বিদেশ নাটকের শুটিংয়ে ঝুঁকছেন নাটক নির্মাতারা
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
বিদেশে নাটকের শুটিং নতুন কিছু নয়। প্রতিবছরই কম-বেশি নাটকের শুটিং হয় বিদেশে। তবে এবারের বিষয় আলাদা। জুলাই বিপ্লবের কারণে গত মাসে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন নির্মাতা-শিল্পী-কুশলীরা।
আগস্ট-সেপ্টেম্বরেও আছে শুটিং। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধ শত নাটক নির্মীয়মাণ। বিদেশে কেন শুটিং করতে হচ্ছে? খোঁজ নিয়ে লিখেছেন সুদীপ কুমার দীপ।
ব্যাংককে ২২ নাটক
মাবরুর রশীদ বান্নাহর নেতৃত্বে একটি শুটিংদল ব্যাংককে গিয়েছিল ২৫ জুলাই। সেই দলে ধীরে ধীরে যোগ দেন অভিনেতা তৌসিফ মাহবুব, ফারহান আহমেদ জোভান, ইরফান সাজ্জাদ, নিলয় আলমগীর, সাফা কবির, আইশা খান, সাদিয়া আয়মান, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। চিত্রগ্রাহক ছিলেন রাজু রাজ, মেহেদী রনি ও ফোরকান। বান্নাহর সঙ্গে পরে আরো যোগ দেন আরো তিন নির্মাতা। এর মধ্যে রয়েছেন শহীদ উন নবী ও হাসিব হোসেন রাখি।
১৬ আগস্ট পর্যন্ত এই চার নির্মাতা নির্মাণ করেছেন ২২টি একক নাটক। বান্নাহ একাই নির্মাণ করেছেন আটটি। ১ আগস্ট মুঠোফোনে বান্নাহ জানিয়েছিলেন শুটিংয়ের কথা। তবে গতকাল তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নাটকগুলো নিয়ে কথা বলতে চাননি। বলেন, ‘এখন নাটক-সিনেমা নিয়ে কথা বলতে চাই না।
শুটিং করেছি, সময়মতো মুক্তিও পাবে। আমাদের এখন দেশ গঠনে মনোযোগ দেওয়া উচিত। অন্তত দুই-চার মাস দেশ সংস্কারে সবার একসঙ্গে কাজ করা উচিত। আমি নাটকগুলোর শুটিং করেছিলাম আগে থেকে শিডিউল নেওয়া ছিল বলে। তবে এই মুহূর্তে দেশ নিয়েই ভাবতে চাই। ওখানে (ব্যাংকক) শুটিং করার সময়ও সারাক্ষণ দেশের প্রতি নজর ছিল। আমরা ইউনিটের কেউ ভালো ছিলাম না। ’
হাসিব হোসেন রাখি নির্মাণ করেছেন ছয়টি নাটক। তাঁর নাটকগুলোতে অভিনয় করেছেন নিলয় আলমগীর, জান্নাতুল সুমামইয়া হিমি, তৌসিফ মাহবুব ও সাদিয়া আয়মান। এর মধ্যে নিলয়-হিমির তিনটি নাটকের নাম চূড়ান্ত করেছেন রাখি, ‘গেস্ট ইন ব্যাংকক’, ‘হট্টোগোল’ ও ‘মিসেস ডিস্টার্ব অ্যাগেইন’। বাকি তিনটি নাটকের নাম চূড়ান্ত করবেন মুক্তি দেওয়ার আগে। নির্মাতা শহীদ উন নবী নির্মাণ করেছেন ছয়টি। অভিনয় করেছেন তৌসিফ মাহবুব, সাফা কবির, ফারহান আহমেদ জোভান ও আইশা খান। চারটি নাটকের নাম চূড়ান্ত করেছেন নবী। সেগুলো হলো ‘দেখা হবে’, ‘ফিরতি পথে’, ‘যদি কিন্তু তবু’, ‘হয়নি ফেরা’। বাকিগুলোর নাম পরে ঠিক করবেন।
কোরিয়ায় চলছে ৫নাটকের শুটিং
হাসান রেজাউলের নেতৃত্বে একটি দল এখন শুটিং করছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে আছেন অভিনেতা ইয়াশ রোহান ও তানিয়া বৃষ্টি। জানা গেছে, তাঁরা একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি ৫টি নাটকের শুটিংও করবেন। এর আগে কোনো নাটকের শুটিং দক্ষিণ কোরিয়ায় হয়নি—এমনটা দাবি করেছেন তানিয়া বৃষ্টি। দেশ ছাড়ার আগে তিনি বলেন, ‘দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হবে। আর কোনো বাংলাদেশের নাটকের টিম কোরিয়া শুটিং করেছে বলে জানা নেই। সুন্দর সুন্দর লোকেশনে আমরা শুটিং করব, যেটা নাটকের দর্শক আগে দেখেনি।’ গত সপ্তাহে ব্যাংকক হয়ে কোরিয়া গিয়েছে দলটি।
মালয়েশিয়ায় ১৫ নাটক
মালয়েশিয়া নাটক নির্মাণের উদ্দেশ্যে ২৬ আগস্ট যাবে আরেকটি দল। তিন পরিচালক মাইদুল রাকিব, শহীদ উন নবী ও হাসিব হোসেন রাখির সঙ্গে এই দলে থাকবেন অভিনয়শিল্পী নিলয় আলমগীর, তানিয়া বৃষ্টি, সামিরা খান মাহিসহ আরো কয়েকজন। মাইদুল রাকিব বলেন, ‘নাটকগুলো প্রযোজনা করবেন বশির ভাই [আলী বশির]। আমরা প্রত্যেকে পাঁচটি করে নাটক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি।’
সেপ্টেম্বরে আমেরিকায়
আগেও আমেরিকায় নাটক নির্মাণ করেছেন ওসমান মিরাজ। দেশটিতে বসবাস করেন তিনি। ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর আমন্ত্রণে দেশটিতে যাবেন ফারহান আহমেদ জোভান ও কেয়া পায়েল। এই জুটিকে নিয়ে আটটি নাটক নির্মাণ করবেন মিরাজ। সেখানে আরো কয়েকজন নির্মাতা রয়েছেন। তাঁরাও এই জুটিকে নিয়ে নাটক নির্মাণ করবেন, জানান মিরাজ। তিনি বলেন, ‘জোভান ও পায়েল তিন সপ্তাহ থাকবেন আমেরিকায়। পুরোটা সময় তাঁরা শুটিংয়ের মধ্যেই থাকবেন। সেভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।’
বিদেশে নির্মিত নাটক দর্শকপ্রিয় হয় না, তবু কেন বিদেশ
বিগত দিনে বিদেশের লোকেশনে প্রচুর একক নাটক এমনকি ধারাবাহিকও নির্মিত হয়েছে। তবে কোনোটিই পায়নি দর্শকপ্রিয়তা। তবু কেন নির্মাতা-প্রযোজকরা বিদেশমুখী হচ্ছেন? নির্মাতা মুহম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ বলেন, ‘অনেকের সঙ্গে আমিও একমত। বিদেশে নির্মিত নাটক দর্শক সেভাবে গ্রহণ করে না। এর কারণও আছে। যথাযথ পাণ্ডুলিপি বেছে নেন না নির্মাতারা। আবার একই লোকেশনে অল্প সময়ের মধ্যে শুটিং শেষ করতে হয়। তা ছাড়া লোকবল কম থাকায় চিত্রগ্রাহককেই লাইট-ক্যামেরা ঠিক করতে হয়। অভিনয়শিল্পীদের মেকআপ করতে হয় নিজেদেরই। টেকনোলজিরও ঘাটতি থাকে। সবার আগে চিন্তা করতে হয়, কত দ্রুত শুটিং শেষ করা যায়। কারণ এক দিন বেশি থাকলে তো খরচ বেড়ে যাবে! এতসব মেইনটেইন করতে গিয়ে নাটকের মান আর ধরে রাখা সম্ভব হয় না।’
তাহলে কেন দিন দিন বিদেশে শুটিংয়ের প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে? রাজ বলেন, ‘বিদেশে বেশ কিছু সুবিধাও পাওয়া যায়। যেমন দেশে অভিনয়শিল্পীদের স্পটে আসতে দেরি হয়। বিদেশে সেটা হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ সবাই এক হোটেলেই থাকেন। দেশে শুটিং করতে গেলে প্রায় ৫০ জনের ইউনিট থাকে, বিদেশে মাত্র চার-পাঁচজন। সত্যি বলতে, বিমান খরচ আর হোটেল খরচ বাদ দিলে দেশের তুলনায় অর্ধেক ব্যয়ে নাটক নির্মাণ করা যায়। এই সুবিধা নেওয়ার জন্যই বিদেশে শুটিং করেন প্রযোজক-পরিচালক।
বিদেশে শুটিংয়ের আরো কারণ
বিদেশে শুটিং করার আরো কিছু কারণ তুলে ধরেছেন নির্মাতা সকাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দেশে এখন উৎসব বলতে শুধু দুটি ঈদ। এই দুই ঈদ ঘিরে অভিনয়শিল্পীরা ছয় মাস ব্যস্ত থাকেন। বাকি ছয় মাস তাঁরা থাকেন রিল্যাক্স মুডে। খেয়াল করলে দেখবেন, এই সময় তাঁরা অনেকেই দেশের বাইরে ঘুরতে যান। প্রযোজক-পরিচালকরা এই সুযোগটাই কাজে লাগান। তাঁরা শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কে কোন দেশে ঘুরতে যেতে চান। সেটাকে কেন্দ্র করেই শুটিং প্ল্যান করেন। এতে করে রথ দেখাও হয়, আবার কলাবেচাও হয়। এ বছর দুই ঈদ চলে গেছে। এখন সবাই রিল্যাক্স মুডে আছেন। সেই কারণেই হয়তো বিদেশে এত শুটিং হচ্ছে। এটাকে আমি খারাপভাবে দেখি না। কাজ হচ্ছে তো, কনটেন্টও বাড়ছে।’