বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রশাসনের কার্যক্রমে ফের গতি এনেছেন কাজী শামীম
বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর দেশের অন্যান্য উপজেলায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে ঝিমগতি পরিলক্ষিত হলেও এর রেশ পড়েনি বিয়ানীবাজারে। মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। বলা যায়, ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই প্রশাসনের কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাজী শামীম।
সূত্র জানায়, ৭ আগস্ট থেকেই বিয়ানীবাজারের বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনীতিক দল, বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠন, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ সচেতন মহলের নেতৃবৃন্দের সাথে সিরিজ বৈঠক শুরু করেন ইউএনও। মাঠ প্রশাসন গতিশীল করতে এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের কর্মকান্ড-জবাবদিহিতা নির্ভিগ্ন করতে অভয় দিতে থাকেন তিনি।
৫ আগস্ট বিজয় মিছিলের পর উশৃংখল জনতার হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে দেখেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করে কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখার তাগিদ দেন কাজী শামীম। ভাঙচুরের ক্ষত মুছে যাওয়ার আগেই প্রশাসনকে জনবান্ধব করার তার এই চেষ্ঠা সবার নজরে এসেছে। বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান জানান, ইউএনও মহোদয়ের দক্ষতায় বিয়ানীবাজারের মানুষ দ্রুত প্রশাসনিক সেবা পেতে শুরু করেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের অনেক উত্তাপ-উত্তেজনা থাকলেও এই উপজেলার মানুষ তা বুঝতে পারেননি।
সূত্র জানায়, উপজেলার ১৭টি বিভাগ প্রশাসনিকভাবে তদারকি করেন ইউএনও। শিক্ষা, কৃষি, মৎস্য, সমাজসেবা, প্রকল্প বাস্তবায়ন, প্রকৌশল, সমাজসেবা, যুব উন্নয়ন, সমবায়, পরিসংখ্যান, বন বিভাগসহ জনমানুষের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিভাগই ইউএনওর দপ্তরের আওতায়। বর্তমান অর্ন্তর্বতী সরকার দায়িত্ব নেয়ার ইউএনও কাজের বিস্তৃতি আরো বাড়ানো হয়েছে। অথচ সকল দপ্তর তদারকি এবং বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে কাজী শামীম বেশ দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষক মো. জহির উদ্দিন জানান, প্রশাসনিক কার্যক্রম সচল হওয়ায় স্থানীয় মানুষ ইউএনও’র প্রশংসা করছেন। একটি বড় ধরনের ঝাপটা শেষে দ্রুত সেবা কার্যক্রম শুরু করায় বিয়ানীবাজারের নাগরিক হিসেবে তিনি আনন্দিত।
জানা যায়, ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক হতাহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ছাত্র-জনতা ও পুলিশবাহিনীর মধ্যে সন্দেহ ও আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়। থানায় হামলা, গুলি বর্ষণ ও হতাহতের ঘটনায় মানুষ প্রথম দিকে কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলেন। কিন্তু মাসিক আইনশৃংখলা কমিটির সভায় ইউএনও কাজী শামীম এবং অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অকিল উদ্দিন আহমদ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হবেনা মর্মে যে স্পষ্ট উচ্চারণ করেছেন, তাতে বিয়ানীবাজারবাসী আশাবাদী হয়েছেন। এছাড়া জন্ম নিবন্ধন সংশোধন, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের ক্ষেত্রেও সাধারণ মানুষ তার সাথে ঘনিষ্টভাবে মিশে সেবা আদায় করতে পারছে। তার গতিশীল প্রশাসনিক নেতৃত্বে উপজেলার কোথাও কোন শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানোর খবর পাওয়া যায়নি। যদিও বিয়ানীবাজারের বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় একাধিক শিক্ষককে নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
বিয়ানীবাজারের উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কাজী শামীম গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পূর্বে যোগ দেন। একাধিকবারের বন্যা মোকাবেলা ও উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা করতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন তিনি। একাধিক বাল্য বিয়ে পন্ড, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে জন্ম নেয়া শিশুর প্রতি বিশেষ নজর দিয়ে মানবিক ইউএনও হিসেবে তিনি দৃষ্টি কেঁড়েছেন সবার।
বিয়ানীবাজার উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাসান শাহরিয়ার বলেন, আমাদের উপজেলা প্রশাসন রাইট ট্রাকেই আছে। ইউএনওসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার কারণে নানা সীমাবদ্ধতা স্বত্ত্বেও মানুষ সেবা পাচ্ছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা নেওয়ার পর গত দেড় দশক ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মৃত্যুদিন ১৫ আগস্ট পালন উপলক্ষে বিয়ানীবাজারে মৃদু উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। কিন্তু সেটাও কেটে যায় ইউএনও কাজী শামীমের যোগ্য নেতৃত্বে।
কাজী শামীম বলেন, বর্তমান সরকার একটি দূরহ পরিস্থিতি ও জটিল অবস্থার মধ্যে দায়িত্ব নিয়েছে। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা হিসেবে সরকারকে সহযোগীতা এবং স্থানীয় মানুষকে সেবা দেয়াই আমার কাজ। আমি সে লক্ষে দায়িত্ব পালন করছি।