প্রাকৃতিক দুর্যোগে পশু-পাখির সুরক্ষায় করণীয়
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
অতর্কিত বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ। ঘরে ঘরে ঢুকেছে পানি। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে মানুষ। হাতে হাত রেখে গোটা বাংলাদেশ একে অন্যের পাশে দাঁড়াচ্ছে।
এটা আশা-জাগানিয়া খবর। কিন্তু বন্যাকবলিত বিস্তৃত এলাকায় থাকা পশু-পাখি ও জীববৈচিত্র্য সম্পর্কেও আমাদের ভাবতে হবে। এগুলোরও আছে বাঁচার অধিকার এবং তা আমাদের প্রয়োজনেই। শান্তির ধর্ম ইসলামেও এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
পশু-পাখির অধিকার রক্ষায় ইসলাম নির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। প্রাণিকুলকে পৃথক জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিয়ে কোরআন বলছে, ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল যত প্রাণী আছে আর যত পাখি দুই ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, তারা সবাই তোমাদের মতো একেক জাতি…’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৩৮)
পবিত্র কোরআনে বিক্ষিপ্তভাবে অসংখ্য আয়াতে প্রাণিজগতের প্রসঙ্গ এসেছে। এর বাইরেও পৃথকভাবে বিভিন্ন প্রাণীর নামে অনেক সুরার নামকরণ করা হয়েছে। যেমন—সুরা বাকারা (গাভি), সুরা আনআম (উট, গরু, বকরি), সুরা নাহল (মৌমাছি), সুরা নামল (পিপীলিকা), সুরা আনকাবুত (মাকড়সা), সুরা ফিল (হাতি) ইত্যাদি।
এসব নামকরণ থেকে প্রাণিজগতের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট ফুটে ওঠে।
পশু-পাখির প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি খাবারদাবার ও প্রয়োজনে ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম এগুলোকে প্রকৃতি ও পৃথিবীর সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কোরআনের বক্তব্য দেখুন : ‘প্রাণিকুল সৃষ্টির (অন্যতম) কারণ হলো, এগুলোতে তোমরা আরোহণ করে থাকো আর এগুলো সৌন্দর্যের প্রতীক।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৮) ইসলাম ধর্ম মতে, পশু-পাখির প্রতি নম্রতা প্রদর্শন ইবাদতের পর্যায়ভুক্ত।
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একবার এক পিপাসাকাতর কুকুর কূপের পাশে ঘোরাঘুরি করছিল। পিপাসায় তার প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ বনি ইসরাঈলের এক ব্যভিচারী নারী তা দেখতে পায়। সে নিজের পায়ের মোজা খুলে কুকুরটিকে পানি পান করায়। এ কারণে তার অতীত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৬৭)
হাদিসের ভাষ্য মতে, পশু-পাখিকে কষ্ট দেওয়া গুনাহের কাজ। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একজন নারী একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল। সে তাকে খাবার দিত না আবার ভূখণ্ডে বিচরণ করে খাবার সংগ্রহের সুযোগও দিত না। এ কারণে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩১৮)
গবাদি পশুর মধ্যে যেন রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে না পড়ে এ জন্য সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অসুস্থ পশুকে যেন সুস্থ পশুর মধ্যে নিয়ে যাওয়া না হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭৭১)
পশু-পাখির ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করতে হবে। সাহাল ইবনে হানজালিয়্যা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন একটি উটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যেটির পেট পিঠের সঙ্গে লেগে গেছে। তিনি বলেন, ‘তোমরা এসব বোবা চতুষ্পদ প্রাণীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কোরো। তোমরা তাতে আরোহণ করলে সুন্দরভাবে কোরো এবং তা আহার করলেও ভালোভাবে কোরো।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৪৮)
পশু-পাখি খাঁচায় বন্দি রেখে প্রতিপালন করা জায়েজ, যদি তাকে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য-পানি দেওয়া হয় এবং যথাযথভাবে যত্ন নেওয়া হয়। হাদিসে এসেছে, কিছু সাহাবি খাঁচায় পাখি রেখে লালন-পালন করেছেন। হিশাম ইবনে উরওয়া (রা.) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.) মক্কায় ছিলেন। তখন সাহাবিরা খাঁচায় পাখি রাখতেন।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩৮৩)
আসুন, আমরা পশু-পাখির অধিকার আদায়ে যত্নবান হই। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে এগুলোর জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করি।