সুনামগঞ্জের ১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেকায়দায়
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
আধিপত্য বিস্তার, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠনে দ্বন্দ্ব, শিক্ষক স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে সুনামগঞ্জের ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও এক মাদ্রাসা প্রধান বেকায়দায় রয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রাসগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস শাহিদ। মঙ্গলবার দায়েরকৃত আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন- গত ১৫ সেপ্টেম্বর স্কুলে দাপ্তরিক কাজ করার সময় হঠাৎ স্কুলের পাশের উলুতুলু গ্রামের জাহির উদ্দিন, আব্দুল অদুদ ও শাহ্ আলম দিলোয়ারসহ ১৫—২০ জনের সংঘবদ্ধ দল বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে তাকে বিদ্যালয় থেকে বের হবার জন্য বলেন। অন্যথায় তাকে শারীরিক নির্যাতনের হুমকি দেওয়া হয় বলে আবেদনে উল্লেখ। পরে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। কিন্তু এলাকার কিছু লোকের হুমকি—ধমকিতে তিনি স্কুল ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন।
এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জাহির উদ্দিন বলেন, এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বহুদিন ধরেই ক্ষোভ ছিল। তাঁর (প্রধান শিক্ষকের) নানা অনিয়মের কথা উল্লেখ করে গেল পহেলা সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও উন্নয়ন) ও জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট এলাকাবাসী অভিযোগ করলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এলাকাবাসী মনে করেছে প্রধান শিক্ষক উর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে পদক্ষেপ নিতে দিচ্ছেন না। এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধভাকে তাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে স্কুলে যায়, একপর্যায়ে মানুষ অনেক বেড়ে যায়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা স্ব—সম্মানে প্রধান শিক্ষককে সরিয়ে দিয়েছি। সেনাবাহিনীর অফিসারও গিয়ে এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।
উল্লেখ্য, গেল এক মাসে জেলার ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবং একটি মাদ্রাসায় এভাবে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় হয় প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন, না হয় ছুটি নিয়ে স্কুলে যাচ্ছেন না তারা। কোন কোন প্রধান শিক্ষক চাপের মধ্যে পড়ে স্কুলেও কম যাচ্ছেন। এছাড়া একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির চেষ্টার অভিযোগে জেলে আছেন। এ নিয়েও এলাকায় ভিন্নমত আছে।
বিদ্যালয়গুলো হল- দিরাই উপজেলার হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ভাটিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, শান্তিগঞ্জ উপজেলার গণিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া উচ্চ বিদ্যালয়, পাইলগাঁও ব্রজনাথ উচ্চ বিদ্যালয়, দোয়ারাবাজার উপজেলার লিয়াকতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, ছাতক উপজেলার এলপি উচ্চ বিদ্যালয়, জাহিদপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও আনুযানী উচ্চ বিদ্যালয়, তাহিরপুর উপজেলার এমএ জাহের উচ্চ বিদ্যালয়, মোয়াজ্জেমপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় ও বাগলী উচ্চ বিদ্যালয়, ধর্মপাশা উপজেলার গাছতলা উচ্চ বিদ্যালয় ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বড়ইজুড়ি মাদ্রাসা।
এ প্রসঙ্গে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন- এসব প্রতিষ্ঠানে কোথাও কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, কোথাও বা হিসাবপত্র নিয়ম অনুযায়ী দেখানো হয়নি। কোথাও অনিয়ম আবার কোথাও পরিচালনা কমিটিতে বিগত সময়ে পরাজিত বা বঞ্চিতরা এখন প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এসব স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমাকেও দৌঁড়াতে হচ্ছে স্কুলগুলোতে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও সময় দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি ঘটানোর চেষ্টা, আবার কোথাও কোথাও তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়ে অভিযোগের নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ওই শিক্ষা কর্মকর্তা।