তারেক হত্যা মামলায় ৫ সাংবাদিককে আসামি: আদালতে নিষ্পত্তির আবেদন বাদীর
বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদফার সরকার পতনের দিনে বিয়ানীবাজার থানা প্রাঙ্গণে প্রকাশ্যে পুলিশের গুলিতে নিহত তারেক আহমদের মায়ের দায়ের করা ‘রহস্যজনক’ হত্যা মামলায় আসামী হলেন পাঁচ সাংবাদিকসহ আওয়ামী পরিবারের ৭৫ জন! এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীসহ উপজেলাজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে। সবার মধ্যে একই প্রশ্ন, পুলিশকে বাঁচাতে এ মামলার পেছনে কারা কলকাঠি নেড়েছেন। তবে, হত্যা মামলা দায়েরের দু’দিন পর গত বৃহস্পতিবার নিহতের মা ও মামলার বাদি ইনারুন নেছা সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতে মামলা নিষ্পত্তির আবেদন করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘মামলার আসামীরা আমার পূর্ব পরিচিত। তারা এ মামলার ঘটনার সাথে জড়িত নয়। একদল লোক আসিয়া মৃত ছেলের জন্য সাহায্য চাইয়া দরখাস্ত দেওয়ার নাম করিয়া দস্তখত নিয়া যান। পরে অহেতুক এই মামলা দায়ের করে। আমি এ মামলা পরিচালনা করিব না। সমূহ আসামীগণ আমার দ্বারা কোন আসামী নয়।’ মামলার বাদি হত্যা মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য মাননীয় আদালতের মর্জি কামনা করেন।
জানা যায়, গত ৫ এপ্রিল সরকার পতনের দিন বিভিন্ন সময়ে পৌরশহরে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর হাজার হাজার নেতাকর্মী দফায় দফায় আনন্দ মিছিল করেন। এতে বিএনপি ও জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার অফিস, দোকান ভাঙ্চুর, উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় ভাঙ্চুর, থানার অস্ত্র ও গুলি লুট এবং অগ্নিসংযোগ করে। বিকেলে জনতা থানা আক্রমণ করলে পুলিশ জনতাকে লক্ষ করে গুলি ছুঁড়ে। এ সময় পুলিশের গুলিতে স্থানীয় নিদনপুর গ্রামের তারেক আহমদসহ (২৪) তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এসব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ এবং মিডিয়ায় প্রচার হয়।
এদিকে, পুলিশের গুলিতে নিহত তারেক আহমদের মা বাদি হয়ে গত মঙ্গলবার পাঁচ সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদসহ ৭৫ জনকে আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, সদস্য সাবেক পৌর মেয়র ফারুকুল হক, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জামাল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল, দৈনিক সিলেটের ডাক এর স্টাফ রিপোর্টার ও সাপ্তাহিক বিয়ানীবাজার বার্তা পত্রিকার সম্পাদক ছাদেক আহমদ আজাদ, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল ওয়াদুদ, সজীব ভট্টাচার্য্য, মিসবাহ উদ্দিন ও মহসিন আহমদ রনিকে আসামী করা হয়। এছাড়া মামলার ৮ জন আসামী দীর্ঘদিন থেকে প্রবাসে রয়েছেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ দেবদুলাল ধর নিজেকে রক্ষা করতে বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েক নেতার সাহায্যে মিথ্যা এ মামলার ব্যবস্থা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ন্যাক্কারজনক এ মামলায় সাংবাদিকসহ আওয়ামী পরিবারের আসামীদের নাম প্রকাশ পেলে তাৎক্ষনিক বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হন। তারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গত বুধবার উপজেলা বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ফয়েজ আহমদ তার ব্যক্তি নামীয় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এমন কোন নোংরা রাজনীতি’র চর্চা করবেন না তাদের সাথে, যারা আপনার জানাজায় সামিল হবার সামর্থ রাখে।” এভাবে বিএনপি-ছাত্রদলের অনেকেই মিথ্যা মামলার বিপক্ষে ফেসুবেক স্ট্যাটাস দিলে তা ভাইরাল হয়।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ দেবদুলাল ধর এর অফিসিয়াল মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। এজন্য হত্যা মামলা বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।