বিয়ানীবাজার পৌরসভার সেবা কার্যক্রম স্থবিরতা চরম দূর্ভোগে পৌরবাসী
বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাহী আদেশে সারাদেশের ন্যায় বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র পদ থেকে অপসারণ হন এখানকার নির্বাচিত প্রতিনিধি ফারুকুল হক। প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে সরকারি সিদ্ধান্তে বিয়ানীবাজারে পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পান সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)। দায়িত্বপ্রাপ্তির পর মাত্র দুইদিন এডিসি মোহাম্মদ মোবারক হোসেন পৌর কার্যালয়ে আসেন। প্রথমদিন বিকেলে এসে তিনি পৌরসভার কাউন্সিলার, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে কেবল সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরবর্তীতে আরো একদিন এসে মাসিক সভায় যোগ দেন । পৌরসভার প্রধান ব্যক্তির এমন অনুপস্থিতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে বিয়ানীবাজার পৌরসভার নাগরিক সেবা কার্যক্রম। চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন পৌরবাসী।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৮.১৭ বর্গকি.মিঃ. আয়তনের বিয়ানীবাজার পৌরসভায় লোকসংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। সিলেট শহর থেকে ৫১ কিঃ মিঃ পূর্ব দিকে বিয়ানীবাজার পৌরসভার অবস্থান। ২০০১ সালের ৩০শে এপ্রিল বিয়ানীবাজার পৌরসভা গঠিত হয়। ২০১৭ সালের ৩১শে জুলাই এটি প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়। এ পৌরসভায় মো. তফজ্জুল হোসেন দীর্ঘকাল প্রশাসক, মো. আব্দুস শুকুর পূর্ণ মেয়াদে এবং ফারুকুল হক মেয়াদের অর্ধেকের কম সময় মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ফারুকুল হক অপসারিত হন।
পৌরবাসীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, নতুন প্রশাসক দায়িত্ব নেয়ার কাংখিত সেবা পাচ্ছেন না তারা। সেবা প্রত্যাশীরা পৌরসভায় এসে ব্যবসায়িক অনুমতিপত্র (ট্রেড লাইসেন্স), জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক সনদপত্র, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট নিতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। সূত্র জানায়, প্রয়োজনীয় সনদ পেতে হলে কখনো সপ্তাহের বেশী সময় অপেক্ষা করতে হয়। এই সময়ে প্রয়োজনীয় অনেক কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবা প্রত্যাশীরা। কোন কোন ক্ষেত্রে তুচ্ছ কারণে জরুরী কাগজপত্র ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সূত্রের দাবী, সব তথ্য পূরণ করে স্বাক্ষরের জন্য সিলেটে প্রেরণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রশাসক মোহাম্মদ মোবারক হোসেন। কিন্তু জেলা প্রশাসনের জরুরী কাজে ব্যস্ত থাকায় সেখানে গিয়েও দেখা মিলছেনা তার।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র ছয়ফুল আলম ঝুনু জানান, একমাত্র মাসিক সভায় পৌর প্রশাসকের উপস্থিতিতে সর্বশেষ মেয়রের সময়ে বর্ধিত কর কমানো হয়েছে। গত সভায় উন্নয়ন কাজ নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত না হলেও আগামী সভায় প্রতিটি ওয়ার্ডের একটি করে রাস্থা সংস্কারের প্রস্তাব উত্তাপিত হতে পারে।
সরজমিন দেখা যায়, বিয়ানীবাজার পৌরশহরে ময়লা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমও ভেঙ্গে পড়েছে। শহরের ড্রেনগুলো পরিস্কার না করায় দূষনে অতিষ্ঠ নাগরিকরা। শহরের বেশ কয়েকটি সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী। পৌরসভার সরবরাহকৃত ময়লার ডাষ্টবিন সড়কের উপর যততত্র ফেলে রাখায় দুর্গন্ধ নিয়ে সড়কে হাঁটতে হচ্ছে নাগরিকদের। ফুটপাত দখল করে রেখেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কবে তাদের উচ্ছেদ করা হবে, তা কেউ জানাতে পারেনি।
বিয়ানীবাজার পৌর শহরের প্রধান সমস্যা কী?’-এমন প্রশ্ন গোটা বিশেক পথচলতি মানুষকে জিজ্ঞেস করলে প্রায় সবাই একই উত্তর দেন। তাদের উত্তরের সারসংক্ষেপ করলে শহরের নাগরিক দুর্ভোগের তালিকাটা এ রকমই দাঁড়ায়: ভাঙাচোরা ও অপ্রশস্ত রাস্তাঘাট, অপরিচ্ছন্নতা, জলাবদ্ধতা, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ (নর্দমা) ব্যবস্থা আর বেওয়ারিশ কুকুর-মশার উপদ্রব। দিনের পর দিন এসব সমস্যা জিইয়ে আছে জানিয়ে শহরের একাধিক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পৌর এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, ‘নাগরিকত্ব সনদের জন্য এক সপ্তাহ থেকে ঘুরছি, এখনো পাইনি।’
বিয়ানীবাজার পৌরশহরে টমটম, অটোরিকশা, সিএনজির জন্য কোনো নির্ধারিত স্ট্যান্ড নেই। মোড়ে মোড়ে রাস্তার ওপর স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। স্ট্যান্ড না থাকলেও রশিদ দিয়ে আবার এসব যানবাহন থেকে টোল আদায় করতেও দেখা গেছে। রাস্তার ওপর গাড়ি রাখায় সারাক্ষণেই পৌর সদরে যানজট লেগেই থাকে। এসব ভোগান্তির মধ্য দিয়েই চলছে পৌরবাসীর জনজীবন।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ ব্যানার্জি বলেন, ’পৌরসভার সকল নাগরিক সেবা সচল রয়েছে। নাগরিকরা পৌর কার্যালয়ে এসে সেবা পাচ্ছেন।’
বিয়ানীবাজার পৌরসভার বয়স ২৩ বছর। কিন্তু পৌরবাসীর শহুরে জীবনে তেমন কোনো ছোঁয়া লাগেনি। চারদিকে গ্রামীণ আবহ। স্থানীয়দের অভিযোগ, এটি কেবল নামেই পৌরসভা। নিয়মিত কর দিয়েও মিলছে না নাগরিক সেবা।