সহিংসতার বিরুদ্ধে তারকা-শিল্পীদের আহ্বান
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন পরবর্তী সময়ে হয়ে যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই আন্দোলন পরে রূপ নেয় অসহযোগ আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার গণপ্রতিরোধের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। তাঁর পদত্যাগে সাধারণ জনতার মাঝে শুরু হয় গণউল্লাস। সারা দেশে, বিজয় উল্লাস করতে দলে দলে নেমে আসে দেশের সব পেশার সাধারণ মানুষ। এমন উল্লাসের দিনেও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। অনেক নেতার বাসায় আগুন দেওয়াসহ ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতেও হামলার অভিযোগ এসেছে। এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন ঢাকাই শোবিজের অনেক তারকা। তারা সহিংসতা বন্ধ ও দেশের সব মানুষকে শান্ত থাকার জন্যও আহ্বান করেছেন।
ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে কথা বলেছিলেন অভিনেতা আবুল হায়াত। তাদের বিজয়ের পর এবার এই অভিনেতা বললেন, ‘অনেক দিন পর ছেলেমেয়েরা কাঁদাল। সবার সঙ্গে আনন্দে কাঁদলাম। কী এক আনন্দ, আমি আপ্লুত হয়ে গেছি, বারবার। মনে হলো, দ্বিতীয়বার স্বাধীন হলাম। দেশবাসীর জন্য এ বিরাট আনন্দের খবর। আবার বিষাদের ছায়াও ছিল মনজুড়ে। এই যে ছাত্রজনতা আন্দোলনে প্রাণ দিল, তাদের কথা প্রতি মুহূর্তে মনে পড়ছে। সফল এই দেশ গঠনের আন্দোলনে শিক্ষার্থী-জনতা যারা ছিল, সবাই আমাদের অহংকার। এই যে শত শত প্রাণের বিনিময়ে ২০২৪-এ আবার স্বাধীনতা পেলাম, এটা যেন আর নষ্ট না হয়। এবার যেন আমরা যুক্তিযুক্তভাবে সবকিছু ব্যবহার করতে পারি। কারণ, এর পেছনে আমাদের এবারও রক্ত ঝরাতে হয়েছে। আমরা আর কোনো নৃশংসতা চাই না। আমরা স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে চাই। আবার বলার স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, পড়ার স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতাকে কেউ যেন ভন্ডুল না করে। তাহলেই আমরা জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে পারব। স্বাধীন দেশের কাছে এটাই বড় চাওয়া। বেশ ভালো লাগছে, একটা জগদ্দল পাথর বুকের ওপর থেকে নেমে গেল।’
পরিচালক কাজী হায়াৎ দেশবাসীকে সব ধরনের সহিংসতা পরিহার করে ছাত্রদের সঙ্গে সুন্দর দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই ছাত্রদের পক্ষে ছিলেন অভিনেতা সোহেল রানা। তিনি নিজে মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কোটার বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্রদের পক্ষে কথা বলেছেন। এবার ছাত্রদের বিজয় ও দেশের চলমান এই পরিস্থিতি নিয়ে বললেন সোহেল রানা। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মুখে সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। ছাত্রদের রক্ত বৃথা যায়নি। শিক্ষার্থীদের রূপরেখা চূড়ান্ত হওয়ার পরই বিস্তারিত বলা যাবে। টুকটাক কিছু অপ্রীতিকর ঘটেছে– এটা স্বাভাবিক। যখন কোনো গণঅভ্যুত্থান হয় এসব ছোটখাটো ঘটনা ঘটেই। এ অবস্থা থাকবে না। একটি ঝড় উঠলে ঘরবাড়ি ঠিক করতে সময় লাগে। ৩০ দিনের ঝড় সেটা শেষ হলো মাত্র। সবাই আমরা শান্তির পক্ষে। আগামীতে আমাদের মিলেমিশে কাজ করতে হবে।
ছাত্রদের আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন বরেণ্য সংগীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ। অনলাইনে ছাত্রদের সাহস জোগানোর পাশাপাশি ছাত্রদের সঙ্গে মাঠে নেমেও ছাত্রদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন তিনি। প্রিন্স মাহমুদ এবার দেশবাসীকে স্থির থাকার আহ্বান জানালেন। বললেন, ‘ছাত্রদের আন্দোলনের এমন জয়ে পুরো দেশবাসী আনন্দিত। মনে রাখবেন এই আনন্দের দিনে কেউ কেউ ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে। তা ছাত্র সমাজ সজাগ হয়ে দমন করবেন। কোনোভাবেই যেনো ছাত্রদের এমন বিজয়ে কালিমা লেপন কেউ না করতে পারে। পুলিশের গায়ে হাত দেবেন না। পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে, সমগ্র জাতিকে বিপন্ন অবস্থায় ফেলে দেশ ছেড়ে পালালেন যিনি তার প্রতি ডিজিটাল ঘৃণা নিক্ষেপ করুন। যদি সবাই সহযোগিতা করি সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি, কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত না হই আগামীর পুলিশ হবে স্বাধীনতা পরবর্তী সবচেয়ে মানবিক পুলিশ। আসুন আমরা ধৈর্য ধরি, সংযমী হই, মানবিক হই।’
ছাত্রদের বিজয়ের এই দিনে ইত্যাদি-খ্যাত জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেত একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করে একটি সুন্দর বাংলাদেশ দেখার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই তরুণ প্রজন্মকে অভিনন্দন জানাই, যাদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের বিজয় হলো, তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং এই হত্যাকাণ্ডেরর সুষ্ঠু বিচার চাই। ’৫২, ’৬৯ ও ’৯০-এর মতো ’২৪ সালেও গণআন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল ছাত্ররা। কখনোই ছাত্রদের আন্দোলন পরাজিত হয়নি। এবারও ছাত্ররা সেটা প্রমাণ করে দেখিয়েছে। এ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেখতে চাই, যা হবে নিরপেক্ষ দুর্নীতিমুক্ত। যাদের মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ পাব।
ঢাকাই ছবির নায়কদের মধ্যে মাঠে গিয়ে সরাসরি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন সিয়াম আহমেদ। রাজপথে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িতে কণ্ঠে নিহত ছাত্রদের বিচারের দাবি জানিয়ে এসেছিলেন তিনি। সেই সিয়াম আহমেদ ছাত্রদের বিজয়ের পর দেশবাসীকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে সকল ধরনের সহিংসতা পরিবার করে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলেছেন।
এ ছাড়াও অভিনেত্রী জাকিয়া বারি মম ছাত্রদের এ বিজয়কে পুরো দেশের বিজয় বলেই অভিহিত করেছেন। সেই সঙ্গে আহ্বান জানিয়েছেন কেউ যেন তাদের এই বিজয়কে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে কলুষিত না করেন। অভিনেত্রী মেহজাবীনও একই রকমভাবে সহিংসতা বন্ধ করে দেশবাসীকে আন্দোলনের বিজয় পুরোপুরি উদযাপন করার আহ্বান জানিয়েছেন।