সাবেক ৫ এমপিসহ সাড়ে ৬ হাজার আসামি করে মামলা
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময় হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় আরও পাঁচ জেলায় ৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক ৫ এমপিসহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৬৬০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তার মধ্যে ফেনীতে ৩৩৪, নাটোরে ৫৮, কক্সবাজারে ১৫০, চুয়াডাঙ্গায় ১৮ এবং সাভারে শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিরা জানান—
ফেনী: ফেনীর মহিপালে ছাত্র আন্দোলনে দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দুটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। গত শুক্রবার নিহত সরোয়ার জাহান মাসুদের মা বিবি কুলসুম ফেনী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। এতে ১৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরও ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
একই দিন রাতে নিহত ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণের দাদা মো. জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া একই থানায় একটি মামলা করেন। এতে ১০৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরও ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এ নিয়ে মোট ফেনী জেলায় পাঁচটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
মাসুদ দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর জয়লস্কর এলাকার মো. শাহজাহানের ছেলে। শ্রাবণ ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। ফেনী মডেল থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, পুলিশ মামলা দুটির তদন্ত শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ফেনীর মহিপাল এলাকায় আন্দোলনকারীরা ও আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষে সাতজন নিহতের খবর পাওয়া যায়। এ ছাড়া আহত হন আরও দেড় শতাধিক।
নাটোরে সাবেক দুই এমপিসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে গতকাল শনিবার দুপুরে সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলকে প্রধান আসামি করে সদর থানায় দুটি মামলা করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন ও জেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটি সদস্য সাইফুল ইসলাম আফতাব।
দেওয়ান শাহিনের মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে আফতাবের মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে শাহীন অভিযোগ করেন, গত বছরের ১৩ মার্চ দুপুরে নাটোর কোর্টে একটি মামলার হাজিরা শেষে সিংড়া যাওয়ার সময় সদর উপজেলার ফুলবাগান এলাকায় সড়ক ও জনপথ ভবনের সামনে সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের নির্দেশে আসামিরা তার মোটরসাইকেল থামিয়ে তার হাঁটুতে ৩ রাউন্ড গুলি করে ফেলে রেখে যায়।
অন্যদিকে আফতাব অভিযোগ করেন, গত বছরের ২৯ অক্টোবর নাটোর শহরের স্টেশন এলাকায় মসজিদে নামাজ পড়ে বাড়িতে ফেরার সময় এমপি শিমুলের নির্দেশে আসামিরা তার হাতের কনুইতে গুলি করে ফেলে রেখে যায়।
অন্যদিকে শুক্রবার রাতে নাটোর-৪ আসনের সাবেক এমপি ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীকে প্রধান আসামি করে বড়াইগ্রাম থানায় একটি মামলা করেন স্থানীয় জামায়াত নেতা নাসির উদ্দিন। এতে ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নাসির উদ্দিন মামলায় অভিযোগ করেন, গত ৫ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মালিকানাধীন বনপাড়া ল্যাবরেটরি কিন্ডারগার্টেনের সামনে তাদের তিনটি মোটরসাইকেল ও একটি ল্যাপটপ পুড়িয়ে দেয় আসামিরা। ওই সময় আসামিদের হামলায় তার ছেলে মুন্না রহমান ও বনপাড়া পৌর কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন মনির আহত হন।
ছাত্র আন্দোলনে একজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিনুল হক মার্শালসহ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশের উপপরিদর্শক সেলিম মিয়া এ মামলা করেন।
এতে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকিবুজ্জামান।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান সাদিদকে কুপিয়ে জখমের ৯ বছর পর চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার মধ্যরাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনকে প্রধান আসামি করে এ হত্যাচেষ্টা মামলা করেন হাবিবুর রহমান সাদিদ।
মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকসহ ৬ জনের নাম উল্লেখসহ ১০-১২ জনকে আজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা-পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন খবরের কাগজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী আস-সাবুরকে (১৬) গুলি করে হত্যার ঘটনায় ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সাবেক এমপি তৌহিদ জং মুরাদকসহ আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আশুলিয়া থানায় মামলাটি করেন আস-সাবুরের স্বজন সাহিদ হাসান ওরফে মিঠু।
আস-সাবুর নওগাঁর মহাদেবপুর থানার মহাদেবপুর গ্রামের নায়েদ ওরফে জাকিরের ছেলে। সে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের জামগড়ার শিমুলতলার এলাকায় পরিবারের সাথে ভাড়া থেকে জামগড়া শাহীন স্কুলে দশম দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করত।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে আস-সাবুর নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করার জন্য তার ভাড়া বাসা থেকে বাইপাইল এলাকায় যায়। পরে বেলা ২টার দিকে মামলার বাদী খবর পান তার তার ভাই আস-সাবুর মৃত অবস্থায় বাইপাইল মোড়ে পড়ে আছে। সুত্র: খবরের কাগজ