নিরাপত্তার শঙ্কায় হল ছাড়ছেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীর একাংশ
শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
দেশের বিরূপ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তায় শঙ্কায় নিয়েও হলে থাকতে চান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। গত ২২ ও ২৩ আগস্ট বহিরাগত কিছু দুষ্কৃতকারীদের হল ছাড়ার হুমকি এবং হল সম্মুখে শোডাউন করায় হলের অভ্যন্তরে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে আছেন তারা।
এদিকে সেনাবাহিনীও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে অপারগ। কিন্তু হল ভিত্তিক ৫০ সদস্য বিশিষ্ট টিম তৈরি করে হলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে হলে থাকতে চান শিক্ষার্থীরা। নিজেরা নিজেদের নিরাপত্তার নিশ্চিয়তা ও হল নিরাপদ রাখতে চান তারা। তবে এতসব নিরাপত্তার শঙ্কার মধ্যে কোন রকম ঝুঁকি না নিয়ে হল ছাড়ছেন একাংশ শিক্ষার্থী।
শনিবার (২৪ আগস্ট) দিনব্যাপী বিভিন্ন সময়ে হলত্যাগ করতে দেখা যায় এসব শিক্ষার্থীদের। অন্যদিকে বাকি একাংশ নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরা নিশ্চিত করে হলে থাকতে চান বলে জানান তারা।
শনিবার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেন হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা। এরআগে হলত্যাগ নির্দেশের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
এসময় হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, “কিছু দুষ্কৃতিকারী গত পরশু (২২ আগস্ট) মধ্যরাতে ছেলেদের আবাসিক হলগুলোর সামনে এসে শোডাউন দিয়ে যায়। এসময় তারা শিক্ষার্থীদেরকে নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে পরেরদিন শুক্রবার (২৩ আগস্ট) জুমার আগে হল ছাড়ার হুমকি দিয়ে যায়। তখন সেনাবাহিনীর নিকট আমাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করলে তারা দীর্ঘ তিন ঘন্টা পর আসে। তখন তারা আমাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বাস দেন এবং হলেই থাকতে বলেন।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, কিন্তু তার পরেরদিন (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় ওইসব দুষ্কৃতিকারীরা ফের আমাদের হলের পাশের রাস্তায় মিছিল ও শোডাউন দিয়ে যায়। এতে আমরা নিরাপত্তা সংকটে পড়ি। তখন সেনাবাহিনীকে কল দিলে তারা দীর্ঘ ৪ ঘন্টা পর আসে। এমনকি তারা আমাদেরকে হল থেকে নেমে যেতে বলে।
সমাবেশে হলের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, শিক্ষক ও সেনাবাহিনী আমাদের নিরাপত্তা দিতে রাজি হয়নি। হলে কেউ ছাত্রলীগের ক্যাডার না। তবুও কেউ যদি এখনো মনে করেন এরকম কেউ হলে আছে বলে প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে আমরা তাদেরকে গণপিটুনি দিয়ে হল থেকে বের করে দিব। এখন থেকে কেউ যদি হলে আক্রমণ করতে আসে এবং হল দখল করতে চায়; আমরা তাদেরকে নিজ হাতে প্রতিহত করব। আমাদের হাতই আমাদের অস্ত্র।
তারা আরও বলেন, আমরা হলের শিক্ষার্থীরা হলেই থাকব এবং নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। একইসঙ্গে হলের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করব।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক ভিডিও বার্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন , আমাদের পক্ষ থেকে হল ছাড়ার বা হলে থাকার বিষয়ে কোন ধরনের মন্তব্য করা হয়নি। বরং গতকাল হলের কিছু শিক্ষার্থী আমাদের ফোন করে বলে তারা অনিরাপদে আছে ও আগামীকাল হল ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু তারা হল ছেড়ে চলে যাওয়ার পর যেন কেউ হল দখল করতে না পারে, সেজন্য আমরা যেন সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেই; যাতে কেউ দখল করতে আসলেই সেনাবাহিনী যেন তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। আমরা কিন্তু এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলাম। কিন্তু আমরা জানি কেন এটা নিয়ে বিতর্ক করা হচ্ছে; যে সমন্বয়ক টিম থেকে বলা হয়েছে হল ছেড়ে দেওয়ার জন্য। আমরা শুধু বলেছি যে, হল ছেড়ে দেওয়া উত্তম এবং সেটাও এই প্রেক্ষিতে বলেছি, যারা বলছিল ভাই আমরা হল ছেড়ে দিতে চায়, যেটা অনেকেই জানে না। এটা জানানোর জন্য তারা বলে। তিনি আরও বলেন, হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই থাকবে। আর কোন দখল-দারিত্ব চলবে না।
এদিকে হলে নিরাপত্তার বিষয় জোরদার করতে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করছে হলের সাধারণ ছাত্ররা। ওইখান থেকে বলা হয়, তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্ণেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানাবে যে, তারা আসবে কি আসবে না। আসলে, তাদের সঙ্গে হলের শিক্ষার্থী বসতে চান এবং হল নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা করতে চান বলে জানান হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।