান্তের হার বিবেচনায় ফুসফুস ক্যানসারের অবস্থান প্রথম সারিতে। আবার ক্যানসারজনিত মৃত্যুর প্রধানতম কারণও ফুসফুস ক্যানসার। অথচ বিগত শতাব্দীর শুরুর দিকে ফুসফুস ক্যানসার ছিল একটি বিরলতম রোগ। পরে সিগারেটের সহজলভ্যতা, জনপ্রিয়তার এবং পরিবেশদূষণ ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুসফুস ক্যানসার রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে।
কারণ : ফুসফুস ক্যানসারের প্রধানতম কারণ ধূমপান। যারা ধূমপায়ীর কাছাকাছি থেকে পরোক্ষভাবে ধূমপান করেন, তারাও ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। অনেকের ধারণা, ভেইপ বা ই-সিগারেট নিরাপদ। তবে গবেষণা বলছে, এগুলোর মধ্যেও ফরম্যাল্ডিহাইড ও অ্যাক্রোলিনের মতো ক্যানসার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। এছাড়া খনি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, ঢালাই শ্রমিক, জাহাজ ভাঙা শিল্পের শ্রমিকসহ বায়ুদূষণ হয়Ñ এমন পরিবেশে যারা দীর্ঘক্ষণ থাকেন, তাদের ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
লক্ষণ : দীর্ঘমেয়াদী কাশি যা চিকিৎসায় ভালো হচ্ছে না, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টকে ফুসফুস ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। এর পাশাপাশি সব ক্যানসারের ন্যায় এ ক্যানসারেও রক্তস্বল্পতা, ওজন হ্রাস ও অরুচির মতো উপসর্গ থাকে। রোগটি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পরলে মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, খিঁচুনি ও রোগী অসংলগ্ন কথা বার্তা বলতে পারেন। ক্যানসার কোষ হাড়ে বাসা বাঁধলে রোগী প্রচন্ড ব্যথার কথা বলতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে হাড় ভেঙে যেতে পারে। রোগটি লিভারে ছড়িয়ে পরলে ক্ষুধামন্দা, বমিভাব, পেটব্যথা, ত্বক ও চোখ হলুদাভ (জন্ডিস) হতে পারে।
রোগ নির্ণয় : উল্লিখিত উপসর্গগুলো নিয়ে কোনো রোগী এলে শুরতেই বুকের একটি এক্স-রে করা হয়। সেখানে টিউমারের উপস্থিতি থাকলে সিটিস্ক্যান করে তার আকার, অবস্থান ও বিস্তার সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা নেওয়া হয়। পরে একটি সুই দিয়ে টিউমার থেকে অল্প মাংস এনে মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করা হয়। এ প্রক্রিয়ার নাম বায়োপসি ও হিস্টোপ্যাথলজি। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি নামক পরীক্ষাও করা হয়। এ পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে ফুসফুস ক্যানসার আছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায় এবং একইসঙ্গে এটি কী ধরনের ফুসফুস ক্যানসার সেটাও জানা যায়।
চিকিৎসা : ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো মোটা দাগে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। সার্জারি, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার। ক্যানসারটি কোন স্টেজে আছে এবং চিকিৎসা গ্রহণে রোগীর শারীরিক সক্ষমতা কেমন, তার ওপর ভিত্তি করে কী কী চিকিৎসা লাগবে এবং তার ক্রম কেমন হবে, তা নির্ধারণ করা হয়। বেশিরভাগ রোগীকে একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়। তবে ইতিবাচক দিক হলোÑ ফুসফুস ক্যানসার নির্ণয় ও এর সব চিকিৎসা পদ্ধতি বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বিদ্যমান এবং সহজলভ্য। ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর ক্যানসার আবার ফিরে আসতে পারে। তাই রোগীকে নিয়মমাফিক ফলোআপে থাকতে হয়, যেন ক্যানসার ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তা শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করা যায়। ফুসফুস ক্যানসারের প্রকোপ কমাতে ধূমপান এবং পরিবেশদূষণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন।
লেখক : ক্যানসার বিশেষজ্ঞ