দেহ এবং অন্তরের পর্দার গুরুত্ব
উম্মে আহমাদ ফারজানা
অনেকের ধারণা, শুধু বোরকা পরে বাইরে গেলেই পর্দা রক্ষা হয়ে যায় এবং বাড়ির অভ্যন্তরে এর কোনো প্রয়োজন নেই। অথচ সেটা প্রকৃত পর্দা নয়, বরং প্রকৃত পর্দা হলো, দেহ ও মনকে কুদৃষ্টি ও কুনজর থেকে হেফাজত করা। আর এ ধরনের পর্দা ঘরের মধ্যে ও ঘরের বাইরে সমানভাবে প্রযোজ্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে।
আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে; তবে যেটুকু স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় সেটুকু ছাড়া। আর তারা যেন তাদের মাথার কাপড় স্বীয় বক্ষদেশের ওপর রাখে। এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজ পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগিনীপুত্র, নিজেদের বিশ্বস্ত নারী, অধিকারভুক্ত দাসী, কামনামুক্ত পুরুষ এবং শিশু, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অবহিত নয়, তারা ছাড়া অন্য কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন এমনভাবে চলাফেরা না করে, যাতে তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়।
আর হে মুমিনরা! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে যাও, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩১)
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বর্তমানে নারীরা দেবর-ভাশুর, চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাই, বেয়াই, বোনাই—সবার সঙ্গে খোশগল্প, হাসি-তামাশা করে থাকে। এগুলোকে তারা কিছু মনে করে না। অথচ এসব পর্দারপরিপন্থী।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’
(সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৩)
মহান আল্লাহ এ আয়াতে নারীদের বাড়ির মধ্যে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে যথাযথ পর্দা পালন করে যেতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রী, কন্যা এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলে দাও, তারা যেন নিজেদের চাদর দিয়ে আবৃত করে।’
(সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৯)
এ নির্দেশ রাসুল (সা.)-এর মাধ্যমে সব মুমিন নারীদের দেওয়া হয়েছে।
পর্দার পোশাক
পোশাক-পরিচ্ছদ মানুষের লজ্জাস্থান আবৃত করার জন্য আল্লাহ দান করেছেন। তিনি বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমরা তোমাদের ওপর পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি বেশভূষার উপকরণ। তবে আল্লাহভীতির পোশাকই সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৬)
আসলে শয়তান মানুষের দেহ থেকে তার আবরণ খুলে নিয়ে মানুষকে নগ্ন-অর্ধনগ্ন করতে চায়, যেভাবে সে প্রথম মানব-মানবী আদম ও হাওয়া (আ.)-এর দেহ থেকে পোশাক খুলে নিয়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করে। যেমন সে তোমাদের আদি পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল। সে তাদের থেকে তাদের পোশাক খুলে নিয়েছিল, যাতে সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাতে পারে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৭)
শয়তানের ওই নীল নকশা বাস্তবায়নে সে সদা তত্পর। কিন্তু আদম সন্তান সেটা বুঝতে না পেরে এর বিপরীত কাজ করে।
অন্তরের নুর চলে যাওয়া ও অন্তর কলুষিত হওয়ার একটি কারণ হলো দৃষ্টি অবনত না করা। বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করলে শয়তান অন্তরে কুমন্ত্রণা সৃষ্টি করে। ধীরে ধীরে বড় গুনাহের দিকে যায়। এমনকি জিনার প্রতি প্রলুব্ধ করতে থাকে। এ জন্যই নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি হচ্ছে শয়তানের বিষাক্ত তীর থেকে একটি তীর।’
(মুসনাদে আশ-শিহাব ১/১৯৫)
এই তীরে বিদ্ধ হওয়া থেকে বাঁচতে হলে দৃষ্টি হেফাজত করতে হবে, অন্যথায় অগণিত নেক আমল করা সত্ত্বেও আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা দৃষ্টিকে নত করো, নিয়ন্ত্রণ করো এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করো।’
(তাবরানি, হাদিস : ৮০১৮)