বেনামী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৫৪০ কোটি টাকা সরানোর চেষ্টা
দৈনিকসিলেটডেস্ক
ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখার মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকা সরানোর ব্যর্থ চেষ্টার পর এবার অন্য একটি বেনামী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৫৪০ কোটি টাকা সরানোর চেষ্টা করেছিল এস আলমের পিএস আকিজ উদ্দিন ও তার সুবিধাভোগীরা। তারা একটি বেনামী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আগ্রাবাদ শাখা থেকে খাতুনগঞ্জ শাখায় ৫৪০ কোটি টাকা স্থানান্তর করার চেষ্টা হয়েছিল। আর খাতুনগঞ্জ শাখার মাধ্যমেই এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে বেশির ভাগ টাকা পাচার করেছেন। খাতুনগঞ্জ শাখায় যে অ্যাকাউন্টে টাকা আনা হয় ওই অর্থ যাতে তুলে না নিতে পারে এ জন্য ওই অ্যাকাউন্টটি স্থগিত করে দিয়েছে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
ব্যাংকটির শুভাকাক্সক্ষী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খাতুনগঞ্জ ও আগ্রাবাদ শাখায় যারাই কর্মরত আছেন তাদের বেশির ভাগই এস আলম গ্রুপ ও তাদের পিএস আকিজ উদ্দিনের সুবিধাভোগী। এ কারণে খাতুনগঞ্জ শাখায় অবিলম্বে সব কর্মকর্তাদের বদলি করে ইসলামী ব্যাংকের চৌকস ও নির্মোহ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন।
এদিকে, এস আলম গ্রুপের যারা টাকা পাচার করতে সহযোগিতা করেছেন এমন নির্বাহী কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করার দাবি তুলেছেন ইসলামী ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে গতকাল ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। ইসলামী ব্যাংকে ত্রাস হিসেবে পরিচিত এস আলমের পিএস ও ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি আকিজ উদ্দিন ও মিফতা উদ্দিন গতকালও ইসলামী ব্যাংকে আসেননি। ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের মালিকানা এস আলম ও তার বেনামী প্রতিষ্ঠানের নামে হস্তান্তরের সহায়তাকারী ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানি সেক্রেটারি জেকিইএম হাবিবুল্লাহও গতকাল অফিস করেননি। তবে, ইসলামী ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন, বিতর্কিত কর্মকর্তারা আর ইসলামী ব্যাংকে আসবেন না। তারা পদত্যাগ করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
ইসলামী ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এস আলম ও আকিজউদ্দিনের নামে বেনামী কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেন টাকা সরাতে না পারে সে জন্য ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা, খাতুনগঞ্জ শাখা, রাজশাহী শাখাসহ প্রধান প্রধান শাখাগুলোর ব্যবস্থাপককে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
ব্যাংকটির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নানা উপায়ে বিভিন্ন সময় ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ ও তার পিএস আকিজ উদ্দিন। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে খুশি করতে দফায় দফায় সিএসআরের টাকা নগদ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ সুদে আমানত নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওই সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আগাম ঘুষ দেয়ার কথা কলে বড় অঙ্কের টাকা সরিয়েছে আকিজ উদ্দিন। এভাবে কী পরিমাণ টাকা সরানো হয়েছে তার সঠিক হিসেব বের করা প্রয়োজন। এ জন্য একটি নিরপেক্ষ তদন্ত চায় ইসলামী ব্যাংকে মনে প্রাণে ভালোবাসেন এমন কর্মকর্তারা। একই সাথে সিএসআরের টাকা ব্যয়ের হিসেবও তদন্ত করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন। আর এ কাজে সহযোগিতাকারী আকিজ উদ্দিন, মিফতা উদ্দিনসহ অন্য কর্মকর্তারা দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
সূত্র:নয়াদিগন্ত