আনসার বিদ্রোহের মূল নায়ক প্রকাশ্যে
দৈনিকসিলেটডেস্ক
রাজধানীর সচিবালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনরত আনসার সদস্যদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন।
রবিবার রাত ৯টার দিকে সচিবালয়ের সামনে আনসার-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এদিকে এ ঘটনায় সচিবালয় ও আশপাশের এলাকা থেকে দুই নারী সদস্যসহ প্রায় চার শতাধিক আনসার সদস্যকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে দেশের মানুষ যখন বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছেন ঠিক তখন হঠাৎ করেই কেন আনসার সদস্যরা আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য শুরু করেছেন!
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষ নিজেদের মত প্রকাশ করছেন। জাতির ক্রান্তি লগ্নে এ বাহিনীর আচরণে ক্ষুব্ধ সবাই। অনেকেই আনসার বাহিনীকে বিলুপ্তির দাবিও জানিয়েছেন।
আন্দোলনকারী আনসার সদস্যদের সঙ্গে ব্যাটালিয়ন আনসারের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনকারী অনেকেই আনসার সদস্য নয়; তারা বহিরাগত। তারা আনসারের পোশাক নিয়ে আন্দোলনে আসেন অন্য উদ্দেশ্যে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘শকুনদের বলে দিতে চাই- আজকের পর থেকে সচিবালয়ের আশপাশে অবস্থান করলে ছাত্র-জনতা দেখে নেবে।’
তিনি বলেন, ‘৩৬ দিনের গণঅভ্যুত্থানে আমরা সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কোনো কর্মসূচি দেইনি। কারণ, এখান থেকে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। গণঅভ্যুত্থানের কয়েকদিন যেতে না যেতে অধিকার আদায়ের নামে যারা ভণ্ডামি করে সচিবালয় ব্লকেড করে তারা স্বৈরাচারের দালাল। আমাদের ভাইদের ওপর হামলাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ছি না। শকুনদের সাবধান করে দিতে চাই। আমার ভাইয়ের দিকে হাত বাড়ালে আর অস্তিত্ব থাকবে না।’
ছাত্র-জনতার উদ্দেশে এই সমন্বয়ক বলেন, ‘আপনাদের একটি কথা বলতে চাই- শকুনেরা হারিয়ে যায়নি। যেকোনো সময় শকুনদের উৎপাত দেখলে প্রতিহত করতে হবে।’
আনসার সদস্যদের সচিবালয় অবরোধ করার ঘটনাকে ‘আনসার ক্যু’ হিসেবে উল্লেখ করে আগামী দিনে কোনো ধরনের ক্যুর (অভ্যুত্থান) চেষ্টা হলে ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ক্রীড়া উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘কোনো ষড়যন্ত্রই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে যথেষ্ট হবে না। জুডিশিয়াল ক্যু, পথভ্রষ্ট আনসার ক্যুর উদাহরণের পরেও যদি সাবধান না হোন তবে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হাজার হাজার মানুষের প্রতিক্রিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদের মধ্যে একজন লিখেছেন, ‘এদেরকে দিয়ে পাল্টা অভ্যুত্থানের অপচেষ্টা চালানো হয়। এই কুলাঙ্গারদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করার দাবি জানাই। তাদের মদতদাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নেওয়া হোক।’
এদিকে, নতুন করে আনসার বিদ্রোহের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি পোস্ট ঘিরে রহস্য দেখা দিয়েছে।
শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর টানা কয়েক দিন দফায় দফায় ভিডিও প্রকাশ করে জয় তার ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। সে সময় ভিডিওর মাধ্যমে তিনি এক মুখে নানান কথা বলে সমালোচনার মধ্যে পড়েন। বিশেষ করে দেশের বাইরে থেকে বিদেশি কিছু সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তার সাক্ষাৎকার ছিল চোখে পড়ার মত। বোঝাই গেছে যে, মা শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি কোনভাবেই তিনি মেনে নিতে পারছেন না।
সব শেষ ভারতের একটি গণমাধ্যমে ভুল হিন্দি বলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হন জয়। তারপর থেকে অনেক দিন নিরবই ছিলেন তিনি। দেশে ভয়াবহ বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলেও কোন কথাই তাকে বলতে দেখা যায়নি। কিন্তু গতকাল আনসার বিদ্রোহের পর আবারও ফেসবুকে সরব হলেন হাসিনা পুত্র।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনরত আনসার সদস্যদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা পর জয় নিজের ফেসবুকে দেশের একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ আনসার আন্দোলনকারীদের লাঠি দিয়ে হামলা চালিয়েছে ছাত্র আন্দোলনকারীরা।’
পোস্ট টি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নেটিজেনদের তোপের মুখে পড়েন জয়। কেউ লিখেছেন- ‘তোমার এই পোস্ট দেখে কারও আর বুঝতে বাকি নেই যে তুমিই প্রধান হিরো।’
কেউ আবার লিখেছেন, ‘তারা দাবি নিয়ে আসছে সেটার পক্ষে ছিলাম। কিন্তু কাপড় খুলে পালাচ্ছে তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’
একজন লিখেছেন, ‘জয় ভাই বন্যা নিয়ে তো আপনার কোন পোস্ট দেখলাম না।’
এদিক আজ সোমবার সকালে জয় আবারও একটি পোস্ট দিয়েছেন। যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সচিবালয় ঘিরে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করার জন্য আমাদের বুদ্ধিজীবিরা আমাদের আল সরকারের সমালোচনা করেছেন। অথচ দুই সপ্তাহের মধ্যে এই অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনকে সেখানে সব সমাবেশ নিষিদ্ধ করতে হয়েছে। দায়িত্বহীনতা এবং সমালোচনা করা সহজ। ক্ষমতায় থাকা আর শাসন করাটা আলাদা ব্যাপার।’
প্রসঙ্গত, সচিবালয় এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বাসভবনের আশপাশে সব ধরনের গণজমায়েত, সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
রবিবার দিবাগত রাতে ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান স্বাক্ষরিত এক গণ-বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সূত্র:আমাদেরসময়