ইউক্রেনীয় সেনাদের হত্যার ড্রোন ভিডিও প্রকাশ
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
তিন সেনাকে দেখা যায় ঝোপ থেকে বের হয়ে আসতে। এরপর হাঁটু গেড়ে মাথায় হাত রেখে মাটিতে বসেও পড়েন তারা। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরেই তিন সেনা মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে যান। তখনই মৃত্যু হয় তাদের।
পুরো ঘটনাটি ড্রোন ফুটেজে ধরা পড়ে। সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়েছে।
ভিডিওটি পূর্ব ইউক্রেনের পোকরোভস্ক শহরের কাছে আগস্টের শেষের দিকে লড়াইয়ের সময় চিত্রায়িত। তিনজন ইউক্রেনীয় সেনা আত্মসমর্পণ করলেও তাদের গুলি করে হত্যা করে রুশ সেনারা।
এক ইউক্রেনীয় সেনা বলেন, ‘এ ধরনের হত্যার ঘটনা এই বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’ ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সূত্রগুলো নভেম্বর থেকে সিএনএনকে এ ধরনের ১৫ ঘটনার একটি তালিকা দিয়েছে। ঘটনার ড্রোন ভিডিও বা অডিওসহ। তারা আরো বলেছে, ‘আত্মসমর্পণকারী ইউক্রেনীয় সেনাদের বন্দি করার পরিবর্তে রুশ বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে তাদের।
ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেল অ্যান্ড্রি কস্তিন গত বুধবার সিএনএনকে বলেন, ‘যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তার অফিস অন্তত ২৮টি এমন ঘটনা তদন্ত করছে ।’ এদিকে ইউক্রেনীয় প্রসিকিউটররা শুক্রবার জানিয়েছে, ৭৩ ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিকে হত্যার ঘটনা তদন্ত করছেন তারা, রুশ সামরিক বাহিনী এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।
ইউক্রেনের প্রসিকিউটররা সিএনএনকে বলেছেন, কথিত হত্যাকাণ্ডগুলো যুদ্ধাপরাধ এবং ক্রেমলিন নীতির অংশ। ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেল অ্যান্ড্রি কাস্তিন সিএনএনকে আরো বলেছেন, ‘যদি যুদ্ধবন্দিরা আত্মসমর্পণ করে এবং তাদের হাতে অস্ত্র না থাকে, তাহলে তাদের সংক্ষিপ্ত সময়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা একটি যুদ্ধাপরাধ।’
কস্তিন যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
এ ধরনের নীতি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে ধরা যেতে পারে। এই নীতি ক্রেমলিন মানে এবং বাস্তবায়ন করে কিছু নির্দিষ্ট কমান্ডারদের আদেশে।’ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো এ অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সিএনএনের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
এ ধরনের রুশ কৌশল বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউক্রেনীয় কমান্ডারদের মধ্যে দ্বিধা তৈরি করেছে। ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের মনোবল নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ড্রোন ফুটেজ সরবরাহকারী ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা বলেছেন, তাদের ইউনিট একাধিক এমন ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিল, যেগুলোর প্রচার বা তদন্ত করা হয়নি। তবে এগুলোর মধ্যে কিছু সাম্প্রতিক ঘটনা প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। যেমন তিন ইউক্রেনীয় সেনার আত্মসমর্পণের পরও রুশ বাহিনীর গুলি করে মেরে ফেলার ড্রোন ভিডিও। দোনেৎস্ক অঞ্চলের প্রসিকিউটররা বলেছেন, তারা যুদ্ধের আইন ও রীতিনীতি লঙ্ঘনের তদন্ত শুরু করেছেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে।
এদিকে ইউক্রেনীয় ড্রোন ভিডিওতে আরো একটি ঘটনায় দেখা গেছে, যেখানে দেখানো হয়েছে কিভাবে এই বছরের মে মাসে রাশিয়ান সেনারা তিনজন ইউক্রেনীয় সেনাকে গুলি করে হত্যা করেন।
সিএনএন-কে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দাদের দেওয়া অডিওসহ ভিডিওতে শোনা যায়, তুর্ক নামে পরিচিত একজন রাশিয়ান কমান্ডার বন্দিদের হত্যা করার জন্য অধীনস্থ সেনা সদস্য মালয়কে আদেশ করছেন। ভিডিওতে তুর্ককে বলতে শোনা যায়, ‘তাদের শুয়ে পড়তে বলো, জিরো করো, জিরো করো ।’ তখন মালয়কে উত্তর দিতে শোনা যায়, ‘বুঝেছি, কপি।’ ওপাশ থেকে তুর্ক আবার বলে ওঠেন, ‘তাদের জিরো করে আবার রিপোর্ট করুন।’ এখানে ‘জিরো’ বলতে শেষ করে বা মেরে ফেলার কথা বলা হচ্ছে। ড্রোন ভিডিওটিতে দেখা যায়, তিনজন সেনা ইউক্রেনীয় পরিখা থেকে বেরিয়ে বসে পড়লে রাশিয়ানরা গুলি চালায়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি মরিস টিডবল-বিঞ্জ ইউক্রেনে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য কিয়েভের আমন্ত্রণে দেশটি সফর করেছেন। জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল ইতিমধ্যে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘটিত এসব হত্যাকাণ্ড যুদ্ধাপরাধ হিসেবে নিশ্চিত করেছে।
মস্কোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে আত্মসমর্পণ করা ইউক্রেনীয় সেনাদের হত্যা নিয়ে নতুন করে গণহত্যার অভিযোগ আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউক্রেন, যা আন্তর্জাতিক মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
জাতিসংঘের একটি তদন্তকারী সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় সেনাদের হত্যার ঘটনা যুদ্ধাপরাধ এবং পাশাপাশি মানবতাবিরোধী অপরাধ হতে পারে। সূত্র : সিএনএন