যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের সম্পদের পাহাড়
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। এই অভ্যুত্থানের আগে থেকেই কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা শেখ হাসিনা সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর গোপন সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে কীভাবে সাইফুজ্জামান যুক্তরাজ্যে ও মধ্যপ্রাচ্যে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে গতকাল বুধবার আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ৩৬০টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। যার মূল্য ২৫০ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি অর্থে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সমান। শুধু যুক্তরাজ্যে নয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী নিজের রিয়েল স্টেট ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আমেরিকার নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ায়। দেশের বাইরে সব মিলিয়ে তিনি ৫০০-এরও বেশি বাড়ি কিনেছেন। যেগুলোর মূল্য প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর বিনিয়োগকারীর ছদ্মবেশে আল-জাজিরার অনুসন্ধানী টিম লন্ডনে সাইফুজ্জামানের ১৪ মিলিয়ন ডলারের বাড়িতে যায়। ওই সময় ‘ছদ্মবেশী’ সাংবাদিকদের সাইফুজ্জামান বড়াই করে জানান, তিনি কুমিরের চামড়ার তৈরি জুতার ওপর হাজার হাজার ডলার খরচ করেন এবং লন্ডনের সবচেয়ে দামি দোকান থেকে ইতালিয়ান স্যুট তৈরি করে পরেন। ওই সময় তিনি লন্ডনের নিজের বাড়িও ঘুরিয়ে দেখান। যেটিতে রয়েছে সিনেমা হল, জিম, ব্যক্তিগত এলিভেটর এবং নতুন রোলস রয়েলস গাড়ি রাখার নিরাপদ আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং এরিয়া।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুব ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত ছিলেন সাইফুজ্জামান। আল-জাজিরার ছদ্মবেশী প্রতিবেদককে এমনটিই জানিয়েছেন তিনি। সাইফুজ্জামান বলেছেন, ‘আমার বাবা শেখ হাসিনার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সত্যি বলতে আমিও তার কাছের লোক, শেখ হাসিনা আমার বস, তিনি জানেন যুক্তরাজ্যে আমার ব্যবসা আছে।’
আল-জাজিরা বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তিনি যুক্তরাজ্যে ২৬৫টি বাড়ি কিনেছেন। এরপর ২০২২ সালে তিনি সেখানে আরও ৮৯টি বাড়ি কেনেন। এতে সেখানে তার বাড়ির সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬০টি। যুক্তরাষ্ট্রেও সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সম্পত্তি আছে বলে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে। নিউইয়র্কে পাঁচটি ও নিউজার্সিতে চারটি বিলাসবহুল বাড়ির সন্ধান পায় তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৪ সালের প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৯ সালে যখন তিনি মন্ত্রী হন, তখন থেকে দেশের বাইরে তার সম্পত্তি আরও বাড়তে থাকে। দেশের বাইরে তার যে সম্পত্তি তা তিনি নির্বাচনি হলফনামায় কখনোই উল্লেখ করেননি।’
আল-জাজিরার কাছে সাইফুজ্জামান দাবি করেছেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব আমিরাতে নিজের বৈধ ব্যবসার মাধ্যমে এই সম্পদ কিনেছেন তিনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার তার বিরুদ্ধে এখন অর্থ পাচারের অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ এবং তার পরিবারের মালিকানাধীন ইউসিবিএল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে সাইফুজ্জামানও দেশ ছাড়েন।