মহৎ কাজে তিন বাহিনীসহ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিস
দৈনিকসিলেটডেস্ক
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় চরম বিপর্যয়ে দেশের অন্তত ১৩টি জেলার মানুষ। এই সংকট মুহূর্তে বন্যাদুর্গত বিভিন্ন জেলায় তিন দিন ধরে উদ্ধারকাজসহ ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন তিন বাহিনীসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। তাঁদের পাশাপাশি রয়েছে স্থানীয় ভলান্টিয়ারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ব্যক্তি পর্যায়ের সহযোগিতাও।
তবে গতকাল শুক্রবার বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষকে উদ্ধার ও সার্বিক সহযোগিতায় এসব বাহিনীকে সর্বোচ্চ তৎপর দেখা গেছে।
দেশের এই দুর্যোগ মুহূর্তে অসহায় মানুষের পাশে বন্ু্লর মতো হাত বাড়িয়ে নিরলসভাবে তাদের কাজ করতে দেখা গেছে।
গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বন্যায় খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষাধিক মানুষ চরম বিপর্যয়ে পড়েছে। উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে প্রায় দুই হাজার বানভাসি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থানরত অসহায় মানুষকে রান্না করা খাবার সরবরাহের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুকনা খাবার, মোমবাতি, দিয়াশলাই, স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
আইএসপিআর জানায়, খাগড়াছড়ির চেঙ্গি, মাইনি ও কাসালং নদীর পানি বিপৎসীমার দুই থেকে ছয় ফুট অতিক্রম করায় আশপাশের এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। বিপন্ন মানুষের সাহায্যার্থে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে সেনাবাহিনী। গতকাল দিনভর উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে অন্তত দুই হাজার খাগড়াছড়িবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে এনেছে সেনাবাহিনী।
বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা দেওয়া অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
বন্যাদুর্গতদের জন্য এক দিনের বেতন দিল সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবি
গতকাল আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, সেনাবাহিনীর সব পদবির সেনা সদস্যদের এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতায় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে প্রদান করা হয়েছে। ফেনী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে চলমান সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে মানবতার সেবায় এই অর্থ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে নৌবাহিনী ও বিজিবি বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতায় তাদের এক দিনের বেতন দিয়েছে। অন্যদিকে বিমান ও নৌবাহিনী বন্যাদুর্গত এলাকায় নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
সব ধরনের সহায়তা নিয়ে পাশে আছে পুলিশ
বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য সব ধরনের সহায়তা নিয়ে পাশে আছে বাংলাদেশ পুলিশ।
প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ অথবা নিচে লিখিত বিভিন্ন জেলার নম্বরে যোগাযোগ করতে পুলিশ সদর দপ্তর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনুরোধ করেছে।
নম্বরগুলো হলো : জেলা পুলিশ নোয়াখালী +৮৮০১৩২০১১১৮৯৮, জেলা পুলিশ লক্ষ্মীপুর +৮৮০১৩২০১১২৮৯৮, জেলা পুলিশ ফেনী +৮৮০১৩২০১১৩৮৯৮, জেলা পুলিশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া +৮৮০১৩২০-১১৫৮৯৮, জেলা পুলিশ কুমিল্লা +৮৮০১৩২০-১১৪৮৯৮, জেলা পুলিশ চাঁদপুর +৮৮০১৩২০১১৬৮৯৮, জেলা পুলিশ রাঙামাটি+৮৮০১৩২০১০৯৮৯৮, জেলা পুলিশ বান্দরবান +৮৮০১৩২০১১০৮৯৮, জেলা পুলিশ খাগড়াছড়ি +৮৮০১৩২০১১০৩৯৮, জেলা পুলিশ চট্টগ্রাম +৮৮০১৩২০১০৮৩৯৮, জেলা পুলিশ কক্সবাজার +৮৮০১৩২০১০৯৩৯৮, জেলা পুলিশ মৌলভীবাজার +৮৮০১৩২০-১২০৬৯৮, জেলা পুলিশ হবিগঞ্জ +৮৮০ ১৩২০-১১৯৬৯৮।
বিজিবির উদ্ধার, খাবার বিতরণ ও চিকিৎসা তৎপরতা
রাঙামাটির মারিশ্যা ব্যাটালিয়নের (২৭ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, গতকাল ওই ব্যাটালিয়নের দায়িত্বাধীন এলাকায় ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে মুসলিম ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুসলিম ব্লক হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা এবং উপজেলা অ্যাডমিনিস্ট্রেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজে আশ্রয় নেওয়া বন্যাদুর্গত পরিবারের ৫২০ জন সদস্যের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া মারিশ্যা ব্যাটালিয়নের (২৭ বিজিবি) মেডিক্যাল অফিসার মেজর গাজী মো. হাসানের অধীনে মুসলিম ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৬ জন পুরুষ, ৩৩ জন মহিলা, ৪৫ শিশুসহ বন্যাদুর্গত পরিবারের মোট ১১৪ জন অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসাসেবা ও বিনা মূল্যে ওষুধসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে শ্রীমঙ্গল ব্যাটালিয়নের (৪৬ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সিকদার জানান, গতকাল শ্রীমঙ্গল ব্যাটালিয়নের (৪৬ বিজিবি) অধীন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মোকাবিল, কুরমা ও চাম্পাপাড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবির পক্ষে ৬০০টির বেশি পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবার, বিনা মূল্য চিকিৎসা ও ওষুধ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
গতকাল বিকেলে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, বন্যাদুর্গত সব এলাকায় ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি বিজিবি ছাত্র সমন্বয়কদের কাছে ত্রাণ হস্তান্তর করেছে।
হেলিকপ্টারে র্যাবের উদ্ধার তৎপরতা
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সর্বগ্রাসী রূপ দেখল ফেনী জেলাবাসী। ফেনী জেলায় চলমান ভয়াবহ বন্যায় আটকে পড়া বন্যাদুর্গতদের র্যাব হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার, চিকিৎসাসেবা ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে। কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে ডুবে গেছে ফেনী জেলার বেশির ভাগ এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
র্যাব সদর দপ্তর জানায়, চলমান বন্যা পরিস্থিতির শুরু থেকেই র্যাব ফোর্সেসের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ফেনী জেলার বিভিন্ন এলাকায় র্যাব ফোর্সেসের পক্ষ থেকে পাঁচ শতাধিক অসহায় মানুষের মধ্যে শুকনা খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে।
পাশাপাশি ফেনীর পরশুরাম সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে একজন গর্ভবতী নারী, দুটি নবজাতককে উদ্ধার করে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে সুস্থ করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ বন্যাদুর্গত এলাকা থেকে পানিবন্দিদের র্যাব উদ্ধার করে হেলিকপ্টারে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেছে।
বন্যাদুর্গতদের মানবিক সহায়তাসহ যেকোনো মানবিক প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট র্যাব কন্ট্রোলরুমের সঙ্গে (মোবাইল নম্বর : ০১৭৭৭৭১০৭৯৯) যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর ত্রাণ বিতরণ
বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন। গতকাল দুপুরে জেলা সদরের গঞ্জপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান এসব সামগ্রী বিতরণ করেন।
ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করেছে ৭৭৯ জনকে
দেশের বন্যাকবলিত এলাকা ও উদ্ধারকাজ পরিদর্শন করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। গতকাল সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী তিনি বন্যাকবলিত ফেনী ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখেন।
২১ আগস্ট থেকে ২৩ আগস্ট বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুর্গত এলাকার বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া ৭৭৯ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তর করেছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সূত্র:কালেরকন্ঠ