মাকে পাকা দালান বানিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন কেড়ে নিলো একটি গুলি
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
দাদির সঙ্গে শেষবার যখন কথা হয়, তখন পোশাককর্মী নাজমুল জানিয়েছিলেন সামনে মাসে বেতন তুলেই বাড়িতে যাবেন। তখন বিয়ে করে দাদির নাতিবউ দেখার স্বপ্ন পূরণ করবেন। তবে দাদিকে দেওয়া সেই কথা রাখতে পারেননি নাজমুল। মাত্র একটি গুলি কেড়ে নিয়েছে তাঁর জীবন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট ঢাকার বাইপাইলে গুলিবিদ্ধ হন পোশাককর্মী নাজমুল ইসলাম। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ আগস্ট রাতে মারা যান এই যুবক। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে অকূলপাথারে পড়েছে নাজমুলের পরিবার।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা গোলেনুর বেওয়া। বৃদ্ধা দাদি রাহেনা বেওয়া নাজমুলের কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। নাজমুলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেন না তাঁরা।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নুরপুর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, এক বছর দুই মাস আগে মারা যান নাজমুলের রিকশাচালক বাবা হাইদুল মিয়া। এরপর সংসারের হাল ধরেন সদ্য কুড়ির ঘরে পা দেওয়া নাজমুল ইসলাম। এরপর দাদি আর মাকে গ্রামে রেখে ঢাকায় যান নাজমুল। তিন ভাই-বোনের মধ্যে নাজমুল ইসলাম ছিলেন সবার বড়। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে আগেই।
নাজমুলের ছোট বোন পোশাকশ্রমিক আয়েশা বেগম জানান, ঢাকার বাইপাইলে টুপি তৈরির একটি কারখানায় কাজ করতেন নাজমুল। ৪ আগস্ট ওই কারখানা বন্ধ থাকায় বিকেলে তিন বন্ধুর সঙ্গে নাজমুল বাইপাইলের রাস্তায় নামেন। ওই সময় ছাত্রদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলিবিদ্ধ হন নাজমুল ও তাঁর বন্ধু নাঈম মিয়া। কিছুক্ষণ পরেই মারা যান নাঈম। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নাজমুলকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
নাজমুলের ভগ্নিপতি আব্দুল মজিদ মিয়া জানান, পেটে গুলি আটকে ছিল নাজমুলের। তবে হাসপাতালে ভিড় থাকায় ১২ ঘণ্টা পর তাঁকে অপারেশন রুমে নেওয়া হয়। গুলি বের করা হলেও তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়নি। পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ৯ আগস্ট রাতে মারা যান তিনি।
টাকা ধার করে নাজমুলের মরদেহ বাড়িতে নেওয়া হয় বলে জানান প্রতিবেশী পারভিন বেগম। তিনি বলেন, নাজমুলরা অত্যন্ত অভাবী। ঢাকায় চাকরি করে যে টাকা উপার্জন করতেন নাজমুল সেটা দিয়েই চলত পরিবারটি।
আরেক প্রতিবেশী মফিজল হোসেন জানান, অত্যন্ত ভদ্র এবং পরিশ্রমী যুবক ছিলেন নাজমুল। অল্প বয়সেই ধরেছিলেন পরিবারের হাল। মাকে পাকা বাড়ি বানিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তবে একটি গুলি তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে দিলো না।
সাদুল্লাপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রাজু কামাল জানান, লোকমুখে নাজমুল ইসলামের মৃত্যুর বিষয়টি জেনেছেন। তবে দাপ্তরিকভাবে তাঁকে কোনো কিছু জানানো হয়নি।