কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ ও চিকিৎসা
ডা. মো. নওশাদ আলম
কিডনি বা বৃক্ক মেরুদণ্ডি প্রাণিদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনির প্রধান কাজ রক্ত ছেঁকে বর্জ্য পদার্থ (যেমন ইউরিয়া) পৃথকীকরণ ও মূত্র উৎপাদন। মানবদেহের সমুদয় রক্ত দিনে প্রায় ৪০ বার বৃক্কের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়াও দেহে পানি ও ইলেকট্রোলাইট, যেমনÑ সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদির ভারসাম্য বজায় রাখে। এটিতে পাথর হওয়া কিডনির একটি অন্যতম সাধারণ রোগ। শতকরা ১০ ভাগ মানুষের কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ : কিডনিতে পাথর হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলোÑ বয়স ২০-৫০ বছর। নারী-পুরুষের মধ্যে পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা নারীর তুলনায় বেশি। জেনেটিক বা বংশগত কারণে হওয়ার আশঙ্কা ২৫ শতাংশ। পরিবেশগত কারণেও আক্রান্ত হতে পারে। গরম পরিবেশ, অতিরিক্ত ওজন, ব্যায়াম না করা, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা এর অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত পরিমাণে আমিষ জাতীয় খাদ্য ও লবণ গ্রহণ ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে। ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করলেও কিডনিতে পাথর হতে পারে। অন্যদিকে কায়িক পরিশ্রম কিডনির জন্য ভালো ফল বয়ে আনে। এ ছাড়া শরীরের কিছু রোগ, যেমনÑ হাইপার প্যারাথাইরয়েডিজম, রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়া ইত্যাদি কারণে পাথর হতে পারে। ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়লে তাতে পাথর ও গাউট হয়। ঘন ঘন প্রস্রাবের ইনফেকশনও কিডনি পাথরের একটি কারণ।
কিডনিতে পাথর রোগীর লক্ষণ : কোমরের পাশে ব্যথা। কোমর থেকে তলপেট হয়ে ব্যথা অনেক সমর অন্ডকোষ বা পায়ের দিকে যেতে পারে। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত গেলে, বারবার প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে, বমি, জ্বর, মাথাব্যথা, খাবারে অরুচি ইত্যাদি হলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। কিডনি বিকল হলে তা থেকেও পাথর হতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা : কিডনিসহ তলপেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হয়। কোমরের এক্স-রে, আইভিইউ করার প্রয়োজন হয়। ঈঞ ঝপধহ ড়ভ কটই, ঈঞ ঁৎড়মৎধসসব, ঝ.পৎবধঃরহরহব, গজ টৎড়মৎধসসব পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
চিকিৎসা : কিডনি পাথরের চিকিৎসাকে তিনভাগে ভাগ করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। এগুলো হলো- ব্যথা কমানো, ইনফেকশন কন্ট্রোল। কিডনি ও কিডনি-নালির পাথর অপসারণ এবং আবার যাতে পাথর না হয়, সেজন্য রোগীকে কিছু উপদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। উপদেশগুলো হলোÑ পরিমিত পানি পান করা, দেহের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, অতিরিক্ত লবণ ত্যাগ করা এবং এ রোগের বিশেষ কোনো কারণ জানতে পারলে তার সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ। বর্তমানে দেশে কিডনি, কিডনি-নালি ও মূত্রনালির পাথর অপসারণের জন্য অত্যাধুনিক পদ্ধতি চালু হয়েছে। বিশেষ করে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে লেজারের সাহায্যে, পিঠের দিকে একটি মাত্র ছিদ্র করে (চঈঘখ) কিডনি থেকে পাথর বের করা সম্ভব, যা সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাই সঠিকভাবে রোগ নিরূপণের মাধ্যমে যথাসময়ে চিকিৎসা নিয়ে কিডনি পাথর অপসারণ করে কিডনি সুস্থ রাখুন। প্রয়োজনে ইউরোলজি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ইউরোলজি বিভাগ
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস এন্ড ইউরোলজি, শের-ই-বাংলা নগর, ঢাকা