শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধভাবে মন্দির নির্মাণের প্রচেষ্টা, উদ্দেশ্য কী
দৈনিকসিলেটডটকম
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অনেকটা তড়িগড়ি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করেন। পরবর্তিতে বিশ্ববিদ্যলয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে
তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামের পিছনে ইট, রড ও সিমেন্ট ইত্যাদি সরঞ্জামাদি দিয়ে মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করে ছিলেন তারা।
অনুমতি ব্যতিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের আইনগত বৈধতা নেই এটি জেনেও তারা কেন এমন কান্ড করলেন এ নিয়ে রহস্য তৈরী হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা এ কাজটি ইচ্ছে করে করেছে, তাদের উদ্দেশ্যে মন্দির নিমার্ণ নয়। তারা জানে বিনা অনুমতিতে করলে প্রশাসন এটি ভেঙ্গে দিবে আর তখনই পরিস্থিতি ঘোলাটে হবে আর্ন্তজাতিক মিডিয়ায় খবর আসবে বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই। তিনি বলেন জুলাই বিপ্লবের পর প্রতিবেশী একটি দেশের মিডিয়াতে এমন মিথ্যে সংবাদ পরিবেশন করতে আমরা দেখেছি।
বিষয়টি নিয়ে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন এ তে ডিনদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় মন্দির স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়ে চারটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্তগুলো হলো- ১. ব্যক্তি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কোন স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের কোন আইনগত বৈধতা নেই ২. স্থাপনা নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাখিলকৃত ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে কোন স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি প্রদান করেনি ৩. যদি কোন পক্ষ স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ উদ্যোগ গ্রহণ করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ৪. কতিপয় শিক্ষার্থী কর্তৃক অবৈধ স্থাপনা তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের কার্যক্রম সম্পর্কে অনুসন্ধানের জন্য শিগগিরই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ড. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রশাসনের অনুমতি ব্যতিরেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোন স্থাপনা তৈরি করা বেআইনি। যারা এ স্থাপনা নির্মাণ করতেছে তাদের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান থাকবে, তারা যেন এ স্থাপনা কাজ বন্ধ রাখে এবং সকল জিনিসপাতি যেন তারা নিজ উদ্যোগে এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্বরত অধ্যাপক ড. সৈয়দ বদিউজ্জামান ফারুক, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মোহাম্মদ আব্দুল কাদির ও প্রধান প্রকৌশলী জয়নাল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। এসময় সিলেট জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন।
মন্দির নির্মাণকারীদের এ ব্যাপারে কোন বক্তব্য সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি সেন্টারে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনার জন্য একটি রুম বরাদ্দ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা সেখানে প্রার্থনা করে আসছে।
এর বাইরে কেউ যদি কোন উপাসনালয় নির্মাণ করতে চায় তবে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে আবেদন করতে হবে। কর্তৃপক্ষ দাবী যৌক্তিক মনে করলে সেটি নির্মাণ করে দেবেন। এ ক্ষেত্রে গায়ের জোরে ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু করার অবকাশ নেই।